Advertisement
১৬ মে ২০২৪

বসন্ত তো ‘ছোঁয়াচে’! বিতর্কে বিএমওএইচ

গ্রামে অন্তত তিন সপ্তাহ ধরে জল বসন্তের প্রকোপ দেখা দিলেও দেখা মেলেনি কোনও স্বাস্থ্যকর্মীর। এক এক করে অন্তত ২০ জন আক্রান্ত হয়েছেন জেনেও নজরে আসেনি মেডিক্যাল টিম! তবে কি রোগের খবর জানা নেই এলাকার স্বাস্থ্যকর্তাদের?

সমীর দত্ত
মানবাজার শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৪২
Share: Save:

গ্রামে অন্তত তিন সপ্তাহ ধরে জল বসন্তের প্রকোপ দেখা দিলেও দেখা মেলেনি কোনও স্বাস্থ্যকর্মীর। এক এক করে অন্তত ২০ জন আক্রান্ত হয়েছেন জেনেও নজরে আসেনি মেডিক্যাল টিম!

তবে কি রোগের খবর জানা নেই এলাকার স্বাস্থ্যকর্তাদের?

মানবাজারের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে প্রশ্নটা করতেই ভুল ভাঙল। কালীপদ সরেন বললেন, ‘‘হ্যাঁ, স্বাস্থ্যকর্মীদের থেকে শুনেছি মানবাজারের বিসরি গ্রামে জল বসন্তের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। কয়েক জন আক্রান্ত হয়েছেন।’’ তা হলে ব্যবস্থা নেননি কেন? আমতা আমতা করে জবাব দিলেন— ‘‘আসলে বুঝতেই পারছেন রোগটা ছোঁয়াচে তো!’’

মুহূর্তে শুরু হয়েছে বিতর্ক। চিকিৎসকদের অনেকেরই প্রশ্ন, ‘‘এক জন স্বাস্থ্য আধিকারিক ছোঁয়াচে রোগের সাফাই দিয়ে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যান কী করে?’’ মেডিক্যাল টিম কেন পাঠানো হয়নি, সে প্রশ্নও তুলছেন তাঁরা। এমন যুক্তি শুনে বিস্মিত পুরুলিয়ার সিএমওএইচ অনিল দত্ত। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিএমওএইচের উচিত ছিল জল বসন্তের কথা শোনামাত্র চিকিৎসকদের দল পাঠানো। তেমনটা হল না কেন জানতে চাইব।’’ তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হলে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (বিএমওএইচ)-এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা।

বর্তমান বিএমওএইচ ‘ছোঁয়াচে রোগ’ বলে দায়িত্ব এড়িয়ে গেলেও অন্য নজির তৈরি করেছেন ওই ব্লকেরই প্রাক্তন বিএমওএইচ। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক তথা মানবাজারেরই বাসিন্দা সুরজিৎ সিং হাঁসদা বৃহস্পতিবার বিসরি গ্রামে গিয়ে রোগীদের খোঁজ নিয়ে ওষুধ দিয়েছেন। সবটাই গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে। এই সময়ে কেমন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হয়, সেই পরামর্শও দেন।

সুরজিৎবাবুর কথায়, ‘‘বিসরি গ্রামে জল বসন্তের প্রকোপের কথা শুনেছিলাম। আক্রান্তদের পরিবারের কয়েক জন গ্রামে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তাই নিজের তাগিদে গিয়েছিলাম।’’ যোগ করছেন, ‘‘চিকিৎসা প্রার্থীদের কোনও ভাবেই ফেরানো যাবে না। ‘মেডিক্যাল এথিক্সে’র গোড়ার কথাই তাই।’’

বিসরি গ্রামটি আয়তনে বেশ বড়। এ দিন গ্রামে গিয়ে দেখা গেল উপরপাড়া মাঝপাড়ায় বেশ কয়েক জন জল বসন্তে আক্রান্ত হয়েছেন। এঁদেরই এক জন বুদ্ধদেব মাহাতো। দিন চারেক আগে হঠাৎই তাঁর সারা শরীরে ব্যাথা শুরু হয়। জ্বর আসে। এক দিন সকালে উঠে দেখতে পান সারা শরীরে ছোট ছোট লালচে দাগ।

লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো এবং তাঁর স্ত্রী বালিকা মাহাতো দু’জনেই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। কোথায় চিকিৎসা করাচ্ছেন? বালিকাদেবীর কথায়, ‘‘গ্রামের এক কবিরাজ ওষুধ দিয়েছেন। মাঝেমধ্যে এসে ঝাড়ফুঁক করে যাচ্ছেন।’’ হাসপাতালে যাননি কেন? ওই পরিবারের সদস্য ঝাঁপান মাহাতোর সরল স্বীকারোক্তি, ‘‘এই শরীরে হাসপাতালে যেতে পারিনি।’’ বেদনি মাহাতো অবশ্য এক দিন হাসপাতাল গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘যাওয়া-আসায় অনেক ধকল যে!’’ হাসপাতালের ওষুধের সঙ্গেই কবিরাজের দেওয়া ওষুধ খাচ্ছেন বেদনি।

এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, গ্রামেই রাস্তার ধারে উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। জানা গেল চিকিৎসকও নিয়মিত আসেন। তারপরেও সেখানে গিয়ে চিকিৎসকদের দেখাতে অনীহা দেখে অনেকেই এলাকাবাসীর সচেতনতাকে দায়ী করছেন। প্রাক্তন বিএমওএইচ-ও মেনে নিয়েছেন সে কথা। একই সঙ্গে সুরজিৎবাবু সতর্ক করে দিচ্ছেন, ‘‘এটা আর পাঁচটা সাধারণ রোগের মতো। চিকিৎসা করালে আর কিছু স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সেরে যায়। অবহেলা করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pox Contagious BMOH
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE