Advertisement
০৫ মে ২০২৪

অন্নপূর্ণা সেবায় স্পেশ্যাল মেনু

মহালয়ার দিন থেকেই ঝালদার টেম্পো গলির ‘অন্নপূর্ণা সেবা’র হেঁশেলে মধ্যাহ্নভোজনে ভাল-মন্দ খাওয়াদাওয়া শুরু হয়েছে। দেবীপক্ষের প্রথম দিন পাতে লুচি, ছোলার ডাল, আলুরদম, জিলিপি, টম্যাটোর চাটনি পেয়ে হাসি আরও চওড়া হয়েছে মানুষগুলির মুখে।

পাত-পেড়ে: চলছে পরিবেশন। নিজস্ব চিত্র

পাত-পেড়ে: চলছে পরিবেশন। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
ঝালদা শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩১
Share: Save:

বছরের ৩৬৫ দিনই পাত পড়ে। কিন্তু, পুজোর দিনেও দুঃস্থ মানুষগুলির পাতে কি সাদামাটা ভাত, ডাল, ভাজা, তরকারি, চাটনি দেওয়া যায়? মোটেই নয়। তাই মহালয়ার দিন থেকেই ঝালদার টেম্পো গলির ‘অন্নপূর্ণা সেবা’র হেঁশেলে মধ্যাহ্নভোজনে ভাল-মন্দ খাওয়াদাওয়া শুরু হয়েছে। দেবীপক্ষের প্রথম দিন পাতে লুচি, ছোলার ডাল, আলুরদম, জিলিপি, টম্যাটোর চাটনি পেয়ে হাসি আরও চওড়া হয়েছে মানুষগুলির মুখে।

২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবসে এলাকার দুঃস্থদের পঙ্‌ক্তিভোজ করানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন কয়েকজন। তাঁদের মধ্যে মূল উদ্যোগী ছিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলর মহেন্দ্রকুমার রুংটা। তাঁর কথায়, ‘‘সে দিন খাওয়াদাওয়ার পরে মানুষগুলোর খুশি খুশি মুখ দেখে অনেকের মন ভরে যায়। তখনই ঠিক হয়েছিল, রোজ ওঁদের খাওয়াতে পারলে কেমন হয়। দেখতে দেখতে কিছু টাকাও জোগাড় হয়ে যায়। ইতিমধ্যে অনেকে সন্তানের জন্মদিন বা বিশেষ দিনেও এই মানুষগুলিকে খাওয়াতে এগিয়ে আসেন। সেই যে শুরু হয়েছিল, আর থামেনি।’’ তিনি জানান, গোড়ার দিকে ৩৮ জনের মতো আসতেন। এখন সংখ্যাটা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। শুধু ঝালদার বা পুরুলিয়া জেলার মানুষজনই নয়, ভিন্‌ রাজ্যেরও অনেকেও প্রতি দিনের খরচ ঠিক জুটিয়ে দিচ্ছেন।

মহেন্দ্রবাবু জানান, মহালয়া থেকেই কিছু বিশেষ পদ পাতে দেওয়া শুরু হয়েছে। আজ ষষ্ঠী থেকে আরও ভাল খাবার দেওয়া হবে। তাঁরা ঠিক করেছেন, পুজোর দিনগুলিতে লুচি, আলুরদম, ছোলার ডাল, বোঁদে, পায়েস, মিষ্টি, চাটনি মেনুতে থাকছে। নবমীতে ভাত, ডাল, সব্জির সঙ্গে মাছের কালিয়া দেওয়া হবে। উদ্যোক্তাদের তরফে দীপক চন্দ্র, সোমনাথ পোদ্দার বলেন, ‘‘ওঁদের বলা আছে, পুজোর সময় অন্য কিছু খেতে ইচ্ছে করলে তা যেন জানান। আমরা তাঁদের ইচ্ছাপূরণের চেষ্টা করব।’’

কারা আসেন এখানে?

কারও ভিক্ষা করে দিন চলে। কেউ বা ঘুঁটে বেচে কোনও রকমে দু’টো পয়সা রোজগার করেন। কেউ স্বামীকে হারিয়েছেন, এখন দেখার আর কেউ নেই। এমন রোজনামচায় রোজ যে খাবার জুটবে, এমন বিশ্বাসটাই হারিয়ে ফেলেছিলেন ওঁরা। ঝালদার বাসিন্দা মুক্তিনাথ মল্লিকদের একসময়ে মিষ্টির দোকান ছিল। কম বয়েসে তিনি বাবাকে হারান। তারপরে তাঁদের সুদিন হারায়। প্রৌঢ় মুক্তিনাথবাবু এখন ট্রেনে ভিক্ষা করেন। কোনও দিন এক বেলা বা আধ বেলা পেট ভরত। এখন অন্নপূর্ণা সেবা তাঁর এক বেলার খাবার সুনিশ্চিত করেছেন। তাঁর মতোই দৃষ্টিহীন স্বামী উদ্ধব ধীবরের হাত ধরে আসা বুধি ধীবর, উমা রাজোয়াড়, মঙ্গলা কর্মকারদের সহায় হয়ে উঠেছে এই হেঁশেল। পালা-পার্বনে রোজকার খাবারের মেনু বদলায় ওঁদের। তাই উৎসবের দিকে তাকিয়ে থাকেন তাঁরা।

ঝালদার বাসিন্দা স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শেখ সুলেমান বলেন, ‘‘এত ভাল উদ্যোগ। পাশে দাঁড়াতে পারলে নিজের মধ্যেই একটা ভাললাগা তৈরি হয়।’’ ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার বলেন, ‘‘ওই সংস্থা সারা বছর তো বটেই, পুজোর সময়েও নিরন্ন মানুষগুলোর মুখে যে ভাবে আনন্দ ফিরিয়ে দিয়েছে, আনন্দময়ীর আগমনে এর থেকে বড় কাজ আর কী হতে পারে?’’

উমার একমাত্র মেয়ে মীরা পঙ্গু হয়ে শয্যাশায়ী। উমা বলেন, ‘‘মেয়েটা বিছানা ছাড়তে পারে না। তার জন্য খাবার নিয়ে যাই। পুজোর সময় একটু ভালমন্দ তুলে দিতে পারলে বড় ভাল লাগে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Food Durga Puja 2018 Special Menu
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE