Advertisement
E-Paper

নেই হেলমেট, পড়ে মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৬ ০২:০৮
মোটরবাইক থেকে নির্মীয়মাণ কালভার্টের এই গর্তে পড়েই মৃত্যু হয় অরিজিতের (ইনসেটে)। —নিজস্ব চিত্র।

মোটরবাইক থেকে নির্মীয়মাণ কালভার্টের এই গর্তে পড়েই মৃত্যু হয় অরিজিতের (ইনসেটে)। —নিজস্ব চিত্র।

মাথায় হেলমেট ছিল না। সেই অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নির্মীয়মাণ একটি কালভার্ট থেকে পড়ে মাথায় চোট পেয়ে মৃত্যু হল এক মোটরবাইক আরোহী যুবকের।

বৃহস্পতিবার রাতে বোলপুর–রাজগ্রাম সড়কে, মুরারই থানার চাতরা ও বঠিয়া গ্রামের মাঝের ঘটনা। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম অরিজিৎ দাসগোস্বামী (২৬)। বাড়ি মুরারই থানারই ভাদিশ্বরের গোপালপুর এলাকায়। মাথায় প্রয়োজনীয় হেলমেট না থাকলেও তাঁর এই অকাল মৃত্যুর নেপথ্যে কালভার্ট নির্মাণে ঠিকাদার সংস্থার ঢিলেমিকেই দায়ী করেছেন অরিজিতের পরিজন। তাঁদের দাবি, রাতের অন্ধকারে নির্মীয়মাণ কালভার্টে ধাক্কা খেয়েই অরিজিত মোটরবাইক থেকে পড়ে গিয়েছে। ঘটনার পরেই এলাকায় ক্ষোভ দেখা দেয়। রাতেই নির্মীয়মাণ সংস্থার কর্মীদের একটি ছাউনিতে ভাঙচুর চালানো হয়ে বলে খবর।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনার দিন স্থানীয় চাতরায় এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়েছিলেন অরিজিৎ। রাত ৮টা নাগাদ নিজের মোটরবাইকে সেখান থেকেই বাড়ি ফিরছিলেন। পথে বঠিয়ার কাছে ওই নির্মীয়মান কালভার্টের কাছে এসে অন্ধকারে কিছু ঠাউর করতে পারেনি ওই যুবক। গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে কালভার্টের একপাশ দিয়ে তৈরি হওয়া অস্থায়ী বিকল্প রাস্তায় পরিবর্তে সোজা গিয়ে কালভার্টে ধাক্কা মারেন অরিজিৎ। কালভার্টে এখনও পর্যন্ত কোনও ব্যারিকেড তৈরি না হওয়ায় ওই যুবক সোজা নীচের গর্তে পড়ে যান বলে মৃতের কাকা সুধীররঞ্জন দাসগোস্বামীর দাবি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের কাছ থেকে খবর পেয়ে এলাকায় পুলিশ পৌঁছে অরিজিতকে উদ্ধার করে মুরারই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। কিন্তু, চিকিৎসকেরা ওই যুবককে মৃত বলে জানান। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ওই যুবকের মাথায় গুরুতর চোট লেগেছিল। পুলিশের দাবি, মাথায় হেলমেট না থাকার কারণেই ওই চোট।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অরিজিৎ কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করে ইংরেজিতে স্নাতক হয়েছিলেন। তাঁর বাবা দেবরঞ্জন পাইকর মুরারই ২ ব্লকের কর্মী। বোন কলেজে পড়ে। অরিজিৎ বর্তমানে বাড়ি থেকেই দূরশিক্ষায় রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিদ্যার স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ছিলেন। ক্লাস করে একসপ্তাহ আগেই কলকাতা থেকে বাড়ি এসেছিলেন। ফের আগামি সোমবার তাঁর কলকাতায় যাওয়ার কথা ছিল। ঘটনার রাতে তাঁরই স্নাতকোত্তরের এক সহপাঠীর বাড়িতে গিয়েছিলেন অরিজিৎ। এমন এক ছেলের এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোকাহত গোটা এলাকা। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, হেলমেট নিয়ে সচেতনতার অভাব নিয়েও। হেলমেট নিয়ে সম্প্রতি এত কথাবার্তার পরেও অরিজিতের মতো এক জন শিক্ষিত ছেলে কেন এমন ভুল করলেন? পুলিশের বক্তব্য উড়িয়ে সুধীরবাবুর যদিও দাবি, ‘আমার ভাইপোর এমন ভুল করেনি। কারণ ওঁর মাথায় হেলমেট ছিল।’’

পরিবার থেকে উল্টে প্রশ্ন তোলা হয়েছে রাস্তা সংস্কারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার ভূমিকা নিয়েই। তাঁদের অভিযোগ, ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে রাস্তা সংস্কারের কাজ চলছে। রাস্তা সংস্কারের জন্য কালভার্ট নির্মাণের কাজও চলছে। নির্মীয়মান কালভার্টের পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য একটি বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হলেও তার অবস্থা বিপজ্জনক। সুধীরবাবু বলছেন, ‘‘ওই বিকল্প রাস্তাটি কোনও কিছু দিয়ে ঘেরা নেই। প্রায়ই সেখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। অন্ধকারে তো সে সম্ভাবনা আরও বাড়বে।’’ তাই অরিজিতের মৃত্যুর নেপথ্যে ঠিকাদার সংস্থার গাফিলতিকেই দেখছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নির্মাণকারী সংস্থার সঙ্গে মুরারইয়ের শাসকদলের এক বড় নেতার ছেলে যুক্ত। ওই সংস্থাই এলাকার আরও বেশ কিছু রাস্তা নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত। তারা প্রায়ই অসমাপ্ত অবস্থায় রাস্তা রেখে দেওয়ায় এলাকায় বেশ কিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। শুক্রবার ওই নেতা ফোন ধরেননি। তাঁর ছেলেরও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। তবে, নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদার সংস্থা এক কর্মীর দাবি, নির্মীয়মান কালভার্টটিতে ব্যারিকেড রয়েছে। বিকল্প রাস্তাটিও চলাচলের যোগ্য। মোটরবাইকের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাতেই এই দুর্ঘটনা।

accident man
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy