Advertisement
১৯ মে ২০২৪
সীমানা প্রাচীর চায় কেমপুর

তিন দিকে বিপদ, ভয়েই ক্লাস স্কুলে

বিপদ যেন মুখিয়ে রয়েছে। এক দিকে পুকুরে সাঁতরে সবে ডাঙায় পেট রেখে চলতে শুরু করেছে কালো কেউটে। তার ছোবল থেকে বাঁচতে ছুটতে গিয়ে আবার দেখা গিয়েছে, অন্য দিকের পুকুর থেকে উঠে আসছে বাঁকরাজ সাপ। লাভপুরের কেমপুর প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া-শিক্ষকদের এই অভিজ্ঞতা দীর্ঘ দিনের। কারণ, ওই স্কুলের তিন দিকেই রয়েছে তিনটি পুকুর, সামনে রাস্তা।

লাভপুরের স্কুলে পুকুর পাড়েই খেলায় মেতেছে খুদেরা। —নিজস্ব চিত্র

লাভপুরের স্কুলে পুকুর পাড়েই খেলায় মেতেছে খুদেরা। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
লাভপুর শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৬ ০১:০৭
Share: Save:

বিপদ যেন মুখিয়ে রয়েছে। এক দিকে পুকুরে সাঁতরে সবে ডাঙায় পেট রেখে চলতে শুরু করেছে কালো কেউটে। তার ছোবল থেকে বাঁচতে ছুটতে গিয়ে আবার দেখা গিয়েছে, অন্য দিকের পুকুর থেকে উঠে আসছে বাঁকরাজ সাপ। লাভপুরের কেমপুর প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া-শিক্ষকদের এই অভিজ্ঞতা দীর্ঘ দিনের। কারণ, ওই স্কুলের তিন দিকেই রয়েছে তিনটি পুকুর, সামনে রাস্তা। তারই মাঝে স্কুল। অথচ নেই কোনও সীমানা প্রাচীর। তাই বিপদের আশঙ্কায় সিঁটিয়ে রয়েছেন স্কুলের শিক্ষকেরা। আশঙ্কা রয়েছে অভিভাবকদেরও। অথচ বারবার দাবি জানিয়েও প্রাচীর নির্মাণে প্রশাসনের কোনও হেলদোল দেখা যায়নি বলেই অভিযোগ।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পাড় ভাঙতে ভাঙতে তিনটি পুকুরই বর্তমানে কার্যত স্কুল চত্বরে পৌঁছে গিয়েছে। সারা বছরই পুকুর তিনটিতে কম বেশি জল থাকে। তাই পুকুরে ছাত্রছাত্রীদের তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ওই সব সাপের উপদ্রবও। বছর দুয়েক আগেই ছুটির পরে ওই স্কুল চত্বরে খেলতে গিয়ে সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় এক প্রাক্তন ছাত্রীর। তার উপরে সামনে রয়েছে গ্রামে যাওয়ার ঢালাই রাস্তা। সেই রাস্তায় হরদম মোটরবাইক, ট্রাক্টর, ভ্যানো চলাচল করে। কখন ছাত্রছাত্রীরা পুকুর কিংবা রাস্তায় গিয়ে বিপদ বাঁধিয়ে বসে সেই আশঙ্কায় শিক্ষকদের পড়ানো ফেলে রেখে পালা করে পাহারায় থাকতে হয়। এর ফলে ব্যাঘাত ঘটে পঠনপাঠনেও। কারণ ৩৪ জন পড়ুয়ার জন্য ওই স্কুলে রয়েছেন মাত্র দু’জন শিক্ষক। তাই এক জন যখন পাহারায় থাকেন, তখন অন্যজনকে একাই সব ক’টি ক্লাস সামাল দিতে হয়। এর উপরে যে দিন এক জন ছুটি কিংবা প্রশাসনিক কাজে বাইরে যান, সে দিন কার্যত জোড়াতালি দিয়েই চলে স্কুল।

স্কুলের সহকারি শিক্ষক প্রবীর মিত্রের কথায়, ‘‘ওই ব্যবস্থা আমরা নিজেরাই ঠিক করে নিয়েছি। কারণ ছেলেমেয়েদের কিছু একটা হয়ে গেলে অভিভাবকদের ক্ষোভের শিকার হওয়া ছাড়াও আমরা নিজেদেরও ক্ষমা করতে পারব না। তাই পাহারা দেওয়াটাই এখন আমাদের কাছে মুখ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মাঝে যতটা পারি পড়ানোর চেষ্টা করি।’’ সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া আকাশ মণ্ডল, নন্দিতা মণ্ডলরাও। তারা বলছে, ‘‘প্রায়ই পুকুর থেকে সাপ উঠে আসে। তখন আমরা ছুটে পালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু দেখি অন্য দিকের পুকুর থেকেও সাপ উঠে আসছে। তখন আমরা ভয়ে চোখ বন্ধ করে কাঁদতে শুরু করি। কান্না শুনে মাস্টামশাইরা আমাদের উদ্ধার করে নিয়ে যান।’’

অভিভাবক করুণাময় দাস, সুমন্ত মণ্ডলরা জানান, প্রায় প্রতি বছরই বন্যায় ভেসে এসে পুকুরগুলিতে বিভিন্ন বিষধর সাপ বাসা বাঁধে। বছর দুয়েক আগেই স্কুল চত্বরে সাপের কামড়ে গ্রামের এক মেয়ের মৃত্যু হয়। সেই থেকেই তাঁরা ছেলেমেয়েদের নিয়ে আশঙ্কায় সিটিয়ে থাকেন। অথচ প্রাচীর নির্মাণে প্রশাসনের কোনও উদ্যোগই নেই বলেই তাঁদের অভিযোগ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘‘অভিভাবকদের আশঙ্কা হওয়াটাই স্বাভাবিক। ছেলেমেয়েদের বাড়ি না পাঠানো পর্যন্ত আমাদেরও একই অবস্থায় কাটাতে হয়। প্রশাসনের সকল স্তরে জানিয়েও প্রাচীর নির্মাণের কোনও ব্যবস্থা হয়নি।’’

সংশ্লিষ্ট লাভপুর দক্ষিণ চক্রের অবর স্কুল পরিদর্শক জয়ন্ত মণ্ডল জানান, শুধু কেমপুরই নয়, চক্রের ৭৬টি স্কুলের মধ্যে বেশ কয়েকটির প্রাচীর নেই। তাঁরা সর্বশিক্ষা মিশনের কাছে ওই সব স্কুলের তালিকা পাঠিয়েছেন। অর্থ মঞ্জুর হলেই অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কেমপুর স্কুলে প্রাচীর নির্মাণের ব্যবস্থা করা হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Snake School
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE