Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পুজোর মুখে কর্মহীন হাজার শ্রমিক

পুজোর মুখে কাজ বন্ধ হয়ে গেল দুই জেলার দু’টি বেসরকারি কারখানায়। এর ফলে সঙ্কটে পড়েছেন শ্রমিকেরা। বুধবার থেকে দু’টি কারখানাতেই কাজ বন্ধ রয়েছে। একটি কারখানা পুরুলিয়ার পাড়া থানার আনাড়া এলাকার। অন্যটি বাঁকুড়ার বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়া শিল্পাঞ্চলের।

‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের’ নোটিসে নজর। আনাড়ার কারখানায়।—নিজস্ব চিত্র

‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্কের’ নোটিসে নজর। আনাড়ার কারখানায়।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বড়জোড়া ও আনাড়া শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩০
Share: Save:

পুজোর মুখে কাজ বন্ধ হয়ে গেল দুই জেলার দু’টি বেসরকারি কারখানায়। এর ফলে সঙ্কটে পড়েছেন শ্রমিকেরা। বুধবার থেকে দু’টি কারখানাতেই কাজ বন্ধ রয়েছে। একটি কারখানা পুরুলিয়ার পাড়া থানার আনাড়া এলাকার। অন্যটি বাঁকুড়ার বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়া শিল্পাঞ্চলের।

বুধবার সকালে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে বিরোধের জেরে বড়জোড়ার ঘুটগোড়িয়া শিল্পাঞ্চলের একটি ফেরোঅ্যালয় কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দেয় মালিক পক্ষ। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, সেখানে প্রায় সাড়ে সাতশো স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন। সম্প্রতি কর্মীদের পুজোর বোনাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিশ্রুতির তুলনায় কম টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন শ্রমিকেরা। কর্তৃপক্ষের তরফে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। বিষয়টি নিয়ে বুধবার সকাল থেকে কয়েকশো শ্রমিক কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। মালিকপক্ষের লোকজনের সঙ্গে তাঁদের একপ্রস্ত বচসাও হয়। ফটকে তালা ঝুলিয়ে মালিক পক্ষের লোকজন বেরিয়ে যায়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়।

ওই কারখানার শ্রমিক সুদন ঘোষ বলেন, “গত বছর পুজোর আগে সমস্ত স্থায়ী শ্রমিককে ১৪ শতাংশ বোনাস দেওয়া হয়েছিল। এ বারও সেই পরিমান টাকাই দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দেওয়া হয়েছে মোটে আট শতাংশ।” শ্রমিকদের একাংশের অভিযোগ, মালিকপক্ষ তাঁদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই তালা ঝুলিয়েছে। ওই কারখানার জেনারেল ম্যানেজার এম শ্রীনিবাস বলেন, ‘‘কারখানা লোকসানে চলছে। বেশ কিছু ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতেও আমরা শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন দিয়ে যাচ্ছি। তবে পুজোয় ১৪ শতাংশ বোনাস দেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই।’’ তিনি জানান, শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার পরে কারখানা খোলার বিষয়ে ভাবা হবে।

এ দিন সকালেই পুরুলিয়ার একটি বেসরকারি কারাখানায় ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝোলানো হয়। ঘটনায় সঙ্কটে পড়েছে ওই কারখানার ৩০০ শ্রমিকের ভবিষ্যত। আনাড়ার ওই কারখানাটি স্লিপার তৈরি করে রেলকে সরবরাহ করে। কারখানায় দু’টি শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে বড়টি তৃণমূল প্রভাবিত। অন্যটি এসইউসি প্রভাবিত। কারখানা সূত্রের খবর, শ্রমিকদের মজুরি এবং বোনাস সংক্রান্ত দাবিদাওয়া নিয়ে কয়েক মাস ধরেই সংগঠনগুলির সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বিরোধ চলছিল। দু’টি সংগঠনেরই দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার দক্ষ শ্রমিকের মজুরি হিসাবে যে টাকা নির্ধারণ করেছে, সেই অনুযায়ী শ্রমিকদের মজুরি দিতে হবে। এ নিয়ে আগে বেশ কয়েকবার দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনা হলেও সমাধান সূত্র বেরোয়নি। সম্প্রতি পুজোর বোনাস সংক্রান্ত দাবিদাওয়াকে কেন্দ্র করে বিষয়টি আরও জটিল হয়। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, ২০ শতাংশ হারে বোনাস দিতে হবে। কর্তৃপক্ষ জানায়, ১৭ শতাংশের বেশি দেওয়া সম্ভব নয়।

‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’-এর নোটিসের কারণ হিসাবে অবশ্য কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ দিন ধরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার কথা বলেছে। ওই কারখানার জিএম এস আর কুলকার্নি বলেন, ‘‘কারখানায় উৎপাদন বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু শ্রমিকেরা সহযোগিতা করছেন না। আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে শ্রমিকেরা বাড়তি মজুরি এবং বোনাসের দাবিতে অনড় হয়ে রয়েছেন। কিন্তু সেই আর্থিক বোঝা সংস্থার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। বাধ্য হয়েই সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে।’’

তবে কর্তৃপক্ষের দাবি মানতে নারাজ শ্রমিকেরা। তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের নেতা জাকির হোসেন, শাহজাদা শেখরা বলেন, ‘‘আগে শ্রম দফতরের মধ্যস্থতায় বৈঠক হয়েছিল। সেখানে দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, কারখানার দক্ষ শ্রমিকেরা কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত হারে মজুরি পাবেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেই দাবি মানতে চাইছে না। তার পরেও শ্রমিকেরা কাজের ক্ষেত্রে কোনও অসহোগিতা করেননি।” শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের পাল্টা দাবি, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুলিশ এবং প্রশাসনের উপস্থিতিতে বৈঠক করে আঠারো শতাংশ বোনাসে রফা হয়েছিল। কিন্তু সেই অবস্থান থেকেও সরে এসে হঠাৎ কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের দাবি, অনেক শ্রমিকের মজুরি এখনও বকেয়া রয়েছে। এই ঘটনায় পুজোর ক’দিন আগে খুবই সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। এ দিন অবিলম্বে কারখানা খোলার দাবি তুলেছে সংগঠনগুলি।

রঘুনাথপুরের সহকারী শ্রম মহাধ্যক্ষ সবুজকুমার ঢালি বলেন, ‘‘আনাড়ার কারখানার সমস্যাটি জানি। মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে শনিবার আলোচনায় বসা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

private factories worker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE