Advertisement
২৩ মে ২০২৪

শবর বৃদ্ধের শিকারের গল্প শুনলেন দুঁদে পুলিশ

এখনও অনেকে ওঁদের অন্য রকম চোখে দেখেন। ইংরেজ আমলে প্রশাসন ওঁদের ঠেলে দিয়েছিল আরও প্রান্তে। সেই দূরত্বের পুরোটা স্বাধীনতার এত বছর পরেও পারাপার হয়নি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৫৪
Share: Save:

এখনও অনেকে ওঁদের অন্য রকম চোখে দেখেন। ইংরেজ আমলে প্রশাসন ওঁদের ঠেলে দিয়েছিল আরও প্রান্তে। সেই দূরত্বের পুরোটা স্বাধীনতার এত বছর পরেও পারাপার হয়নি। শুক্রবার জেলা পুলিশ এবং পঞ্চায়েত সমিতি সেই পথে এগিয়ে গেল কয়েক কদম। শবর জনজাতির মানুষজনকে নিয়ে পিকনিকে মাতলেন পুলিশ এবং প্রশাসনের কর্তারা। যোগ দিলেন মন্ত্রীও।

শুক্রবার পুঞ্চার নপাড়া হাইস্কুল চত্বরে পিকনিকের আয়োজন হয়েছিল। উদ্যোক্তা পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পুলিশ। ব্যবস্থাপনা করেছিল পুঞ্চা থানা। সকাল সকাল নির্ভয়পুর, দামোদরপুর গ্রাম থেকে হেঁটে চলে এসেছিলেন অনেকে। দূর থেকে আসার জন্য বা বয়স্কদের আনার জন্য ছিল গাড়ির বন্দোবস্ত। নির্ভয়পুর গ্রামের প্রমীলা শবর, নান্তু শবরেরা বলেন, ‘‘অন্য দিন সকাল হলেই আমরা কেউ দিন মজুরি করতে, কেউ বা জঙ্গল থেকে কাঠ কুড়িয়ে আনতে চলে যাই। সংসার চালাতে জিরোনোর জো পাই না।’’ নির্ভয়পুরেরই প্রবীণ পুতু শবরের ফোকলা মুখে এক গাল হাসি। তিনি বলেন, ‘‘এমন অনুষ্ঠান কোনও দিন দেখিনি। কেউ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে না। জোয়ান বয়সে কেমন শিকার করতাম সেই সমস্ত গল্প যেচে শুনেছে পুলিশেরা।’’ মাটিতে বাঘবন্দি খেলার ছক এঁকে টুকরো পাথর নিয়ে সারাদিন খেলায় মশগুল থেকেছেন কেউ। দুপুরের পাতে ছিল খিচুড়ি, বাঁধাকপির তরকারি আর চাটনি।

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘আমরা তো নানা ভাবে আনন্দ করি। শবর জনজাতির মানুষজনের কাছে তেমন সুযোগ বিশেষ আসে না। তাই সবাই মিলে এক সঙ্গে মজা করতে এই উদ্যোগ। এতে পারস্পরিক আস্থা বাড়ে।’’ তিনি জানান, পিকনিকে যোগ দিয়েছিলেন যে সমস্ত শবরেরা, তাঁরা প্রায় সবাই দিন আনা দিন খাওয়া। সহজ পরিবেশে সমস্ত জড়তা কাটিয়ে তাঁরা আড্ডা দিয়েছেন দুঁদে পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে। বিডিও (পুঞ্চা) অজয় সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘সবাই মিলে একটা দিন বেশ ভাল কাটল।’’

এমন একটা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পেয়ে ডাক এড়াতে পারেননি এলাকার বিধায়ক তথা রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডু। এসেছিলেন জেলার সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোও। সৃষ্টিধরবাবু বলেন, ‘‘শত ব্যস্ততা সত্বেও শবরদের সঙ্গে একটা সহজ দিন কাটানোর লোভ সামলাতে পারিনি। এমন ভাবে মেশার সুযোগ তো রোজ মেলে না।’’ পুঞ্চা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কৃষ্ণপদ মাহাতো জানান, শবর জনজাতির প্রায় পাঁচশো জন মানুষ যোগ দিয়েছিলেন পিকনিকে। দিনের শেষে উপহার পাওয়া শীতের পোশাক আর মশারি নিয়ে বাড়ির পথ ধরেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Picnic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE