Advertisement
০৬ মে ২০২৪

বাঁকুড়ায় ১৪০০ টন আলু কিনবে প্রশাসন

সাড়ে পাঁচ টাকা কেজি দরে চাষিদের কাছ থেকে ১৪০০ মেট্রিক টন আলু কিনতে নামছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। আজ বুধবার থেকেই জেলার হিমঘরগুলির সামনে শুরু হবে আলু কেনা। মঙ্গলবার আলু কেনা সংক্রান্ত একটি বৈঠকের পরে এ কথা ঘোষণা করেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী।

আলুর দাম বৃদ্ধির দাবিতে রাইপুরে অবরোধ।—নিজস্ব চিত্র।

আলুর দাম বৃদ্ধির দাবিতে রাইপুরে অবরোধ।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও রাইপুর শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০১:১৭
Share: Save:

সাড়ে পাঁচ টাকা কেজি দরে চাষিদের কাছ থেকে ১৪০০ মেট্রিক টন আলু কিনতে নামছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। আজ বুধবার থেকেই জেলার হিমঘরগুলির সামনে শুরু হবে আলু কেনা। মঙ্গলবার আলু কেনা সংক্রান্ত একটি বৈঠকের পরে এ কথা ঘোষণা করেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী। যদিও প্রতি ক্যুইন্টাল আলু ৮০০ টাকা দরে (কেজিতে ৮ টাকা) সরকারকে কিনতে হবে বলে দাবি করে সিপিএমের কৃষক সংগঠন সারা ভারত কৃষক সভা এ দিনই রাইপুরের সবুজবাজারে বাঁকুড়া-ঝাড়গ্রাম রাজ্য সড়ক অবরোধ করেছে।

জেলাশাসক বলেন, “জেলার সবক’টি ব্লকেই আলু কেনা হবে। তবে উত্‌পাদনের ভিত্তিতে কোন ব্লকে কতটা আলু কেনা হবে তা ঠিক করা হয়েছে। কেজি পিছু পাঁচ টাকা দরে জেলা জুড়ে ১৪০০ মেট্রিক টন আলু কেনা হবে। সেই সঙ্গে পরিবহণের খরচ বাবদ কেজিতে ৫০ পয়সা ভর্তুকি দেওয়া হবে।” তিনি জানান, সরকার ওই আলু কিনে মিড-ডে মিল ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে পাঠাবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সবচেয়ে বেশি আলু কেনা হবে কোতুলপুর, জয়পুর, পাত্রসায়র ও সোনামুখী ব্লকে। হিড়বাঁধ, রানিবাঁধ, শালতোড়া, ছাতনা, মেজিয়াতে আলুর চাষ তুলনামূলক কম হওয়ায় সেখানে কম পরিমাণে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

এ দিনের বৈঠকে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় ছিলেন আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও হিমঘর মালিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরাও। বৈঠকে জেলা প্রশাসন চাষিদের কাছ থেকে কেনা আলু রাখার জন্য হিমঘর মালিকদের দুই শতাংশ জায়গা দেওয়ার কথা বলে। হিমঘর মালিক সমিতি এই প্রস্তাবে রাজি হয়। তবে শুক্রবারের মধ্যে হিমঘরে আলু মজুত করার কথা বলা হয়েছে। জেলার হিমঘর মালিক সংগঠনের সভাপতি দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শুক্রবারের পরে হিমঘরে কর্মী থাকবে না। তারা সবাই বাড়ি চলে যাবে। এমনিতেই আলু মজুত করার সময়সীমা পার হয়ে গিয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের জন্যই আমরা শুক্রবার পর্যন্ত মেয়াদ বাড়িয়েছি।”

গত রবিবার থেকেই জেলার হিমঘরগুলিতে সরকারি মূল্যে আলু কেনার আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলাশাসক। তবে তা এখনও শুরু হয়নি। তা নিয়ে ক্ষোভ ছড়ায় জেলার চাষিদের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে জেলার ১২টি হিমঘরে বিদ্যুত্‌ সংযোগ না থাকার কারণ উল্লেখ করে আলু মজুতের জায়গার অভাব রয়েছে বলে তখন জানিয়েছিলেন জেলাশাসক। জানিয়েছিলেন, সোমবার আলু কেনা শুরু হবে। কিন্তু তাও হয়নি। ইতিমধ্যেই জেলা শাসকের উদ্যোগে ছ’টি হিমঘরে বিদ্যুত্‌ সংযোগ দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বুধবারই আরও দু’টি হিমঘরে বিদ্যুত্‌ সংযোগ হয়ে যাওয়ার কথা। দিলীপবাবু বলেন, “জেলা প্রশাসন চাইলে আমরা আলু রাখার জন্য তাঁদের আরও বাড়তি জায়গা দিতে প্রস্তুত আছি।”

এক ঝলকে

• আজ বুধবার থেকে জেলার প্রতিটি হিমঘরে আলু কিনতে নামছে সমবায়গুলি। যে ব্লকে হিমঘর নেই, সেখানকার চাষিরা নিকটবর্তী হিমঘরে আলু বিক্রি করতে পারবেন।

• পাঁচ টাকা কেজি দরে আলু কেনা হবে। পরিবহণ খরচ বাবদ দেওয়া হবে কেজি প্রতি ৫০ পয়সা।

• যাঁদের ১০০ বস্তা আলু ফলেছে, তাঁদের কাছে ১০ বস্তা পর্যন্ত কেনা হবে। আর যাঁদের ২০০ বস্তা পর্যন্ত আলু হয়েছে, তাঁদের ২০ বস্তা আলু কেনা হবে।

• আলু কেনার পরে চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, এই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চাষিরা হিমঘরে আলু রাখায় সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। এ দিনের বৈঠকে সেই প্রসঙ্গটি তুলে ‘আলু রাখার বিষয়ে চাষিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে’ বলে হিমঘর মালিকদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, “চাষিদের স্বার্থ সবার আগে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দিয়ে চাষিদের ঘুরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে হিমঘর থেকে। তাই আমি এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছি।”

এ দিন সকাল ১১টা থেকে রাইপুরের সবুজবাজারে রাস্তা আটকে অবরোধ শুরু করে সারা ভারত কৃষক সভা। দাবি জানায়, সরকারি সহায়ক মূল্যের থেকে আরও বেশি দামে চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনতে হবে। সেই সঙ্গে আরও বেশি দামে ও বেশি পরিমাণে ধান কেনা এবং শস্যবিমার টাকা চাষিদের সময়মতো ফেরানোর দাবি করা হয়েছে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে দুপুর ১২টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।

কৃষকসভার রাইপুরের সভাপতি বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন, “এলাকার চাষিদের কাছ থেকে সরকারি সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কাজ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বাজারে আলুর দামও নেই। ফলে চাষিরা চরম আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন। তাই ধানের সহায়ক মূল্য প্রতি ক্যুইন্টাল ১৩৬০ টাকা করার দাবি জানিয়েছি। আলুও ৮০০ টাকা প্রতি ক্যুইন্টাল দরে চাষিদের কাছ থেকে কেনার দাবি জানিয়েছি।” এই অবরোধের জেরে বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের মধ্যে সংযোগ রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চলাচল করেনি। দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষজন। রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, “বিভিন্ন চালকল ও অত্যাবশ্যক পণ্য সরবরাহ নিগমের তরফে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা হয়েছে। এ বার সরকারি দামে সমবায় সমিতির মাধ্যমে এবং মিড ডে মিলের জন্য আলু কেনার কাজ শুরু হবে।” জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ধান ও আলুর সহায়ক মূল্য বাড়ানোর ক্ষমতা স্থানীয় স্তরে কারও নেই। বিষয়টি রাজ্যস্তরের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bankura and raipur potato 1400 tonne
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE