Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
আজ সোমবার থেকে হিমঘরে আলু কেনার উদ্যোগ

আলু কেনা হল না, হতাশ চাষিরা

প্রহর গোনা শেষ হল না। রবিবার থেকেই বাঁকুড়া জেলার হিমঘরগুলির সামনে সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু কেনার আশ্বাস দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে তা আটকে গিয়ে পিছিয়ে গেল। ফলে এ দিন যাঁরা সরকারি সহায়ক মূল্যে আলি বিক্রির আশা করেছিলেন, তাঁরা হতাশ হয়েছেন।

অভাবের জ্বালায় সারেঙ্গার কৃষ্ণপুরে চাষিরা কম দামেই আলু বিক্রি করছেন।

অভাবের জ্বালায় সারেঙ্গার কৃষ্ণপুরে চাষিরা কম দামেই আলু বিক্রি করছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৫ ০০:৩০
Share: Save:

প্রহর গোনা শেষ হল না। রবিবার থেকেই বাঁকুড়া জেলার হিমঘরগুলির সামনে সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু কেনার আশ্বাস দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু কিছু জটিলতার কারণে তা আটকে গিয়ে পিছিয়ে গেল। ফলে এ দিন যাঁরা সরকারি সহায়ক মূল্যে আলি বিক্রির আশা করেছিলেন, তাঁরা হতাশ হয়েছেন।

জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “জেলার বেশ কিছু হিমঘরে বিদ্যুত্‌ সংযোগ না থাকায় রবিবার থেকে আলু কেনা শুরু করা গেল না।” তিনি জানিয়েছেন, তবে সমস্ত জটিলতা কাটিয়ে আজ সোমবার থেকে প্রশাসন সাড়ে পাঁচ টাকা মূল্যে আলু কেনা শুরু করবে। আলু কেনা হবে প্রতিটি হিমঘরের সামনে।

এ বার আলুর যা ফলন হয়েছে, সে তুলনায় বাজারদর একেবারেই তলানিতে। এই পরিস্থিতিতে আলুর সহায়ক মূল্য নির্ধারণের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও আলু ব্যবসায়ী সমিতির আন্দোলন শুরু করে। এর মধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকজন আলু চাষির আত্মহত্যার খবর আসে। এই পরিস্থিতিতে আলু কেনার জন্য রাজ্য সরকার সরকারি সহায়ক মূল্য ঘোষণা করে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সাড়ে পাঁচটাকা কেজি দরে চাষিদের কাছ থেকে আলু কেনা হবে।

রবিবার থেকেই বাঁকুড়া জেলায় আলু কেনা শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলাশাসক। কিন্তু জেলার প্রায় ১২টি হিমঘরে এই মুর্হূতে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে প্রায় ৫ কোটি টাকার আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলাশাসক বলেন, “বাঁকুড়া জেলার ১২টি হিমঘরে বিদ্যুত্‌ না থাকার জন্য সেখানে আলু রাখা যাবে না। তাহলে এত আলু রাখব কোথায়? বিদ্যুত্‌ দফতরের সঙ্গে কথা বলে কয়েকটি হিমঘর খোলানোর ব্যবস্থা করেছি। সোমবার থেকে আলু কিনে সেই সব হিমঘরে আলু রাখা হবে।”

দর ওঠার অপেক্ষায় ওন্দার তপোবনে আলুর স্তূপে খড় চাপা দেওয়া হচ্ছে।

উল্লেখ্য, সারা জেলা জুড়ে চলতি মরসুমে আলুর ফলন বিগত কয়েকটি বছরকে ছাপিয়ে গিয়েছে। বাঁকুড়ার উপ-কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) দেবদাস মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখনও সব আলু মাঠ থেকে ওঠেনি। তাই সঠিক ভাবে আলুর ফলন কতটা হয়েছে তা এখনই বলা যাবে না। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে যে তথ্য এসেছে তাতে মনে হচ্ছে জেলায় ১২ লক্ষ ৪৪ হাজার টনের কাছাকাছি ফলন হবে। যা বিগত তিন বছরের ফলনকে পিছনে ফেলে দিয়েছে।”

চাষিদের আক্ষপে, এত ভাল ফলনই আখেরে ক্ষতি ডেকে আনল। জেলার বাজারে আলুর চাহিদা একেবারেই পড়ে গিয়েছে। জেলাজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় আলুর দাম বিভিন্ন। কোথাও চার টাকা, কোথাও তিন টাকা, কোথাও আবার দু’টাকাতেও কেজি পিছু আলু ব্যবসায়ীদের বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। এতে চাষের খরচ উঠছে না। চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।

ওন্দা থানার তপোবন গ্রামের চাষি অরূপ শিট, ওন্দার চাষি শুভম নন্দী বলেন, “আলুর দাম নেই বলে মাঠ থেকে আলু তুলেও মাঠেই খড় ঢাকা দিয়ে ফেলে রেখেছি। এই পরিস্থিতিতে আমরা জেলাপ্রশাসনের দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।”

এসইউসি-র কৃষক ও খেত মজুর সংগঠনের জেলা সভাপতি দিলীপ কুণ্ডু বলেন, “এমনিতেই সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিতেই অনেকটা দেরি করে ফেলেছে সরকার। এ বার দ্রুত আলু কেনা শুরু হলে চাষিরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে।” ফরওয়ার্ড ব্লকের অগ্রগামী কিষাণসভার রাজ্য সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথা বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক মানিক মুখোপাধ্যায় জানান, প্রচুর আলু মাঠে পড়ে রয়েছে। শুধু যে দর কমে গিয়েছে তাই নয়, ব্যবসায়ীরাও আলু কিনতে চাইছেন না। ফলে খদ্দেরও নেই। তাঁর দাবি, “প্রশাসনের শুধু আশ্বাসে কাজ হবে না। দ্রুত আলু কেনা শুরু করতে হবে।”

জেলাশাসক জানান, মঙ্গলবার আলু কেনা নিয়ে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও হিমঘর মালিক সংগঠন থাকছে। আলু নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সেদিন নেওয়া হতে পারে।

—নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

potato farmers saddened bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE