Advertisement
০৪ মে ২০২৪

এক পুকুরে রুই আর গলদা, বাড়তি আয় হচ্ছে সাগরদের

সুসংহত কৃষিতে অন্য মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি চাষের পরিকল্পনাটা ছিল পরীক্ষামূলক। তাতে সাফল্য মেলায় স্বস্তিতে কৃষি দফতর। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সহকারি কৃষি অধিকর্তা মুক্তেশ্বর হাঁসদার দাবি, সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে কম করে দেড় লক্ষ টাকা আয় করবেন উকা গ্রামের মৎসজীবীরা।

এখন এক-দেড়শো গ্রামের চিংড়ি উঠছে পুকুর থেকে। নিজস্ব চিত্র

এখন এক-দেড়শো গ্রামের চিংড়ি উঠছে পুকুর থেকে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৫
Share: Save:

সুসংহত কৃষিতে অন্য মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি চাষের পরিকল্পনাটা ছিল পরীক্ষামূলক। তাতে সাফল্য মেলায় স্বস্তিতে কৃষি দফতর। রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সহকারি কৃষি অধিকর্তা মুক্তেশ্বর হাঁসদার দাবি, সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে কম করে দেড় লক্ষ টাকা আয় করবেন উকা গ্রামের মৎসজীবীরা।

‘আত্মা’ প্রকল্পে জোরাডি পঞ্চায়েতের উকা গ্রামে সুসংহত মিশ্র কৃষি প্রকল্প শুরু করেছে রঘুনাথপুর ২ ব্লক কৃষি দফতর। আদিবাসী মহিলা এবং পুরুষদের নিয়ে দু’টি করে দল গঠন করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে জৈব পদ্ধতিতে আনাজ, ধান, মাছ চাষ এবং পশুপালন এক সঙ্গে হচ্ছে গ্রামে। চলতি বছরের জুলাই থেকে পাঁচটা পুকুরে, ১০-১২ বিঘা এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে গলদা চিংড়ি চাষ। শীত পড়তেই একটু একটু করে লাভ আসতে শুরু করে দিয়েছে।

সাধারণ মাছের সঙ্গে একই পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষের পরিকল্পনা ব্লক কৃষি দফতরের প্রযুক্তি পরিচালক সুদীপ্ত সরকারের। তিনি জানান, নোনা জলে চিংড়ি চাষ হলেও গলদা সাধারণ পুকুরেও হয়। রুই, কাতলার সঙ্গে গলদা চাষ করলে চাষিদের বাড়তি আয় হবে— এই ভাবনা থেকেই উদ্যোগের সূত্রপাত।

সুদীপ্তবাবু বলেন, ‘‘অন্য মাছের সঙ্গে গলদা চিংড়ি চাষ করলে কোনও সমস্যা নেই। রুই কাতলা থাকে জলের উপরের দিকে। চিংড়ি মাটির কাছাকাছি।’’

তিনি জানান, মেদিনীপুর থেকে চিংড়ির চারা কিনে এনেছিল কৃষি দফতর। পরিচর্যার ব্যাপারে আগেই উকা গ্রামের দলগুলিকে বিশদে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। গত ছ’মাসে চিংড়ি আকারে আর ওজনে বেড়ে উঠেছে। এখন যেগুলি ধরা হচ্ছে, তার গড় ওজন দেড়শো-দু’শো গ্রাম। সেই চিংড়ি নিয়ে চাষিরা চলে যাচ্ছেন রঘুনাথপুর, সাঁওতালডিহি, চেলিয়ামা, গোবরান্দার বাজারে।

উকা গ্রামের চাষি মহাদেব প্রামাণিক, সাগর বাউড়িরা জানান, পুরুলিয়ায় গলদা চিংড়ি চাষ আদৌ কতটা সম্ভব, সেই ব্যাপারে গোড়ায় তাঁদের সংশয় ছিল। তবে প্রশিক্ষণ মতো কাজ করে সমস্ত সন্দেহ দূর হয়ে গিয়েছে। প্রায় দশ হাজার গলদা চিংড়ির চারা ওই পাঁচটি পুকুরে ছেড়েছিল কৃষি দফতর। মহাদেব, সাগররা বলেন, ‘‘স্থানীয় বাজারে কেজি প্রতি আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা দাম মিলছে। ওজনে বাড়লে আরও দর বাড়বে।’’

ব্লকের সহকারী কৃষি অধিকর্তা মুক্তেশ্বরবাবু বলেন, ‘‘শীতের শুরুতেই বিয়ের মরসুম। এই সময়টায় যাতে চিংড়ি বাজারে পাঠানো যায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য ছিল। এখন আকারে ছোট রয়েছে। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বড় হয়ে যাবে। তখন রঘুনাথপুর মহকুমার বড় বাজারগুলিতে বিক্রি করার
পরিকল্পনা রয়েছে।”

এই উদ্যোগে চারটি দলের প্রায় ষাট জন সদস্যের পরিবার লাভবান হয়েছে বলে জানাচ্ছে কৃষি দফতর। মুক্তেশ্বরবাবু জানান, কৃষি দলের পুরুষেরা যখন মাছ চাষে নজর দিচ্ছেন, পাশেই মহিলারা মাশরুম ফলাচ্ছেন। চলতি মাসের মাঝামাঝি বাজারে আসবে সেই মাশরুমও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fish Lobster Rohu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE