Advertisement
১৮ মে ২০২৪

কড়ি গুনে তবেই স্কুলে সাইকেল

শুক্রবার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, দু’টি সাইকেল স্ট্যান্ডে সাইকেল রাখছে অনেক পড়ুয়া। তাদের প্রত্যেককে টাকা দিয়ে কার্ড নিতে হয়েছে। তবে তাতে প্রধান শিক্ষকের সইয়ের জায়গাটা ফাঁকা। স্ট্যান্ডের দেওয়ালে লেখা রয়েছে, ২০১১ সালে পুরসভার আর্থিক সাহায্যে সেটি তৈরি হয়েছে।

পাহারা: বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের স্ট্যান্ডে সাইকেল রাখতে হলে টাকা দিয়ে কার্ড নিতে হয় পড়ুয়াদের। নিজস্ব চিত্র

পাহারা: বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের স্ট্যান্ডে সাইকেল রাখতে হলে টাকা দিয়ে কার্ড নিতে হয় পড়ুয়াদের। নিজস্ব চিত্র

শুভ্র মিত্র
বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫৭
Share: Save:

স্কুলে আসার জন্য সবুজসাথী প্রকল্পে সরকার বিনামূল্যে সাইকেল দিচ্ছে। কিন্তু সেই সাইকেল স্কুলের স্ট্যান্ডে রাখতে পড়ুয়াদের প্রতি মাসে ২০ টাকা করে দিতে হচ্ছে। বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের এই ঘটনায় বিতর্ক দেখা দিয়েছে শহরে।

রাসতলায় শহরের সবচেয়ে পুরনো স্কুল বিষ্ণুপুর উচ্চ বিদ্যালয়। পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া সংখ্যা প্রায় ১৮০০। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড তো বটেই, পাশের চৌকান, আঁচবাড়ি, পানশিউলি, ময়রাপুকুর, মানসা, ঘুটবনি, দ্বারিকা, শ্যামসুন্দরপুর প্রভৃতি এলাকা থেকে মূলত সাইকেলেই আসে পড়ুয়ারা। সম্প্রতি তাদের জানিয়ে দেওয়া হয়, স্কুলের স্ট্যান্ডে সাইকেল রাখতে হলে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট টাকা দিতে হবে। বাধ্য হয়ে অনেক পড়ুয়া পাঁচিলের বাইরে সাইকেল রেখে স্কুলে যেতে শুরু করে। তাদের অনেকের অভিযোগ, কিছু দিন হল স্কুল থেকে বেরিয়ে দেখছে সাইকেল ফেলে দেওয়া হয়েছে। বা বের করে দেওয়া হয়েছে চাকার হাওয়া। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, বৈঠকে এই নিয়ে কথা বলতে গেলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ আমল দেয়নি।

শুক্রবার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, দু’টি সাইকেল স্ট্যান্ডে সাইকেল রাখছে অনেক পড়ুয়া। তাদের প্রত্যেককে টাকা দিয়ে কার্ড নিতে হয়েছে। তবে তাতে প্রধান শিক্ষকের সইয়ের জায়গাটা ফাঁকা। স্ট্যান্ডের দেওয়ালে লেখা রয়েছে, ২০১১ সালে পুরসভার আর্থিক সাহায্যে সেটি তৈরি হয়েছে। দেখা গেল, প্রতি স্ট্যান্ডে এক জন করে যুবক ছড়ি হাতে সাইকেল রাখা তদারক করছেন। আর এক জন রসিদ পরীক্ষা করে দেখছেন, পড়ুয়ারা কে কোথায় সাইকেল রাখবে তা তদারক করছেন। এক জন দেখছেন রসিদের ব্যাপারটা— যাতে কেউ ফাঁক গলে ঢুকে পড়তে না পারে।

এই সেই কার্ড।

বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হারাধন মণ্ডল জানান, ওই যুবকদের নিয়োগ করা হয়েছে সাইকেল পাহারা দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, ‘‘সামান্য কটা টাকা বৈ তো নয়। পড়ুয়াদের নিয়মানুবর্তিতা শেখাতেই এটা নিচ্ছি। আমাদের কোনও দারোয়ান নেই। ওই যুবকেরা সাইকেল পাহারা দেন।’’ কিন্তু স্কুলের তো মস্ত পাঁচিল, ফটক— সব রয়েছে। তার ফাঁক গলে চোরের ঢুকে পড়তে বেগ পেতে হবে যথেষ্ট। অভিভাবকদের একাংশের বক্তব্য, চোর নয়, পড়ুয়ারা পাছে ‘নিয়মানুবর্তিতা ফি’ ফাঁকি দেয় সেই জন্য বসানো হয়েছে পাহারা। এক অভিভাবক বলেন, ‘‘সরকারি সাহায্য পাওয়া স্কুল এ রকম ব্যবসা করার জায়গা না কি!’’ তাঁদের দাবি, গড়ে প্রায় পাঁচশোটি সাইকেল প্রতিদিন স্ট্যান্ডে রাখা হয়। সব মিলিয়ে হাজার দশেক টাকার কাছাকাছি আয় হয় সেখান থেকে। তাঁদের প্রশ্ন, প্রধান শিক্ষকের সই ছাড়া রসিদ দিয়ে তোলা সেই টাকা যাচ্ছে কোথায়? এই প্রশ্ন প্রধানশিক্ষককে করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পরিচালন সমিতির সভাপতিকে জিজ্ঞাসা করুন।’’

তাঁর পরামর্শ মেনে পরিচালন সমিতির সমিতির সভাপতি অভিজিৎ সিংহের কাছে যাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘কারা এই সব করছে? খুব অন্যায় হচ্ছে এটা। সামনের বৈঠকে দেখছি।’’ তাঁর দাবি, মাস তিনেক আগে স্কুলের দায়িত্বে আসা ইস্তক তাঁর কাছে উন্নয়ন তহবিলের পরিষ্কার হিসাব দেওয়া হয়নি।

বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান শ্যাম মুখোপাধ্যায় জানান, পুরসভার আর্থিক সাহায্যে তৈরি হয়েছিল স্কুলের সাইকেল স্ট্যান্ড। স্কুল সেটি ব্যবহারের জন্য পড়ুয়াদের থেকে টাকা নিয়ে অনুচিত কাজ করছে বলে তাঁর মত। বিষ্ণুপুর মহকুমা সহকারি বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সঞ্জীবকুমার দাস চক্রবর্তী সব শুনে বলেন, ‘‘কোন স্কুলে এমনটা করা হয় না। বিষ্ণুপুর হাইস্কুলে ছড়ি হাতে ওই যুবকেরা ঢুকলেন কী করে? ওঁদের কে নিয়োগ করল? যা হচ্ছে, সেটা অন্যায়। আমি শীঘ্রই ওই স্কুলে যাব।’’

এ দিন বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ওই স্কুলে মিড-ডে মিল নিয়ে অভিযোগ পেয়েছে। সবটাই নজরে আছে। এ বারের অভিযোগটা মারাত্মক। আজই আমি শিক্ষামন্ত্রীকে বিস্তারিত জানিয়ে চিঠি লিখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE