Advertisement
০১ মে ২০২৪

হুঁশিয়ারি সত্যি করে শুরু হল কর্মবিরতি

গত ১৭ অক্টোবর তেলিসায়র গ্রামে এক ব্যক্তিকে মারধর ও বোমা ছোড়ার অভিযোগে শ্রমিক নেতা তথা তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক কোর কমিটির সদস্য প্রভাত মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিচারক তাঁর ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

সুনসান: (বাঁ দিকে) পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতি। (ডান দিকে) কুশদ্বীপ পঞ্চায়েত। ছবি: শুভ্র মিত্র

সুনসান: (বাঁ দিকে) পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতি। (ডান দিকে) কুশদ্বীপ পঞ্চায়েত। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাত্রসায়র ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০৬
Share: Save:

হুশিয়ারি আগেই দিয়েছিলেন। এ বারে দলের শ্রমিক নেতাকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে এক সঙ্গে কর্মবিরতি শুরু করলেন পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতি এবং তার অধীন সমস্ত পঞ্চায়েতের তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা। এই ঘটনায় সপ্তাহের প্রথম দিনেই ভোগান্তিতে পড়লেন বিভিন্ন কাজ নিয়ে আসা সাধারণ মানুষজন। ওই জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, এ ভাবেই চলবে আগামী এক সপ্তাহ।

গত ১৭ অক্টোবর তেলিসায়র গ্রামে এক ব্যক্তিকে মারধর ও বোমা ছোড়ার অভিযোগে শ্রমিক নেতা তথা তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক কোর কমিটির সদস্য প্রভাত মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিচারক তাঁর ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তখনই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, এই ঘটনার প্রতিবাদে তাঁরা সাত দিনের জন্য কর্মবিরতি করবেন। সোমবার সেটাই শুরু হয়।

সোমবার পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সমস্ত কর্মাধ্যক্ষ, তৃণমূলের ২৭ জন সদস্য আর সমিতির অধীনে থাকা ১০টি পঞ্চায়েতের প্রধানরা কর্মবিরতি শুরু করেন। এ দিন পাত্রসায়রের কুশদ্বীপ পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে দেখা গেল, প্রধানের ঘর খোলা। কিন্তু কেউ নেই। পঞ্চায়েত অফিস কার্যত ফাঁকা। কয়েক জন কর্মী চুপচাপ বসে রয়েছেন। প্রধানের ঘরের দরজার সামনে পাণ্ডুয়া পূর্বপাড়া থেকে বিড়ি শ্রমিকের পরিচয় পত্র নিতে এসেছিলেন কেয়া বিবি মিদ্যা। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফিরে যান তিনি। বুড়িপুকুর গ্রাম থেকে ফেলু কিস্কু এসেছিলেন আয়ের শংসাপত্র নিতে। তাঁকেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। একই অবস্থা হয়েছে স্কলারশিপের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজে প্রধানের সই নিতে আসা একাদশ শ্রেণির বিকাশ লোহারের। ওই পঞ্চায়েতের প্রধান মিলন দে-র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুধু বলেন, ‘‘কর্মবিরতিতে আছি।’’ একই ছবি অন্য পঞ্চায়েতগুলিতেও।

পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে গিয়ে দেখা গেল, কর্মাধ্যক্ষদের বসার ঘরে ঝুলছে তালা। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘর বন্ধ। তাঁর দেখা মিলল দলীয় অফিসে। বললেন, ‘‘বিষ্ণুপুর মহকুমাশাসককে চিঠি দিয়ে কর্মবিরতির কথা জানিয়েছি। দলের নেতাকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। অবিলম্বে নিঃশর্ত জামিনে ছাড়তে হবে। না হলে আরও গুরুতর পদক্ষেপ করব।’’ তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক কোর কমিটির সদস্য সুব্রত দত্ত বলেন, ‘‘জেলার গোষ্ঠী দন্দ্বের শিকার আমরা।’’ ব্লক কোর কমিটির নেতাদের অভিযোগের তির জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর দিকে। তাঁরা বলেন, ‘‘উনি বিরোধীদের নিয়ে এলাকার গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে উস্কানি দিচ্ছেন।’’

কিন্তু দলের অন্দরের ডামাডোলে হয়রানি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। এই প্রসঙ্গ তোলা হলে মানুষের ভোগান্তির কথা অস্বীকার করেন দিলীপবাবু। তাঁর বক্তব্য, সরকারি কর্মীরা তো কাজ করছেন! দিলীপবাবু বলেন, ‘‘প্রিয় নেতার জন্য এলাকার মানুষজন এইটুকু অসুবিধা মেনে নেবেন।’’

এই কর্মবিরতির ব্যাপারে বাঁকুড়া জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি মৌখিক ভাবে বিষয়টা শুনেছি। বিডিও-কে নির্দেশ দিয়েছি, দ্রুত ওঁদের সঙ্গে কথা বলতে।’’ তাঁর বক্তব্য, জনপ্রতিনিধিদের কোনও সমস্যা থাকলে তা লিখিত ভাবে প্রশাসনকে জানাতে পারেন। তবে এই ভাবে কর্মবিরতি শুরু করলে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। সেটা কখনওই কাম্য নয়।

এই ঘটনায় সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। বিজেপি-র রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, ‘‘এটা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। সাধারণ মানুষের জন্য পরিষেবা সচল করার দাবিতে আমরাও আন্দোলন শুরু করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE