Advertisement
০২ মে ২০২৪
TMC Internal Conflict

মারে ফেটেছে মাথা, আঘাত সয়েই পরীক্ষা দুই বোনের

রাতেই তাঁদের স্থানীয় খুজুটিপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP

নিজস্ব সংবাদদাতা
নানুর শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৯
Share: Save:

মাথায় আঘাত নিয়েই মাদ্রাসার পরীক্ষা দিল পিঠোপিঠি দুই বোন!

পড়ে গিয়ে বা দুর্ঘটনাবশত আঘাত তারা পায়নি। অভিযোগ, শাসকদলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ জেরেই পরীক্ষা দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল মহিমা ও নীলি খাতুনের। দু’জনেরই মাথায় আঘাত করেছে তৃণমূলেরই একদল লোক বলে পরিবারের অভিযোগ। সেই আঘাত সয়েই মনের জোরে দুই বোন বুধবার মাদ্রাসা বোর্ডের ভূগোল পরীক্ষা দিয়েছে।

মহিমা ও নীলির বাড়ি নানুরের ব্রাহ্মণখণ্ড গ্রামে। তাদের বাবা মুকুল শেখ সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। স্থানীয় থুপসড়া পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সদস্য মুকুল শেখ অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামী হিসাবেও পরিচিত। মুকুলের অভিযোগ, জেলা সভাধিপতি কাজল শেখের কিছু অনুগামী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাঁদের বাড়িতে বাঁশ-লাঠি-শাবল নিয়ে চড়াও হন, লাঠি শাবল নিয়ে চড়াও হন। মারধরে মুকুল শেখের মাথা ফেটে যায়। অভিযোগ, তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন তাঁর দুই মেয়ে এবং স্ত্রী সরিনা বিবিও। সরিনার ডান হাত ভেঙে যায়। মহিমার মাথা ফাটে। নীলিরও মাথায় আঘাত রয়েছে।

রাতেই তাঁদের স্থানীয় খুজুটিপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওই ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বুধবার সকালে সেখান থেকেই মহিমা ও নীলিকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। দুই বোন স্থানীয় নওদা-পালুন্দি হাই মাদ্রাসার ছাত্রী। তাদের পরীক্ষাকেন্দ্র বোলপুর কেন্দ্রডাঙাল হাই মাদ্রাসা। বাড়ি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেন পরিবারের লোকেরা। পরীক্ষার আগেও দুই বোনের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ যায়নি। সঙ্গে আঘাতের যন্ত্রণা তো আছেই। তাদের কথায়, ‘‘কিছু লোক হঠাৎই এসে বাবাকে মারধর করতে শুরু করে। আমরা কান্নাকাটি করে বাবাকে ছেড়ে দিতে বলি। ওরা শোনেনি। আমাদেরও মারধর করে। পরীক্ষা দিতে পারব ভাবতে পারিনি। একটা বছর নষ্ট হয়ে যাবে বলে মাথার যন্ত্রণা নিয়েও পরীক্ষা দিতে এসেছি।’’

তবে, গোটা ঘটনায় ফের একবার নানুরে তৃণমূলের ‘দ্বন্দ্বের’ বিষয়টি সামনে এসেছে বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ। চর্চায় এসেছে অনুব্রত মণ্ডলের অনুগামীদের সঙ্গে কাজল শেখের গোষ্ঠীর ‘বিরোধ’। মুকুল শেখের দাবি, ‘‘আমি দীর্ঘদিন ধরে অনুব্রত মণ্ডলের নেতৃত্বে দল করি। তিনি জেলে যাওয়ার পর থেকে কাজল শেখের লোকেরা আমাকে তাদের কথা মতো চলার জন্য চাপ দিচ্ছিল। আমি অস্বীকার করায় বাড়িতে চড়াও হয়ে হামলা চালিয়েছে।’’

কাজল শেখ অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘‘জেলায় আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই। আমরা সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করি। ওই ঘটনা কী করে ঘটল, তা পুলিশ দেখছে। তদন্ত করে যথাযথ আইনি ব্যবস্থাও নেবে।’’ তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে জানি না। তবে যাই হোক না কেন, এমন ঘটনা অনভিপ্রেত।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nanur Madrasa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE