কবির হাতে লাগানো আমলকি গাছ। নিজস্ব চিত্র
রীতি মেনে ১০ মার্চ গাঁধী পুণ্যাহ পালিত হল বিশ্বভারতীতে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও সকালে উপাসনা গৃহ সংলগ্ন অঞ্চল পরিষ্কারের মধ্যে দিয়ে গাঁধী পুণ্যাহ পালন করা শুরু হয়। বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সহ বিশ্বভারতী পরিবারের সকলে উপস্থিত ছিলেন। এর পরে বিভিন্ন ভবন ও বিভাগ নিজেদের মতো করে এই দিনটি পালন করে।
গাঁধী পুণ্যাহ উপলক্ষে রবীন্দ্রভবনের নেওয়া একটি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আশ্রমিক থেকে শুরু করে পড়ুয়ারা। রবিবার গাঁধী পুণ্যাহ উপলক্ষে উত্তরায়ণের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত ‘পঞ্চবটী’কে প্রতীকীভাবে চিহ্নিত করে ওই এলাকা পরিষ্কার করা হয়। রবীন্দ্রভবনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অমল পাল বলেন, ‘‘পুরনো দিনের মানুষেরা এই পঞ্চবটীর গুরুত্ব জানেন। কিন্তু আমরা ভুলতে বসেছিলাম। আমাদের মনে হয়েছে পঞ্চবটীকে উপেক্ষিত রাখা ঠিক নয়। বিষয়টি সকলের সামনে আসা উচিত। যত্ন নেওয়া উচিত। গাঁধী পুণ্যাহের দিন থেকেই এই কাজ শুরু করা হল।’’
অনেকেই মনে করেন পাঁচটি বট গাছ রয়েছে হয়তো। আদৌ তা নয়। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা যায়, ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ (ইংরেজি ১৯২৫ সাল) জাঁক করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৬৫ বছরের জন্মদিন পালন করা হয়েছিল। ওই জন্মদিনের বিশেষত্ব ছিল পঞ্চবটী প্রতিষ্ঠা। সেই দিনই বিধুশেখর শাস্ত্রীর উদ্যোগে উত্তরায়ণের উত্তর-পশ্চিম অংশে নির্দিষ্ট দূরত্বে বট, বেল, আমলকি, অশোক এবং অশ্বত্থ এই পাঁচটি গাছ নিজের হাতে লাগিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কী পদ্ধতিতে গাছগুলি লাগানো হবে তাও কবিকে জানান বিধুশেখর শাস্ত্রী। তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী কবি সে দিন ধুতি পরে গায়ে চাদর জড়িয়ে বৃক্ষরোপণ করেন।
এই উপলক্ষে বিধুশেখর শাস্ত্রীর লেখা সংস্কৃত শ্লোক উচ্চারণ করা হয়, গাওয়া হয় ‘মরুবিজয়ের কেতন উড়াও’। বিধুশেখর শাস্ত্রীর নিজের লেখা বই, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের ‘রবীন্দ্রজীবনী’-র তৃতীয় খণ্ড, ১৩৩২ বঙ্গাব্দের ‘প্রবাসী’ পত্রিকার জৈষ্ঠ্য সংখ্যা থেকে বিষয়গুলি জানা যাচ্ছে। এমনকি রবীন্দ্রভবনে ডিরেক্টরের ঘরে একটি ছবি রয়েছে, যা দেখে অনুমান করা হচ্ছে ছবিটি কবির এই জন্মদিনের সময়েই তোলা। ১৩৬৫ বঙ্গাব্দেও বিধুশেখর শাস্ত্রী পঞ্চবটীর উল্লেখ করছেন। বিশ্বভারতীর এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা নিয়ে গাঁধী পুণ্যাহের দিন থেকে পুনরায় ভাবতে শুরু করেছেন রবীন্দ্রভবন কর্তৃপক্ষ।
অমলবাবু জানালেন, বট, বেল, আমলকি এবং অশোক এই চারটি গাছ চিহ্নিত করা গিয়েছে। তবে ওই উত্তর পশ্চিম অংশেই অশ্বত্থ গাছের মতো পুরনো একটি গাছ রয়েছে। সেটি অশ্বত্থ কিংবা ওই জাতীয় অন্য কোনও গাছ কি না সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সেই চেষ্টাও করছে রবীন্দ্রভবন। অন্য দিকে, গাঁধী পুণ্যাহ উপলক্ষে রবিবার শ্রীনিকেতন কুঠিবাড়ি পরিষ্কার করেন বিশ্বভারতীর জীবনব্যাপী শিক্ষা ও সম্প্রসারণ বিভাগের পড়ুয়ারা। উপস্থিত ছিলেন ১৯টি ব্রতীবালক সংগঠনের অধিনায়ক ও অধিনায়িকারা।
এই বিভাগের প্রধান সুজিতকুমার পালের কথায়, ‘‘পড়ুয়ারা কী ভাবে এই দিনটি পালন করে তা সংগঠনের অধিনায়ক ও অধিনায়িকারা দেখে গেলেন। তারাও এই উদ্যোগ নিতে পারবেন।’’ এ দিন বিশ্বভারতীর এনএসএস ইউনিটের ভলান্টিয়াররা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে শান্তিনিকেতন এবং শ্রীনিকেতন ক্যাম্পাস পরিষ্কার করেন। বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বিভাগের পাশাপাশি শিক্ষাসত্র এবং পাঠভবনের ভলান্টিয়াররাও যোগ দেন। ২০১৫ সালে ভারত সরকার এনেছে স্বচ্ছ ভারত অভিযান। তার ১০০ বছর আগে ১৯১৫ সালে মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধী দক্ষিণ আফ্রিকার ফিনিক্স স্কুলের পড়ুয়াদের নিয়ে এসেছিলেন শান্তিনিকেতনে। ওই বছর ১০ মার্চ পড়ুয়ারা আশ্রম চত্বর পরিষ্কার করেন। সেই ধারা আজও চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy