নতুন: পিওএস যন্ত্র। নিজস্ব চিত্র
সারের কেনা-বেচা নিয়ে বেনিয়ম বন্ধ করতে এ বার কড়া হল কেন্দ্রীয় সরকার। মুদি কিংবা হার্ডওয়্যারের মতো দোকানে আর সার বেচা যাবে না। আধার কার্ড দেখিয়ে শুধু নির্দিষ্ট দোকান থেকেই সার কিনতে পারবেন কৃষকেরা। দেশের ছ’টি রাজ্যের সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলা জুড়ে এই নিয়ম চালু হয়ে গেল।
সরকার চাষিদের স্বার্থে সার উৎপাদক সংস্থাগুলিকে ভর্তুকি দিয়ে আসছে। অথচ চাষের মরসুমে সার নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ কম ওঠে না। ন্যায্যমূল্যে সার বিক্রির দাবিতে আন্দোলনও হয়। এ বার তাই সার নিয়ে অসাধুচক্রের কারবার বন্ধ করতে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
এই নতুন ব্যবস্থায় চরো সার ব্যবসায়ীদের একটি করে ‘পস’ বা ‘পয়েন্ট অব সেল’ যন্ত্র দেওয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। সার কিনতে গেলে সেই যন্ত্রে সংশ্লিষ্ট চাষির আধার কার্ডের নম্বর ও আঙুলের ছাপ দিতে হবে। তবেই তিনি সার পাবেন। তিনি কতটা সার কিনলেন তা-ও নথিভুক্ত হবে। সেই মতো ভর্তুকির টাকা জমা পড়বে চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
কৃষিকর্তাদের মতে, এই ব্যবস্থায় সারের কালোবাজারিও কমবে। এত দিন সার বিক্রির উপরে সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ব্যবসায়ীরা কতটা সার কিনছেন আর কতটা চাষিদের কাছে কত দামে বিক্রি করছেন, তার হিসেব থাকত না। তাই কালোবাজারি করা যেত সুবিধে বুঝে। জেলা কৃষি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ব্যবসায়ী কতটা সার কিনছেন, কতটা তাঁর কাছে আগেই মজুত ছিল, আর কাকে কতটা সার কত দামে বিক্রি করছেন, সবই ওই যন্ত্রের মাধ্যমে সরকারের কাছে নথিবদ্ধ হবে। বেনিয়ম হলেই ধরা যাবে। পুরুলিয়া জেলা কৃষি অধিকর্তা আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের জেলাতে এ দিন থেকেই পসের মাধ্যমে সার বিক্রি শুরু হয়েছে। আশা করছি, এর ফলে সার নিয়ে আর দুর্নীতির জায়গা থাকবে না।’’ কৃষি দফতর সূত্রে খবর, প্রথম দফায় পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, হিমাচল প্রদেশ, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশে এ দিন থেকে পসের মাধ্যমে সার বিক্রি শুরু হয়েছে।
সম্প্রতি মানবাজার ১ ব্লক কৃষি দফতর থেকে নতুন লাইসেন্সপ্রাপ্ত সার বিক্রেতাদের হাতে পস যন্ত্র দেওয়া হয়। যন্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। মানবাজারের বাসিন্দা সার বিক্রেতা শিশির ঘোষ বলেন, ‘‘হোলসেলারের কাছ থেকে যে পরিমাণ সার নিয়ে এসেছি এবং চাষিরা প্রতি দিন কী পরিমাণ সার কিনছেন, সেই তথ্য এই যন্ত্রে নথিবদ্ধ হবে। বিক্রি শেষে যন্ত্র থেকে রসিদ ‘প্রিন্ট আউট’ বের হবে।’’ তবে অনেক সার বিক্রেতা জানিয়েছে, পদ্ধতিগত জটিলতায় সময় বেশি লাগছে।
ইফকোর বাঁকুড়া এবং পুরুলিয়া জেলার দায়িত্বে থাকা ফিল্ড অফিসার সুদীপ্ত দত্ত বলেন, ‘‘অভ্যস্ত হয়ে গেলে আর বেশি সময় লাগবে না। পুরুলিয়া জেলায় এখনও পর্যন্ত ৩৬৭ জন সার বিক্রেতাকে ‘পস’ যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। এই জেলার জন্যে আরও ১৪৭টি যন্ত্র চেয়ে পাঠানো হয়েছে।’’ তিনি জানান, যাঁরা সার বিক্রির লাইসেন্স পেতে চান, তাঁরা ওয়েবসাইটে কৃষি দফতরের ‘মাটির কথা’ বিভাগে গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন জানাতে পারেন। জেলা কৃষি দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, যে সমস্ত চাষির এখনও আধারকার্ড হয়নি, তাঁরা আপাতত কিসান ক্রেডিট কার্ড (কেসিসি) কার্ড দেখিয়েও সার পেতে পারেন । মানবাজার ১ ব্লকের সহকারী কৃষি আধিকারিক অর্ক রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই নিয়মের অন্যথা হলে আইনত দণ্ডনীয় হবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy