Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কষ্ট কতটা, জানাতেই পারলেন না তিলকারা

স্যাঁতসেঁতে সেই মেঝেতেই কচিকাঁচাদের নিয়ে ঘর ফের বাসযোগ্য করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। কথা বলে জানা গেল, এখনও পর্যন্ত ওই এলাকায় কোনও ত্রাণ পৌঁছয়নি। শুধু বৃহস্পতিবার সামরিক বাহিনীর তরফে পানীয় জলের পাউচ, বোতল দেওয়া হয়েছে।

সরেজমিন: লাভপুরে ফিরহাদ হাকিম, অনুব্রত মণ্ডল। শুক্রবার বিকেলে। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

সরেজমিন: লাভপুরে ফিরহাদ হাকিম, অনুব্রত মণ্ডল। শুক্রবার বিকেলে। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি

অর্ঘ্য ঘোষ
লাভপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৭ ০১:৫২
Share: Save:

জল সরে যাওয়া গ্রামের উপর দিয়ে গাড়িতে চেপে জল-যন্ত্রণা দেখে গেলেন ফিরহাদ হাকিম। আর দিনভর মন্ত্রীর প্রতীক্ষায় থেকে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরলেন তিলকা বাইতি, চঞ্চল বাগদিরা। লাভপুরে কুঁয়ে নদীর বাঁধ ভেঙে দিন সাতেক জলবন্দি ছিলেন স্থানীয় ঠিবা গ্রামের জলপাড়া, গোমস্তাপাড়া, সাহাপাড়ার বাসিন্দারা। মূল গ্রামের সঙ্গে যোগসূত্র বলতে ছিল লোহার ছোট্ট কড়াই।

শুক্রবার সকাল থেকে অবশ্য ওই তিনটি পাড়া থেকেও জল নামতে শুরু করেছে। কিন্তু, দুর্ভোগ কমেনি। অনেকের বাড়ির ভিতরে এ দিন সকাল পর্যন্ত জল ছিল। স্যাঁতসেঁতে সেই মেঝেতেই কচিকাঁচাদের নিয়ে ঘর ফের বাসযোগ্য করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। কথা বলে জানা গেল, এখনও পর্যন্ত ওই এলাকায় কোনও ত্রাণ পৌঁছয়নি। শুধু বৃহস্পতিবার সামরিক বাহিনীর তরফে পানীয় জলের পাউচ, বোতল দেওয়া হয়েছে।

মন্ত্রী যে আসছেন, প্রশাসন এবং তৃণমূল নেতাদের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই তিলকা বাগদি, চঞ্চল বাগদিদের কাছে সে খবর পৌঁছেছিল। সেই মতো নিজেদের যন্ত্রণার কথা মন্ত্রীকে বলবার জন্য মুখিয়ে ছিলেন জলপাড়ার মানিক বাগদি, মেঘনাদ বাগদি, সাহাপা়ড়ার কবিতা সাহা, গোমস্তাপাড়ার গঙ্গা বাগদি, চায়না বাগদিরা। কিন্তু, সব প্রস্ততিকে ব্যর্থ করে শুক্রবার সন্ধ্যা ছ’টা নাগাদ মন্ত্রীর কনভর তাঁদের সামনে দিয়েই হুস্ করে বেরিয়ে যায়। স্থানীয়েরাও জানালেন, এর আগেও ফিরহাদ হাকিম ওই গ্রামে গিয়েছিলেন। সে বারও জলপাড়ায় ঢোকার মুখ থেকে ঘুরে চলে যান। মানিক, মেঘনাদদের কথায়, ‘‘ফি বছর জলবন্দি হয়ে পড়ি। জল সরলেও ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। প্রশাসনের থেকে যা সাহায্য পাই, তাতে ঘর তৈরি হয় না। ফলে পয়সা কম থাকায় ঘরের মান ক্রমশ খারাপ হতে থাকে। এ বারও গ্রামের অনেকের ঘর ভেঙেছে। সে সব কথা মন্ত্রীকে খুলে বলতে চেয়েছিলাম।’’

একই অভিযোগ, শীতলগ্রামের মহেন্দ্র বাগদি, জ্যোৎস্না বাগদি, প্রসেনজিৎ বাজিকর, চঞ্চল বাজিকরদের। এঁদের অনেকের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। এ দিন গিয়ে দেখা গেল, কেউ গ্রামের ত্রাণশিবির, কেউ স্কুলের মিড-ডে মিল রান্নার জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁরা জানান, পুরো এলাকা জলবন্দি হয়ে থাকায় চাষের কাজ দিন সাতেক বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার থেকে জল সরতে শুরু করলেও জমি এখনও চাষযোগ্য হয়নি। এঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘আমরা দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঠিক মতো খেতেও পাচ্ছি না। সামরিক বাহিনীর জল পোশাক, ছাড়া আমরাও কিছু পাইনি।’’

জমে থাকা ক্ষোভ, অভিযোগের সত্যতা মেনে নিয়েছেন কুরুননাহার পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য জগন্নাথ বাগদিও। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামে জনা পনেরোর বাড়ি ভেঙেছে। পঞ্চায়েতকে জানিয়েছি। এখনও পর্যন্ত কোনও ত্রিপল বা ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া যায়নি।’’ যদিও এ দিন লাঘাটায় দাঁড়িয়ে মন্ত্রী দাবি করেন, ‘‘পর্যাপ্ত ত্রাণ, ত্রিপল, ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। দল, প্রশাসন মানুষের পাশে আছে। কোথাও কোনও ক্ষোভ নেই।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ম্যানমেড বন্যা। ডিভিসি ড্রেজিং করে না। সময় মতো জল ছাড়ে না। তাতেই বন্যা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সে সব রিপোর্ট আছে।’’

পাঁচটা নাগাদ ফিরহাদ পৌঁছন লাঘাটায়। সেখান থেকে খাঁপুরের ভাঙন এলাকা দেখতে যান। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, এসআরডিএ চেয়ারম্যান অনুব্রত মণ্ডল, সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী, লাভপুরের বিডিও জীবনকৃষ্ণ বিশ্বাস। সেখানেও তাঁরা ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মানুষ সন্তুষ, এমন দাবি করেন। কিন্তু, খাঁপুর এলাকাতেই নৌকোয় দশ বস্তা চাল নিয়ে অপেক্ষায় দেখা গেল ওই এলাকারই বাসিন্দা, তৃণমূল কর্মী অজয় মণ্ডলকে। তিনি বলেন, ‘‘আজই প্রথম চাল এল। মন্ত্রীকে দেখানোর জন্য নৌকাকে এখানে রাখা হয়েছে বলেও শুনেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE