Advertisement
১৯ মে ২০২৪
খেলার মাঠে

অস্ত্র ‘স্পাইকিং’, রাজ্য দলে প্রিয়

ভলিবলের কোর্টে-সহ খেলোয়াড়দের তুলে দেওয়া বলটিকে প্রতিপক্ষ কোর্টের মাটিতে ছুঁইয়ে পয়েন্ট তোলাই হল স্পাইক। প্রতিদলেই একজন বিশেষ প্লেয়ার থাকেন, যিনি অসম্ভব ক্ষিপ্রতার সঙ্গে শূন্যে লাফিয়ে উঠে জাল ও বিপক্ষের বাধা টপকে সেই কাজটি করে থাকেন।

কোচ অনুপের সঙ্গে প্রিয়তনু (কালো জামা)।নিজস্ব চিত্র

কোচ অনুপের সঙ্গে প্রিয়তনু (কালো জামা)।নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৮
Share: Save:

স্পাইকিং। এই শব্দটি ভলিবলের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জুড়ে।

ভলিবলের কোর্টে-সহ খেলোয়াড়দের তুলে দেওয়া বলটিকে প্রতিপক্ষ কোর্টের মাটিতে ছুঁইয়ে পয়েন্ট তোলাই হল স্পাইক। প্রতিদলেই একজন বিশেষ প্লেয়ার থাকেন, যিনি অসম্ভব ক্ষিপ্রতার সঙ্গে শূন্যে লাফিয়ে উঠে জাল ও বিপক্ষের বাধা টপকে সেই কাজটি করে থাকেন। প্রথমে রাজ্য ভলিবল দলের যুব এবং বর্তমানে সিনিয়র দলের হয়ে গত চার বছর ধরে এই কাজটিই করে চলেছেন বীরভূমের প্রিয়তনু ঘোষাল। এ যাবৎ কালের মধ্যে রাজ্য দলের হয়ে জেলার একমাত্র প্রতিনিধি ছ’ফিট দু’ইঞ্চি উচ্চতার এই তরুণ। যা জেলাকে সম্মানীত করেছে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও অনুপ্রেরণা বলছেন, প্রিয়তনুর প্রথম কোচ অনুপ খাণ্ডাইত এবং জেলা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিদ্যাসাগর সাউ।

সিউড়ি ২ ব্লকের কেন্দুয়া শিবতলার বাসিন্দা প্রিয়তনুর উচ্চতা এবং জাম্প করার সহজাত ক্ষমতাই আজ রাজ্যদলের নির্ভরযোগ্য সদস্য করেছে জানাচ্ছেন রাজ্য দলে-সহ খেলোয়ার শিবা সিংহ। ডিসেম্বরের ২৪ থেকে ৩০ চেন্নাইয়ে সিনিয়র ভলিবল প্রতিযোগিতা খেলে সদ্য বাড়ি ফিরেছেন ওই যুবক। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান হলেও এ বার প্লে অফে বাংলা দল হেরে যায় দিল্লির কাছে। তবে ভলি নয় বর্তমানে বিশ্বভারতীর শরীরশিক্ষা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র প্রিয়তনুর প্রথম পছন্দ ছিল আর পাঁচজনের মতো ক্রিকেট। কিন্তু ২০১০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার পর ওই কিশোরের উচ্চতাই নজর কাড়ে অনুপবাবুর। সিউড়ি রক্ষাকালীতলা ক্লাবের হয়ে বছর দশেক ভলিবল কোচিং করাচ্ছেন অনুপবাবু। ওই ক্লাবের ভলি বল চর্চার কথা জানে গোটা জেলা। কিশোরকে অনুপবাবু বলেন, ‘‘ভাল করে ভলি শিখলে একদিন রাজ্য দলের হয়ে খেলার সুযোগ পেতে পার।’’ এটাই কোথাও তাতিয়ে দিয়েছিল ওই কিশোরকে।

প্রিয়তনুর কথায়, ‘‘যে ভাবেই হোক রাজ্য দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা বড় বিষয়। অতনুবাবুর ভলি খেলতে উৎসাহিত করার জন্য কথাটা বললেও সেটাই সত্যি হল।’’

ক্লাব সূত্রে খবর, বছর তিনেক ভলিচার্চার পরে ক্লাবের সম্পদ হয়ে উঠেছিল প্রিয়তনু। যেখানে যেখানে খলতে গিয়েছি সেখানেই চ্যম্পিয়ন। অস্ত্র প্রিয়তনুর স্পাইকিং। এরপরেই এল সুযোগ। ২০১২-১৩ সালে যুব দলের প্লেয়ার নির্বাচনের জন্য ট্রায়াল হবে খবরটা প্রিয়তনুকে দেন জেলা স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিদ্যাসাগর সাউ। বাংলা ভলি বলদলের ওই খেলোয়ার বলছেন, ‘‘ওখানে গিয়েই মোট ৭৮জনের মধ্যে সেরা ১২জনের মধ্যে স্থান পাই। তারপর থেকে প্রথম যুব দলে ও পরে সিনিয়ার দলে খেলছি।’’

এখন প্রিয়তনুর কোচ শুভঙ্কর চক্রবর্তী। শুভঙ্করবাবু দীর্ঘদিন রাজ্য ভলিবল দলকে কোচিং করিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ে কোচিং করিয়েছেন। প্রিয়তনু সম্পর্কে শুভঙ্কর বলছেন, ‘‘অত্যন্ত সম্ভবনাময় প্লেয়ার। যেটা ওর প্লাস পয়েন্ট সেটা হল উচ্চতার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়তনু এক্সপ্লোসিভ জাম্পার। ভলিবলে যেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূ্র্ণ। ভিনরাজ্যের বা বাইরের লম্বা প্লেয়ারদের সঙ্গে লড়তে জরুরি। গ্রাম থেকে এখানে এসে বহু কষ্ট করে শিখেছে। ফর্ম ধরে রাখতে পারলে অনেকদূর যাবে।’’ এখনও নিয়মিত আড়াই ঘন্টা শরীর চর্চা এবং দিনে তিন ঘন্টা অনুশীলন করছেন জেলার একমাত্র প্রতিনিধি। ছেলে এভাবে খেলা চালিয়ে যাক চাইছেন প্রিয়তনুর বাবা দেবানন্দ ঘোষাল ও মা কৃষ্ণাদেবী। ভলি খেলেই চাকরি পেতে চান প্রিয়তনু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE