রং-বদল। আদ্রা ও কাশীপুরের মাঝে বেকো নদীর উপরে শতবর্ষ প্রাচীন সেতুর আগের (বাঁ দিক) ও এখনকার (ডান দিক) ছবি। —প্রদীপ মাহাতো।
ছিল লাল-হলুদ। হয়ে গেল নীল-সাদা! একশো বছরের বেশি সময় ধরে লাল-হলুদ রঙের একটি সেতুর রং হঠাৎ কেন বদলে গেল, তা নিয়ে জল্পনা চলছে পুরুলিয়ার কাশীপুরে।
আদ্রা ও কাশীপুরের মাঝে বেকো নদীর উপর শতবর্ষ প্রাচীন সেতুটির সংস্কারের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই উঠছিল। এরই মধ্যে কয়েকমাস আগে সেতুর গার্ডওয়ালের একটি অংশ ট্রেলারের ধাক্কায় ভেঙে যায়। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সেতু সংস্কারের কাজ হাত দেয় পূর্ত দফতর। কিন্তু সংস্কারের পরে লোকজন দেখেন, তাঁরা এতদিন ধরে সেতুটির গায়ে যে রং দেখতে অভ্যস্ত ছিলেন, এখন তা বিলকুল বদলে গিয়েছে। তাঁদের অনেকেই মনে করছেন, সেতুটির সংস্কারের দরকার ছিল। সেই কাজ হয়ে ভালই হয়েছে। তবে ঐতিহ্যের কথা গুরুত্ব দিয়ে সেতুটির পুরনো রং ফেরানো যায় কি না, তা প্রশাসনকে ভেবে দেখতে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
ইতিহাস বলছে, কাশীপুরের পঞ্চকোটরাজ জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেও বেকো নদীর উপরে এই সেতু তৈরি করেছিলেন। ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ মানভূমের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার এইচ কুপল্যান্ডের স্ত্রী মিসেস কুপল্যান্ড এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। সে সময়ের বিখ্যাত বাঙালি স্থপতি নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এই সেতুর নকশা তৈরি করেছিলেন। বিহার-ওড়িশা প্রদেশের তৎকালীন ছোটলাট লর্ড বেইলি জ্যোতিপ্রসাদ সিংহ দেও-র আমন্ত্রণে কাশীপুরে আসার সময় ১৯১৩ সালের ১৫ জানুয়ারি সেতুটির উদ্বোধন করেন। ইতিহাসের সেই প্রস্তরফলক আজও সেতুটির গায়ে রয়েছে।
জেলার ইতিহাস গবেষক দিলীপ গোস্বামীর কথায়, ‘‘এই ধরনের নির্মাণগুলির সঙ্গে ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। তাই পুরনো রং রেখে দিলেই ভাল।’’ একই মত জেলার আর এক ইতিহাস গবেষক সুভাষ রায়েরও। সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক তথা দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস গবেষক গৌতম মুখোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘সংস্কার তো দরকার। কিন্তু রং বদলের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’’ পঞ্চকোট রাজবংশের উত্তরপুরুষ অপূর্ব কিশোরলাল সিংহ দেও আবার দাবি করেছেন, পুরনো স্মারকের রং বদলে দেওয়া মানে ইতিহাসকেই বিকৃত করা।
যদিও তা মানতে নারাজ কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের সৌমেন বেলথরিয়া। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘রং বদলালেই তো আর ইতিহাস বদলে যায় না।’’ তাঁর যুক্তি, সেতুর গায়ে সাদা রং থাকলে বরং অন্ধকারেও দূর থেকে বোঝা যায়। এতে লোকজনের সুবিধা হবে।
পূর্ত দফতরের পুরুলিয়া ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তরুণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এক ঠিকাদারকে সেতুটি সংস্কার করতে বলা হয়েছিল। তবে রং বদল করা হয়েছে বলে শুনিনি। খোঁজ নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy