পথ নিরাপত্তা নিয়ে জোরদার প্রচার চলছে সারা রাজ্যে। বেপরোয়া গাড়ি চালানো এবং মোটরবাইক চালানোর সময় হেলমেট পরার কথা বারবার বলছেন মুখ্যমন্ত্রী থেকে পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকেরা। কিন্তু, সচেতনতার অভাবে দুর্ঘটনা বেড়েই চলছে। তেমনই এক ঘটনায় সরস্বতী পুজোর আনন্দ ফিকে হয়ে গেল দুর্গাপুরের সগড়ভাঙা এবং পুরুলিয়ার বরাবাজারে। ডাম্পারের ধাক্কায় মারা গেলেন সগরভাঙার তিন বন্ধু। তিন জনে একই মোটরবাইকে ছিলেন। অন্য দিকে, দুই মোটরবাইকের মুখোমুখি ধাক্কায় এক স্কুলছাত্র-সহ দু’জন মারা গেলেন বরাবাজারে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত পাঁচ জনের মধ্যে চারজনের মাথাতেই হেলমেট ছিল না।
মঙ্গলবার রাতে প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে বেলিয়াতোড়ের ধবনীমোড়ে, বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়কে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন সুনীল রজক (২১), লক্ষ্মীকান্ত রজক (২২) ও গোবিন্দ বাগদি (২২)। তাঁরা তিন জনেই কোকওভেন থানার সগরভাঙা এলাকার তাঁতিপাড়ার বাসিন্দা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন তাঁতিপাড়ায় মৃত তিন জনের বাড়ি কাছাকাছি। সুনীল কোকওভেন থানায় সিভিক ভলান্টিয়ার হিসাবে কাজ করতেন। লক্ষ্মীকান্ত ছিলেন কাঁকসার বাঁশকোপায় একটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানার ঠিকাকর্মী। গোবিন্দ বেকার ছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তাঁরা এলাকাতেই ছিলেন। পরে তাঁদের আর দেখা যায়নি। গভীর রাতে বেলিয়াতোড় থানা ও কোকওভেন থানা থেকে খবর আসে, পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তিন জন। বুধবার বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করা হয়। এ দিন সকাল থেকেই পাড়ার বাসিন্দারা দেহ ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন। তবে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তাঁদের দেহ দুর্গাপুরে ফেরেনি।
বুধবার বেলা এগারোটা নাগাদ দ্বিতীয় দুর্ঘটনাটি হয় পুরুলিয়ার বরাবাজার বাইপাস মোড়ে। পুলিশ জানায়, দুই মোটরবাইকের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মারা যান বরাবাজার ডাক বিভাগের কর্মী তপন দে (৫৩)। বাড়ি জয়নগরপাড়ায়। অন্য মোটরবাইকটির আরোহী, বরাভূম হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সর্বেশ্বর মাহাতোকে (১৮) গুরুতর জখম অবস্থায় টাটা মেন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করলে চিকিৎসা চলাকালীন তার মৃত্যু হয়। সর্বেশ্বরের বাড়ি স্থানীয় বনকাটি গ্রামে। তার মোটরবাইকের আর এক আরোহী ও সহপাঠী বসন্ত মাহাতোর চিকিৎসা চলছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, স্কুলছাত্রদের মাথায় হেলমেট ছিল না। তপনবাবু হেলমেট পরে থাকলেও দুর্ঘটনার জেরে তা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হেলমেটের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বরাবাজারের ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুদর্শন মাহাতোর বাড়ি বনকাটিতে। তিনি বলেন, ‘‘সরস্বতী পুজোর আনন্দ করতে গিয়েই এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল। হেলমেট মাথায় থাকলে হয়তো সর্বেশ্বরকে আমাদের হারাতে হত না। খুব শীঘ্রই পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ব্লক স্তরে পথ সচেতনতা প্রচার চালাব।’’
এ দিন সগরভাঙায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত সুনীল, লক্ষ্মীকান্ত ও গোবিন্দের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁদের মৃত্যুর খবর আসতেই ভেঙে পড়েন পরিজনেরা। সুনীলের বাড়িতে মা, বাবা ও ভাই রয়েছেন। এক মাত্র রোজগেরে সুনীল মারা যাওয়ায় আতান্তরে পড়েছে পরিবার। লক্ষ্মীকান্তের বাবা কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তিনি শোকে পাথর। গোবিন্দর বাবা আগেই মারা গিয়েছেন। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মা পরিচারিকার কাজ করে সংসার চালান।
কিন্তু, ঠিক কী কারণে মঙ্গলবার রাতে ওই তিন বন্ধু মোটরবাইক নিয়ে বেলিয়াতোড়ের দিকে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে ধন্দে রয়েছেন পরিজনেরাই। বেলিয়াতোড়ের কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, নাকি অন্য কোথাও তা কেউ বলতে পারেননি। বেলিয়াতোড় থানা সূত্রের খবর, একটি ডাম্পারের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে ওই মোটরবাইকের। ঘটনার পরেই ডাম্পার নিয়ে চম্পট দেয় চালক। ঘটনাস্থলেই তিন জনের মৃত্যু হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy