Advertisement
১৮ মে ২০২৪

স্কুলে গিয়ে ইটের ঘায়ে জখম পুলিশ

একশো দিনের প্রকল্পে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লোক নেওয়াকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সাঁওতালডিহি থানার দেউলি পঞ্চায়েতের মুদিডি গ্রাম। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে জখম হন সাঁওতালাডিহি থানার আইসি প্রশান্ত পাত্র-সহ পাঁচ পুলিশ কর্মী।

সুনীলকান্তি গোস্বামী। নিজস্ব চিত্র

সুনীলকান্তি গোস্বামী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাঁওতালডিহি শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৭ ০১:৫৮
Share: Save:

একশো দিনের প্রকল্পে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লোক নেওয়াকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সাঁওতালডিহি থানার দেউলি পঞ্চায়েতের মুদিডি গ্রাম। বৃহস্পতিবার বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরের আঘাতে জখম হন সাঁওতালাডিহি থানার আইসি প্রশান্ত পাত্র-সহ পাঁচ পুলিশ কর্মী। বিক্ষোভকারীদের সরাতে পুলিশ লাঠি চালায় এবং আট রাউন্ড কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় বলে অভিযোগ। যদিও লাঠি চালানোর অভিযোগ মানতে চায়নি পুলিশ।

গ্রামের ষোলোআনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা না করেই এলাকার প্রাথমিক স্কুলে একশো দিনের কাজে শ্রমিক নিয়েছে পঞ্চায়েত। এই অভিযোগে স্কুলের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন মুদিডি গ্রামের কিছু বাসিন্দা। পুলিশ তালা খুলতে গেলে ধুন্ধুমার বেঁধে যায়। অভিযোগ সেই সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে যথেচ্ছ পাথর ছোড়ে। আহত পুলিশ কর্মীদের চোট অবশ্য খুব বেশি নয়। গ্রামবাসীদের অবশ্য দাবি, বিনা প্ররোচনায় তাঁদের উপরে নির্বিচারে লাঠি চালিয়েছে পুলিশ। লাঠির আঘাতে তাঁদেরও কয়েকজন আহত হয়েছেন।

পরে রঘুনাথপুরের এসডিপিও অভিজিৎ চৌধুরী, পাড়ার বিডিও সমীরণ বারিক, পাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সীমা বাউরি ওই গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বিডিও জানান, আলোচনায় সমস্যা মিটেছে।

একশো দিনের কাজের প্রকল্পে স্কুল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেগুলিতে সাফাই ও গাছ লাগানোর কাজে শ্রমিক নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই পুরুলিয়া জেলার বিভিন্ন পঞ্চায়েত এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মূলত বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। বরাবাজারের পড়শা গ্রামে তুমড়াশোল পঞ্চায়েতে ক’দিন আগে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে হামলার অভিযোগ ওঠে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের বিরুদ্ধে। তাঁদের মধ্যে ছ’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে।

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দেউলি পঞ্চায়েত অন্যান্য স্কুলের মতো মুদিডি গ্রামে দুই মহিলাকে ওই কাজ দিয়েছে। কিন্তু গ্রামবাসীর দাবি, গ্রামের ষোলোআনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে কারা কাজ করবে তা ঠিক করতে হবে। তা না হওয়ায় এ দিন সকালে স্কুল শুরুর আগে দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন গ্রামবাসীদের একাংশ।

খবর পেয়ে সেখানে তালা খুলতে যায় পুলিশ। পুলিশ কর্মীদের দাবি, হঠাৎ লোকজন তাঁদের উপরে ইট-পাথর ছুড়তে শুরু করে। যদিও গ্রামবাসীর দাবি, তাঁরা পুলিশকে তালা খুলতে বারণ করেছিলেন। কিন্তু তারা তালা খুলতে গেলে গ্রামবাসী স্কুলের সামনে শান্তিপূর্ণ ভাবে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। হঠাৎ পুলিশ গ্রামের মহিলাদের উপরে চড়াও হয়ে লাঠি দিয়ে মারধর শুরু করে।

রেশমি ওরাং, সরস্বতী ওরাং-এর দাবি, ‘‘আমরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলাম। পুলিশ হঠাৎ লাঠি চালাতে শুরু করে।’’ গ্রামের ষোলোআনা কমিটির সদস্য দুর্যোধন ওরাং, নিবারণ ওরাং, আন্তিলাল ওরাংদের দাবি, ‘‘গ্রামের স্কুলে কারা একশো দিনের কাজ করবেন সেটা ষোলোআনা কমিটির সাথে আলোচনা করেই স্থির করার জন্য পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছিল। কিন্তু পঞ্চায়েত কারও-র সঙ্গে আলোচনা না করেই দু’জনকে কাজ দিয়েছে।’’ তাঁদের দাবি, পুলিশকে মোটেই আঘাত করা হয়নি।

আহত পুলিশ কর্মীদের মধ্যে বেশি চোট পেয়েছেন কনস্টেবল সুনীলকান্তি বিশ্বাস। পাথরের আঘাতে তাঁর কানের নিচের অংশ ফেটে গিয়েছে। সবাইকে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগ দু’জনকে আটক করা হয়েছে।

এ দিকে স্থানীয় ষোলোআনা বা পঞ্চায়েত সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে স্কুলে কারা কাজ করবে, তা স্থির করা পঞ্চায়েতের উচিত ছিল বলে মত বিডিও সমীরণবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘আসলে একশো দিনের কাজে স্কুলে শ্রমিকদের কাজ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়াতেই সমস্যা হচ্ছে। আমরা গ্রামের বাসিন্দাদের বুঝিয়েছি স্কুলে কেউ স্থায়ী ভাবে কাজ করবেন না। প্রয়োজন হলে অনেকে মিলে পর্যায়ক্রমে ওই কাজ করবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Injured
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE