Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
TMC

TMC and BJP: যেমন তুষার, তেমনই তন্ময়, বিজেপি বিধায়কের ‘ঘরে ফেরা’ নিয়ে বলছে বিষ্ণুপুর

কিছু দিন ধরেই দলের অধিকাংশ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ছিলেন তন্ময়। যা নিয়ে বিজেপি-র অন্দরেও প্রশ্ন ওঠে।

বাঁ দিকে বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য, ডান দিকে ওই কেন্দ্রেরই বর্তমান বিধায়ক তন্ময় ঘোষ।

বাঁ দিকে বিষ্ণুপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য, ডান দিকে ওই কেন্দ্রেরই বর্তমান বিধায়ক তন্ময় ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২১ ১৮:৩৯
Share: Save:

বিজেপি ছেড়ে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষের তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ‘অবাক’ হচ্ছেন না তাঁর নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রের বাসিন্দারা। তন্ময়ের দলবদলের প্রেক্ষিতে ওই কেন্দ্রের সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্যের উদাহরণই স্মরণে আসছে তাঁদের। তুষার পাঁচ বছরের মেয়াদে দল বদলেছিলেন মোট তিন বার। প্রথমে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে। তার তৃণমূল ছেড়ে গিয়েছিলেন বিজেপি-তে। পরে ফিরেছিলেন জোড়াফুল শিবিরে। সেই একই পথে হেঁটে তন্ময়ও ছুঁয়ে ফেললেন তুষারকে।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জোট প্রার্থী হিসাবে কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিলেন তুষার। পরে অবশ্য তিনি শাসকদল তৃণমূলে যোগ দেন। পরে বিজেপি-র ঝোড়ো হাওয়ায় তুষার চলে যান গেরুয়াশিবিরে। কিন্তু সেখানেও স্থায়ী হননি তিনি। বিধায়ক হিসাবে মেয়াদের একেবারে শেষলগ্নে ফের তৃণমূলে ফেরেন। তুষারের এ হেন রাজনৈতিক গতিপথের সঙ্গে মিলে গিয়েছে তন্ময়ের দলবদলের ইতিবৃত্তও।

বিজেপি-র টিকিটে বিষ্ণুপুরের বিধায়ক হিসাবে নির্বাচিত হন তন্ময়। কিন্তু তিনি যে তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসা তৃণমূলে ফিরতে পারেন, সেই গুঞ্জন উঠতে শুরু করেছিল মল্লভূমে। সেই জল্পনা উস্কে দেয় তন্ময়ের রাজনৈতিক কার্যকলাপও। গত বেশ কিছু দিন ধরেই দলের অধিকাংশ কর্মসূচিতে অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। যা নিয়ে বিজেপি-র অন্দরেও প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। যদিও তন্ময় বারবার সংবাদমাধ্যমকে জানান, তিনি বিজেপি-তেই আছেন। কিন্তু শিকড় যে সত্যিই ছিঁড়ে গিয়েছিল, তা প্রমাণ হয়ে গেল সোমবার। জল্পনা সত্যি করেই কলকাতায় তৃণমূলে যোগ দেন বিষ্ণুপুরের বিধায়ক।

দলবদলু বিধায়ককে স্বাগত জানিয়ে তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা বড়জোড়ার বিধায়ক আলোক মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তন্ময় তৃণমূলের ছেলে। বিজেপি তাঁকে টোপ দিয়েছিল। তাই বিজেপি-তে গিয়েছিল। নিজের এলাকার উন্নয়নের লক্ষ্যে শুধু তন্ময় ঘোষ নন, বিজেপি-র আরও বহু বিধায়ক মুখিয়ে আছেন তৃণমূলে ফেরার জন্য।’’ আবার তৃণমূলের বাঁকুড়া সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা মনে করছেন, ‘‘বিজেপি-র পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। কয়েক দিন পর বিজেপি দলটাই আর এ রাজ্যে থাকবে না।’’

তন্ময়ের দলবদলে স্বাভাবিক ভাবেই ব্যাকফুটে বিজেপি। বিজেপি-র বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুজিত অগস্তির সাফাই, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর থেকেই তন্ময় ঘোষ দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেননি। তিনি মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। মানুষ বিজেপি প্রার্থী হিসাবে তাঁকে ভোট দিয়েছিলেন। মানুষ ভবিষ্যতে সুযোগ পেলে এর বদলা নেবে।’’ বিজেপি-র রাঢ় বঙ্গ জোনের আহ্বায়ক পার্থসারথি কুণ্ডু অবশ্য এর পিছনে তৃণমূলের চক্রান্ত দেখছেন। তাঁর মতে, ‘‘তন্ময় ঘোষ-সহ বিজেপি-র বহু কর্মীকে বিভিন্ন ভাবে ভয় দেখিয়ে দলে যোগ দিতে বাধ্য করছে তৃণমূল। তারা নোংরা খেলায় মেতেছে।’’

অবশ্য এই দলবদলে অবাক হওয়ার মতো কিছু দেখছেন না বিষ্ণুপুরের বাসিন্দাদের একটি অংশ। কেউ কেউ তো আড়ালে আববডালে বলছেন, ‘‘বিধায়কের দলবদল আমাদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। বিধায়ক কোন দলে থাকলেন, সেটা বড় কথা নয়। এলাকার উন্নয়ন হলে সেই বিধায়কই ভাল।’’

পেশায় ব্যবসায়ী তন্ময় ২০১৫ সালে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি বিষ্ণুপুর পুরসভার কাউন্সিলর হয়েছিলেন। ২০২০ সালের মে মাসে বিষ্ণুপুর পুরসভার নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হলে তাঁকে প্রশাসক মণ্ডলীতে আনা হয়। এর পাশাপাশি ওই বছরই তন্ময়কে বিষ্ণুপুর শহরের যুব তৃণমূলের সভাপতির দায়িত্বও দেয় দল। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর বিধানসভায় তিনি তৃণমূলের টিকিটের অন্যতম দাবিদার ছিলেন। কিন্তু দল তাঁকে টিকিট না দিয়ে বিষ্ণুপুর বিধানসভায় প্রার্থী করে অর্চিতা বিদকে। এর পরই বিজেপি-তে যোগ দেন তন্ময়। তিনি বিজেপি-র টিকিটে ওই কেন্দ্র থেকেই জয় পান। এ বার তিনি ঘরে ফিরলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC BJP Bishnupur MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE