Advertisement
E-Paper

বছর পার, সুস্থ হয়নি রণজিৎ

ছেলে ঠিক করে রং চিনতে পারে না। মাঝে মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তার স্কুলে যাওয়াও কার্যত শিকেয় উঠেছে। আর পাঁচটা শিশুর মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না তার ছেলে।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৭ ০০:২৬
বিপাকে: রণজিৎ দে। নিজস্ব চিত্র

বিপাকে: রণজিৎ দে। নিজস্ব চিত্র

ছেলে ঠিক করে রং চিনতে পারে না। মাঝে মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তার স্কুলে যাওয়াও কার্যত শিকেয় উঠেছে।

আর পাঁচটা শিশুর মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে না তার ছেলে। ছেলের এই পরিণতির জন্য কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের গাফিলতিকেই দায়ী করেন পেশায় ট্যাক্সি চালক রামরতন দে। বছরখানেক আগে রামপুরহাটের ওই ঘটনা সামনে আসার পরে তাঁর ছেলের চিকিৎসার ভার নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল স্বাস্থ্য ভবন। কিন্তু, তার পরে বছর ঘুরলেও কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। বেসরকারি হাসপাতালের অন্যায় কাজকর্মের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৎপর হওয়ায় ফের আশায় বুক বেঁধেছেন রামরতনবাবু। শেষমেশ গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে নবান্নে ফ্যাক্স পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। অভিযুক্ত হাসপাতালের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে সরকার অবিলম্বে ছেলের চিকিৎসার ব্যবস্থা না করলে আগামী দিনে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসার হুমকিও তিনি দিয়েছেন।

কী হয়েছিল ছেলের?

রামপুরহাট থানার রামরামপুর গ্রামের বাসিন্দা রামরতনবাবু জানাচ্ছেন, একমাত্র ছেলে রণজিৎ ২০১২ সালের ১৫ জানুয়ারি দুপুরে বাড়ির ছাদ থেকে নীচে পড়ে মাথায় গুরুতর চোট পায়। তখন রণজিতের বয়স ছিল তিন বছর। চিকিৎসার জন্য কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আশিস ভট্টাচার্য অপারেশন করেন। রামরতনবাবুর দাবি, ‘‘ডাক্তার ছেলের মাথার খুলির একটি অংশ খুলে রাখেন। সাত মাস পরে ওই অংশ জোড়া হবে বলে জানান। সেপ্টেম্বরে ছেলেকে ভর্তি করি। অপারেশনের লক্ষাধিক টাকার বিলও মেটাই।’’ রামরতনবাবুর দাবি, টাকা নেওয়া হলেও কিছু দিন পরেই তাঁরা বুঝতে পারেন, ওই খুলির অংশটি আদৌ ছেলের মাথায় জোড়া হয়নি। মাথার অংশটি এখনও ফাঁকাই রয়ে গিয়েছে। রামরতনবাবুর ক্ষোভ, ‘‘এ ব্যাপারে হাসপাতালে গিয়ে প্রশ্ন করলে ওঁরা কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। এমনকী, ছেলের মাথার খুলির ওই অংশটি কোথায় গেল, তার খোঁজও হাসপাতাল দিতে পারেনি।’’

প্রতিকার চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি নির্মল মাজিকে চিঠি লেখেন ওই ট্যাক্সি চালক। অভিযোগ পেয়ে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য দফতর। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ওই শিশুর চিকিৎসা-সংক্রান্ত নথি তলব করে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। মাঝে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রী রণজিতের চিকিৎসার ভার নিয়েছেন। ‘‘ওইটুকুই! তার পর থেকে প্রশাসনের কর্তাদের দোরে দোরে ঘুরছি। কিন্তু, ছেলের চিকিৎসা আর হয়নি,’’— ক্ষোভে ফুঁসছেন চিন্তিত পিতা।

যদিও চিকিৎসক আশিসবাবুর দাবি ছিল, রণজিতের খুলির অংশ জোড়া হয়েছিল। রামরতনবাবুকে সিটি স্ক্যান-সহ সব রিপোর্টও দেখানো হয়েছিল। বারবার বলা হয়েছিল, ছেলের ২০-২১ বছর বয়স হলে খুলির অংশগুলি শক্ত হয়ে যাবে। তত দিন খুলিতে ‘টাইটেনিয়াম মেশ’ নামে একটা জিনিস লাগিয়ে রাখতে হবে। তাঁর দাবি, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে খুলির অংশ লাগানোর পরে তা মস্তিষ্কে মিশে যায়। এ ক্ষেত্রেও তেমন হয়েছে।

স্বাস্থ্য ভবনের ভরসায় থাকা পরিবার এত দিনেও ওই ‘টাইটেনিয়াম মেশ’ রণজিতের মাথায় বসাতে পারেনি। রণজিতের এখন বয়স ৯। চিন্তিত রামরতনবাবু বলছেন, ‘‘ও স্কুলে যেতে চায় না। খেতে চায় না। রং চিনতে পারে না। প্রায়ই অজ্ঞান হয়ে যায়। টাকা খরচ করে যে ওর চিকিৎসা করাবো, সেই সামর্থ্যটুকুও নেই। তাই ফের দিদির দ্বারস্থ হলাম।’’ রণজিতের চিকিৎসায় কেন এত দেরি? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলছেন, ‘‘আমরা তো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে ওই ছেলেটিকে দেখিয়েছিলাম। ছেলেটির কোনও সমস্যা থেকে থাকলে রামরতনবাবু আমার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। ওঁর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেব।’’ হাসপাতালের বিরুদ্ধে তদন্তের কী হল, তা নিয়ে অবশ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা কিছু বলতে চাননি।

Ranjit Dey Sick
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy