Advertisement
১১ মে ২০২৪

ধান কেনায় ঢিমে গতি, দেখতে আসছেন মন্ত্রী

ধানের ফলন স্বাভাবিক হলেও পুরুলিয়া জেলায় সরকারি ভাবে ধান কেনায় গতি আসেনি। লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ শতাংশেরও কম ধান কেনা গিয়েছে। কেন এই অবস্থা, তা সরেজমিনে দেখতে আজ শনিবার জেলায় আসছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

কাশীপুরে ধান কেনা। নিজস্ব চিত্র।

কাশীপুরে ধান কেনা। নিজস্ব চিত্র।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৬
Share: Save:

ধানের ফলন স্বাভাবিক হলেও পুরুলিয়া জেলায় সরকারি ভাবে ধান কেনায় গতি আসেনি। লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ শতাংশেরও কম ধান কেনা গিয়েছে। কেন এই অবস্থা, তা সরেজমিনে দেখতে আজ শনিবার জেলায় আসছেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবার পুরুলিয়ার ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৮ হাজার টন। এ বার ফলন বেশি হওয়ায় তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার টন। তার মধ্যে খাদ্য দফতরের কেনার কথা ৭৯ হাজার টন। তাদের ধান কেনার কথা কিসান মান্ডি থেকে। এ ছাড়া বিভিন্ন সমবায় সমিতির মাধ্যমে ধান কেনার জন্য বেনফেডের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ২৬ হাজার টন এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমের লক্ষ্যমাত্রা ৬১ হাজার টন।

কোন সংস্থার ভাঁড়ারে কতটা ধান উঠেছে? সরকারি ভাবে ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ধান কেনার কাজ শুরু হলেও, বাস্তবে পুরুলিয়ায় তা শুরু হয় গত ২৮ ডিসেম্বর। খাদ্য দফতর মোট ১২টি জায়গা থেকে বুধবার পর্যন্ত ধান তুলেছে ৬,৩২৮ টন। বেনফেড ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিগমের ঘরে উঠেছে মোট ১,৪০০ টন। যা মোট লক্ষ্যমাত্রার মোটে সাড়ে চার শতাংশের কিছুটা বেশি। তবে জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের দাবি, গত ৭ ফেব্রুয়ারি কৃষি বিপণন দফতরের সচিব রাজেশ সিংহ জেলায় এসে বৈঠক করে যাওয়ার পরে এবং জেলাশাসকের হস্তক্ষেপে ধান কেনার গতি কিছুটা বেড়েছে। তবে তাতে কতটা ধান সরকারের ঘরে উঠবে তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই। পুরুলিয়া ২ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ রাজপতি মাহাতোর কথায়, ‘‘চাষিরা নানা কাজের খরচ তোলার জন্য মার্চের মধ্যে ধান বিক্রি করে বাকিটা বাড়ির খরচের জন্য মজুত করে রাখেন। এটাই রেওয়াজ।’’ ফলে আর দেড় মাসের মধ্যে সরকারের ঘরে কতটা ধান উঠবে, তা নিয়ে রাজপতিবাবুর মতো অনেকেই সন্দিহান।

এই অবস্থা কেন? প্রশাসনের একটি অংশের দাবি, ধান বিক্রির টাকা সরাসরি চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ার কথা। কিন্তু অনেক চাষির অ্যাকাউন্ট নেই। অ্যাকাউন্ট থাকলেও হয়তো কারও প্যান কার্ড-র মতো নথি ব্যাঙ্কে জমা করা নেই। এতে চাষিরা ধান বিক্রি করতে উৎসাহ পাচ্ছেন না। আবার চাষিদের বক্তব্য, ধান বিক্রির দিন অনেক পিছিয়ে ফেলা হচ্ছে। যেমন কাশীপুর ব্লকের রাঙামাটি গ্রামের চাষি ভূদেব মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘আমি ৩১ ডিসেম্বর ধান বিক্রি করতে চেয়ে আবেদন জানিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি কেনার দিন পেয়েছি।’’ একই বক্তব্য, লাড়া গ্রামের সুবল মোদকেরও। তাঁদের যুক্তি, ‘‘ধান তুলেই আমরা বিক্রি করে টাকা হাতে পাওয়ার চেষ্টা করি। সেখানে সরকারের ধান কেনার পদ্ধতি আমাদের নিরুৎসাহ করছে।’’ সে জন্য তাঁরা আড়ৎদার ও ফড়ের কাছে কম দামেই ধান বিক্রি করছেন। কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার দাবি, ‘‘জরুরি কাজে কারও ধান বিক্রির টাকার প্রয়োজন শুনলে আমরা সেই চাষির ধান অগ্রাধিকার দিয়ে কিনছি।’’

অন্য একটি অভিযোগও সামনে এসেছে। আগে ধানকলের মালিকরাই ধান কেনার কাজ অনেকটা সামলাতেন। কিন্তু সরাসরি চাষির অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছনোর ফলে, তাঁরা এ বার গা ছাড়া মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমেছেন। যদিও পুরুলিয়া জেলা ধানকল সমিতির মুখপাত্র মনোজ ফোগলার দাবি, ‘‘আমরা সরকারকে যতটা পারি ধান কেনায় সহযোগিতা করছি।’’ সমবায়গুলিও পূর্ণমাত্রায় ধান কিনতে নামতে পারেনি। জেলায় বর্তমানে ১৪৩টি সমবায় সমিতি থাকলেও জেলার সমবায় সমূহের নিবন্ধক পিয়ালি সাহা জানাচ্ছেন, ৪৩টি সমবায় ধান কেনার কাজ শুরু করেছে। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর ব্যাখ্যা, ‘‘এ বার দেরি করে ধান কেনার কাজ শুরু হয়েছে। এখন প্রতিদিন ‘টার্গেট’ নিয়ে সবাই মিলে কাজ করছেন। দেখা যাক কতটা সাফল্য পাওয়া যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rice Low price
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE