Advertisement
০৬ মে ২০২৪

মডেল স্কুল পাশেই, তবু দূরে পাড়ি

বর্তমানে কমলপুর নেতাজি হাইস্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ২১০০। মেজিয়ার কালীদাসপুর এলাকায় গড়া হয়েছে মডেল স্কুল। স্থানীয় ছেলে মেয়েরা প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে যায় ভাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতনে পড়তে। ভাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতনের এখন প্রায় ৫৩৫ জন পড়ুয়া রয়েছে।

খাঁ-খাঁ: জেলার এক ম়ডেল স্কুলের ক্যাম্পাস। নিজস্ব চিত্র

খাঁ-খাঁ: জেলার এক ম়ডেল স্কুলের ক্যাম্পাস। নিজস্ব চিত্র

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫৪
Share: Save:

গ্রামেই রয়েছে আধুনিক ধাঁচে গড়া ঝাঁ চকচকে মডেল স্কুল। কিন্তু পড়ুয়া সেই কয়েক কিলোমিটার দূরের হাইস্কুলে যাচ্ছে এখনও।

প্রত্যন্ত এলাকার পড়ুয়ারা যাতে ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া করার সুযোগ পায় সেই লক্ষ্যে, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বাঁকুড়ার বিভিন্ন ব্লকে গড়ে উঠেছে মডেল স্কুল। কিন্তু পড়ুয়া টানতে সেগুলির ব্যর্থতা ক্রমশ সামনে চলে আসছে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে প্রশাসনের অন্দরেও।

বাঁকুড়া সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৩ সালে জেলার মেজিয়া, ছাতনা ও ওন্দা ব্লকে মডেল স্কুল চালু হয়। ২০১৪ সালে চালু হয় পাত্রসায়র ব্লকে। ২০১৫ সালে হিড়বাঁধ ও রানিবাঁধে। আর ২০১৬ সাল থেকে পড়াশোনা শুরু হয়েছে শালতোড়া ব্লকের মডেল স্কুলে। ইঁদপুর ব্লকেও একটি মডেল স্কুল গড়ার কাজ প্রায় শেষের মুখে। এই স্কুলগুলিতে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। রাজ্য সরকারের বোর্ডে ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা হয়।

কিন্তু ছাত্র সংখ্যা?

মেজিয়া, ওন্দা, ছাতনা ব্লকের মডেল স্কুলগুলিতে এখন নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া রয়েছে। জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী— মেজিয়া মডেল স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৮১। ছাতনা মডেল স্কুলে ৫৯। ওন্দায় ৪৫। পাত্রসায়র, রানিবাঁধ, হিড়বাঁধ এবং শালতোড়া ব্লকের মডেলস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া রয়েছে। সংখ্যাটা হল— হিড়বাঁধে ২২। রানিবাঁধে ১৮। শালতোড়ায় ৪০। আর পাত্রসায়রে মাত্র চারজন। তবে জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের দাবি, সদ্য পাত্রসায়র ব্লকের মডেল স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বেড়েছে।

ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকা বেছে মডেল স্কুলগুলি বানানো হয়েছে। তা সত্বেও কেন পড়ুয়ারা নানা ঝক্কি করে কয়েক কিলোমিটার উজিয়ে অন্য স্কুলে যাচ্ছে, গোড়ার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটিই। ছাতনা ব্লকের কুখড়িবাসা এলাকায় গড়া হয়েছে ব্লকের মডেল স্কুলটি। ওই এলাকার পড়ুয়ারা প্রায় ২ কিলোমিটার দুরের কমলপুর নেতাজি হাইস্কুলে পড়তে যায় এখনও। বর্তমানে কমলপুর নেতাজি হাইস্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় ২১০০। মেজিয়ার কালীদাসপুর এলাকায় গড়া হয়েছে মডেল স্কুল। স্থানীয় ছেলে মেয়েরা প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে যায় ভাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতনে পড়তে। ভাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতনের এখন প্রায় ৫৩৫ জন পড়ুয়া রয়েছে।

এই ব্যাপারে নেতাজি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ রক্ষিতকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘অভিভাবকদের আশঙ্কা, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা মাধ্যমে পড়ার পরে ছেলে মেয়েরা ইংরেজি মাধ্যমে মানিয়ে নিতে পারবে কি না তা নিয়েই।’’ ভাড়া মাধ্যমিক বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক প্রদীপকুমার চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘মডেল স্কুলটি যে এলাকায় গড়া হয়েছে সেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। সেটাই বড় সমস্যা।’’

প্রশাসন ও জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরের কর্তাদের অনেকেই আবার মডেল স্কুলে পড়ুয়া কম হওয়ার জন্য স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না হওয়াকেই দায়ি করছেন। তাঁরা জানাচ্ছেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে মডেল স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ হওয়ার কথা। প্রতিটি স্কুলের জন্য ২৪ জন শিক্ষকের পদ রয়েছে। অথচ মেজিয়া মডেল স্কুলে ৫ জন, ওন্দা মডেল স্কুলে ৩ জন, ছাতনা মডেল স্কুলে ৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। পাত্রসায়র, রানিবাঁধ, হিড়বাঁধ ও শালতোড়া ব্লকের মডেল স্কুল গুলিতে মাত্র ১ জন করে স্থায়ী শিক্ষক রয়েছেন। খামতি মেটাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অস্থায়ী শিক্ষক দিয়ে পড়াশোনা চালানো হচ্ছে ওই স্কুলগুলিতে। এই সমস্ত দেখেও অনেক অভিভাবক মডেল স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করছেন প্রশাসনের আশিকারিকদের একাংশ। তবে তাঁদের দাবি, ধাপে ধাপে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের কাজ চলছে ম়়ডেল স্কুলগুলিতে।

এই পরিস্থিতিতে মডেল স্কুলে পড়ুয়া টানতে যৌথ ভাবে প্রচার চালাচ্ছে সর্বশিক্ষা মিশন ও জেলা স্কুল শিক্ষা দফতর। বিভিন্ন গ্রামে যাচ্ছেন আধিকারিকেরা। প্রচারের কাজ করার জন্য মহকুমাশাসকদের নেতৃত্বে জেলার তিনটি মহকুমা স্তরে কমিটি গড়া হয়েছে। এ ছাড়াও স্কুলগুলির তরফে এলাকায় মাইকে প্রচার এবং লিফলেট বিলি করা হচ্ছে।

বাঁকুড়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পঙ্কজ সরকারের কথায়, ‘‘ছাত্রছাত্রী কম ভর্তি হচ্ছে মডেল স্কুলগুলিতে। এটা একটা সমস্যা ঠিকই। তবে সাধারণ মানুষ ধীরে ধীরে এ নিয়ে সচেতনও হচ্ছেন।’’ বাঁকুড়া সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পের আধিকারিক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সদ্য পথ চলা শুরু করেছে স্কুলগুলি। প্রথমে সাধারণ মানুষের বুঝতে হয়তো একটু অসুবিধে হচ্ছে। তবে প্রতি বছরই ছাত্রছাত্রী ভর্তির হার ধীরে হলেও বাড়ছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে সেই হার যাতে দ্বিগুণ হয় সেই লক্ষ্যেই প্রচার চালাচ্ছি আমরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE