Advertisement
E-Paper

স্বাস্থ্য-দত্তক নিতেই রাশ অপুষ্টিতে

সুসংসহত শিশু বিকাশ প্রকল্প দফতরের পাশাপাশি বিডিও-রাও শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বাড়তি পুষ্টির জন্য ছাতু, সয়াবিনের ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং ওষুধের ব্যবস্থা করেছেন।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৮ ০২:০৫

রুগ্‌ণ শিশুদের সুস্থ করতে হাত ধরেছিলেন সরকারি আধিকারিক, জনপ্রতিনিধি, আমজনতা। অপুষ্ট শিশুদের ‘স্বাস্থ্য-দত্তক’ নিয়ে নিয়মিত নজরদারি শুরু করেছিলেন তাঁরা। ফল মিলল সাড়ে তিন মাসেই। স্বাস্থ্য ফিরল অনেক অপুষ্ট শিশুর। মানবাজার মহকুমায় এই স্বাস্থ্য-বদল ঘটানোর নেপথ্যে রয়েছে ‘শিশু সঙ্গী প্রয়াস’ প্রকল্প।

মহকুমা প্রশাসনের নিজস্ব এই প্রকল্পের সাফল্য দেখে উচ্ছ্বসিত স্বাস্থ্য দফতর। স্বস্তিতে শিশুদের অভিভাবকেরাও। মহকুমাশাসক (মানবাজার) সঞ্জয় পাল বলেন, মহকুমা এলাকায় সমস্ত আধিকারিক, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের লাগাতার প্রচেষ্টার ফলে এই সাফল্য মিলেছে। তবে এটা নিরবিচ্ছিন্ন কর্মসূচি। আমরা লেগে থাকব।’’

জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘মানবাজার মহকুমা শিশুদের অপুষ্ট দূরকরণে ভাল কাজ করছে। জেলার অন্য মহকুমাতেও কাজ চলছে। ভালই সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।’’

শুরুটা হয়েছিল ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর। জিতুঝুড়ি গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে মানবাজার মহকুমা প্রশাসনের উদ্যোগে সে দিন ‘শিশু সঙ্গী প্রয়াস’ নামে ওই প্রকল্পের পথ চলা শুরু হয়েছিল। শিশু দিবসে মহকুমা প্রশাসন ও পাঁচটি ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকেরা শপথ নিয়েছিলেন, মানবাজার মহকুমা এলাকায় অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা কমাতে হবে। এ জন্য আধিকারিক থেকে শুরু করে কর্মীরা সকলেই অপুষ্ট শিশুদের স্বাস্থ্য-দত্তক নেন। সে সময়ে এই মহকুমা এলাকায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ছিল ৯১৮ জন। ২৮ ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪০১ জন। অর্থাৎ সাড়ে তিন মাসের লাগাতার প্রচেষ্টায় অপুষ্টির সংখ্যা অর্ধেকেরও কম দাঁড়িয়েছে।

ব্লক সুসংসহত শিশু বিকাশ প্রকল্প আধিকারিক বা সিডিপিও (মানবাজার ১) অনুপ সাহার মতে, ‘‘শিশু বিকাশ প্রকল্পের মাধ্যমেই মা ও শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়। তবুও বিভিন্ন কারণে যে সব শিশু জন্মের পর থেকে অপুষ্টিতে ভুগছে, তাদের জন্যেই এই বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। আমরা ভাল ফল পেয়েছি।’’

কেমন করে অপুষ্টি কমল?

বরাবাজার ব্লকের এক অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর কথায়, ‘‘সময়ের অভাবের অজুহাতে আগে অনেক মা শিশুর খাবার বাড়ি নিয়ে চলে যেতেন। ফলে তিনি সন্তানকে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাবার খাওয়ালেন কি না, তা নিশ্চিত করার উপায় ছিল না। বর্তমানে প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেই শিশুকে খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। এতে ভাল ফল মিলেছে।’’

সুসংসহত শিশু বিকাশ প্রকল্প দফতরের পাশাপাশি বিডিও-রাও শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বাড়তি পুষ্টির জন্য ছাতু, সয়াবিনের ব্যবস্থা করেছেন। এ ছাড়া ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং ওষুধের ব্যবস্থা করেছেন।

মানবাজার ১ ব্লক আইসিডিএস-র ফিল্ড ফেসিলিটার সোমা দত্ত বলেন, ‘‘মায়ের সচেতনতার অভাব শিশুর অপুষ্টির অন্যতম কারণ। ‘শিশু সঙ্গী প্রয়াস’ প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী, অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত রোজ একটি গোটা সিদ্ধ ডিম এবং একটি করে পাকা কলা দেওয়া হচ্ছে।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এক দিন থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বরের হিসেব অনুযায়ী, মানবাজার মহকুমায় অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা ছিল ব্লক অনুযায়ী— মানবাজার ১: ১৫৫, মানবাজার ২: ১৫১, পুঞ্চা: ১৪৯, বান্দোয়ান: ২১৬ ও বরাবাজার: ২৪৮ জন। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারির পরিসংখ্যান অনুযায়ী— মানবাজার ১: ৭৪, মানবাজার ২: ৬৬, পুঞ্চা: ৫৫, বান্দোয়ান: ১৫১ ও বরাবাজার: ৮৪ জন।

মঞ্জুশ্রী সিংহ মহাপাত্র, হেনা মিশ্রদের মতো প্রকল্পের সুপারভাইজররা জানাচ্ছেন, সাধারণত সময়ের আগেই প্রসব হওয়া, গর্ভবতীর অপুষ্টি এবং গর্ভবতী থাকাকালীন অনিয়ম— ইত্যাদি নানা কারণে অপুষ্ট শিশু জন্ম গ্রহণ করে। জন্মের সময় শিশুর ওজন আড়াই কেজি হলে সেই শিশুকে স্বাভাবিক ধরা হয়। তার কম ওজন হলে তাকে অপুষ্ট শিশু হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রশাসনিক ভাবে, স্বাভাবিক ওজনের শিশুদের সবুজ রঙে চিহ্নিত করা থাকে। ওজন কম হলে হলুদ এবং আশঙ্কাজনক শিশুদের লাল রঙের মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়। ‘শিশু সঙ্গী প্রয়াস’ প্রকল্পের মাধ্যমে এই লাল বাচ্চাদের স্বাভাবিক ওজনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

মানবাজার মহকুমায় বর্তমানে কমবেশি প্রায় ৫৩ হাজার ৮০০ জন শিশু রয়েছে। তার মধ্যে ৪০১ জন শিশু অপুষ্টিতে আক্রান্ত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের নিয়ে কী হবে? মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৪০১ জন শিশুর মধ্যে ১১ জন শিশুকে পুষ্টি পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শিশুদের অপুষ্টি দূরীকরণে তারা কোনও ফাঁক রাখতে চান না।

মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘যে শিশুগুলির অপুষ্ট দূর হয়েছে তাঁদের জন্য বিশেষ খাবার দেওয়া বন্ধ হলেও নজরদারি থাকবে। অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যেই তাদের খাবার খাওয়াতে হবে।’’

Nutrition Malnutrition
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy