বোলপুরে পরে ছিনতাইবাজদের দৌরাত্ম্য এ বার জেলার সদর শহর সিউড়িতেও। ছিনতাই হল পুলিশ লাইনের অদূর থেকেই!
সাইকেলের বাস্কেটের মধ্যে টাকার ব্যাগ রেখে বাড়ি ফিরছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। বাইকে চড়ে দুই যুবক তাঁর পিছু ধাওয়া করে। একসময় পথের মাঝে তাঁর সাইকেলের হ্যান্ডেল চেপে ধরে বাইকের পিছনে বসে থাকা যুবক। বিপদ বুঝে বেসামাল হয়েও হাতে সাইকেলের হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন সুকুমারবাবু। তবুও শেষ রক্ষে হয়নি! দুষ্কুতীরা তাঁকে মারধর করে ছিনিয়ে নিয়ে যায় টাকার ব্যাগ। না, এ কোনও ফিল্মের দৃশ্য নয়— শুক্রবার সিউড়ি শহরে এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা জানাজানিতে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
কিছুদিন আগেই বোলপুরে পর পর ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও একইকায়দায় বাইকে করে এসে দুষ্কৃতীরা টাকা নিয়ে পালায়। ঘটনা স্থল কখনও ব্যাঙ্ক বা এটিএমের সামনে। কখনও বা মাঝ রাস্তায়। এ দিনও মাঝ রাস্তায় সুকুমারবাবুর টাকার ব্যাগ ছিনতাই হয়ে যাওয়ার পরে শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ঘটনার পরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন হাটজনবাজারের বাসিন্দা সুকুমারবাবু। এতগুলো টাকা এভাবে খোওয়া যাওয়ায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন?
দিনে দুপুরে ছিনতাইয়ে অতগুলো টাকা খুইয়ে এখনও আতঙ্ক কাটেনি সুকুমারবাবুর। প্রায় দেড় যুগ আগে সিউড়ি ১ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের পদ থেকে অবসর নিয়েছিলেন তিনি। এমনিতে ব্যাঙ্কের যাবতীয় কাজ নিজেই করেন তিনিই। শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে মূল রাস্তা ধরে প্রশাসনভবন ও জেলা সংশোধনাগারের মাঝামাঝি একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কে আসেন। নীচে সাইকেল রেখে দোতলায় থাকা ব্যাঙ্কে উঠেন। তাঁর দাবি, ‘‘একটি দেড় লক্ষ টাকার চেক ভাঙাতে এসেছিলাম। টাকার অঙ্ক এতটা না হলেও চেক ভাঙাতে প্রায়ই আসি। প্রথমে টাকাটা একটা চামড়ার ব্যাগে ও তারপর সেটি একটি নাইলনের থলিতে ভরে নীচে নামি। সাইকেলে থলির হ্যান্ডেল ফাঁসিয়ে বাস্কেটের মধ্যে ব্যাগ রেখে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিই। পুলিশ লাইনের কাছে পৌঁছই তখন একটি সবুজ রঙের মোটরবাইক আমার পিছু নেয়।’’
মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরে সুকুমারবাবুর হাতের কনুই ও হাঁটুতে চোট লাগে।
তাঁর আফশোস, ‘‘যেখানে আক্রান্ত হলাম তার ঠিক ৫০০ ফুট পিছনে দুই উর্দিধারী পুলিশ ছিল পুলিশ লাইনের গেটে। কিন্তু তাঁদের দেখা মেলেনি। পথচলতি লোকজন আমাকে তুলে ছেলেকে খবর দেয়।’’ তিনি জানান, দুষ্কৃতীদের হাত থেকে বাঁচতে জোরে সাইকেল চালাচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ওরা ঠিক ধরে ফেলল। দ্রুতগতিতে বাইকের পাশে এসে আমার হাত লক্ষ্য করেই সজোরে ঘুষি চালায়। মাটিতে ছিটকে পড়ি আমি। সেই সুযোগে টাকার ব্যাগ নিয়ে চোখের নিমেষে বাইকে করে মিলিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা।’’
বাবার সঙ্গে এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ ছেলে কিশোর বন্দ্যোপাধ্যায়।
এলাকার তৃণমূল কর্মী ও পেশায় ব্যাবসায়ী কিশোরবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বাবার বয়স হলেও যথেষ্ট শক্ত। কিন্তু এ ভাবে দিনের আলোয় ছিনতাইবাজদের কবলে পড়তে হবে স্বপ্নে ভাবিনি। তাহলে আর নিরাপত্তা কোথায়?’’ একই প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা বলছেন, এ ভাবে দিনের আলোয় যদি অপরাধীরা বাইকে চড়ে শহর দাপিয়ে বেড়ায় তাহলে পুলিশ কী করছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। ঘটনা হল, জেলার সদর শহরে লাগাতার চুরি ডাকাতি লেগেই রয়েছে। গত বছর অগস্টে প্রকাশ্য রাস্তায় স্কুটিতে সওয়ার এক তরুণীকে গুলি করে খুনের স্মৃতি এখনও ভোলেনি শহরবাসী। গত মে মাসে স্কুল আসার পথে আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছুঁড়ে সিউড়ি এক স্কুল শিক্ষিকার গলা থেকে সোনার হার ছিনতাইয়ের ঘটনাও এখনও শহরের স্মৃতিতে টাটকা। তার উপর এ দিন যে ঘটনা ঘটল তাতে পুলিশের ভূমিকা ও শহরের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল।
সিউড়ির পুরপ্রাধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের গলাতেও একই সুর। তিনি বলেন, ‘‘শহরে এমন অপরাধের সত্যিই কোনও কিনারা করতে পারছে না পুলিশ। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের সন্দেহ নেই।’’
তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।