Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Strike

ধর্মঘটের প্রভাব পড়ল না সর্বত্র

বামেদের দাবি ছিল, গত কয়েকদিন ধরে সর্বত্র ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচারে ভাল সাড়া মিলেছে। তাই আমজনতাই এ দিন ধর্মঘট করবেন। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা বিশেষ দেখা যায়নি।

দিনভর: বাঁকুড়ার মুখ্য ডাকঘর খোলাচ্ছেন বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। (ইনসেটে) তবে গরহাজির ছিলেন অনেক কর্মীই। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

দিনভর: বাঁকুড়ার মুখ্য ডাকঘর খোলাচ্ছেন বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার। (ইনসেটে) তবে গরহাজির ছিলেন অনেক কর্মীই। ছবি: অভিজিৎ সিংহ

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২০ ০২:০৮
Share: Save:

ধর্মঘটে জোর খাটানো হলে তা রুখে দেওয়ার জন্য তৈরি ছিল পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু বুধবার সকালে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলার অনেক জায়গায় ধর্মঘটের সমর্থনকারীদের সে ভাবে পথে দেখা গেল না। মোটের উপরে এ দিন দুই জেলার অল্প কিছু এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘট। যদিও ধর্মঘট সর্বাত্মক হয়েছে বলে দাবি বাম নেতৃত্বের।

বামেদের দাবি ছিল, গত কয়েকদিন ধরে সর্বত্র ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচারে ভাল সাড়া মিলেছে। তাই আমজনতাই এ দিন ধর্মঘট করবেন। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা বিশেষ দেখা যায়নি। খুব সকালে বিষ্ণুপুর রসিকগঞ্জের বাসস্ট্যান্ডে সিটু, কৃষকসভা ও আইএনটিইউসি-র কর্মীরা গিয়ে সরকারি বাস আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন। বিষ্ণুপুর চকবাজারে যাওয়ার পথে আনাজ বিক্রেতাদের আটকানো হয় রসিকগঞ্জে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের সরিয়ে দেয়।

সকালে পুরুলিয়া স্টেশনের কাছে ধর্মঘটের সমর্থনকারীরা রেললাইন অবরোধ করেন। তার জেরে পুরুলিয়া স্টেশনে প্রায় আধ ঘণ্টা আটকে যায় তিনটি এক্সপ্রেস ট্রেন। পরে অবরোধকারীদের সরায় আরপিএফ। ছাতনা স্টেশনেও সকালে কিছুক্ষণ অবরোধে আটকে যায় আদ্রা-মেদিনীপুর লোকাল। জিআরপি অবরোধ তোলে। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে ধর্মঘটের সমর্থনে এসইউসি জমায়েত করলে পুলিশ বাধা দেয়। দু’পক্ষের ধস্তাধস্তি বাধে। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও বলেন, “পরিস্থিতি সামলাতেই কয়েকজনকে আটক করা হয়।’’ পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগান জানান, ছ’জনকে সতর্কতামূলক গ্রেফতার করা হয়।

দুই জেলার অধিকাংশ ব্যাঙ্ক, ডাকঘর এ দিন খোলেনি। বাঁকুড়ার সাংসদ বিজেপির সুভাষ সরকার জেলা মুখ্য ডাকঘরে গিয়ে দরজা খোলেন। যাঁরা কাজে যোগ দেননি রেজিস্ট্রারে তাঁদের অনুপস্থিত করা হয়। সাংসদ বলেন, “বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।” বাঁকুড়ার ডাক বিভাগের সিনিয়র সুপারিন্টেডেন্ট রামেশ্বর দয়াল বলেন, “কর্মীরা যোগ না দেওয়ায় মুখ্য ডাকঘর খোলা যায়নি।’’ জেলা মুখ্য ডাকঘরে আধারকার্ড সংশোধন করাতে এসেছিলেন ছাতনার শুশুনিয়ার দম্পতি মহাদেব মুর্মু ও যশোবতী মুর্মু। তাঁদের ক্ষোভ, “সরকার বলেছিল সব দফতর খোলা থাকবে। সেই আশাতেই এসেছিলাম। কিন্তু এসে ভুগতে হল।’’

বেসরকারি বাস চলাচল নিয়ে আগেই সংশয়ের কথা শুনিয়েছিলেন বাস মালিকেরা। বাস্তবে এ দিন দুই জেলায় বেসরকারি বাস প্রায় নামেনি বললেই চলে। বাঁকুড়া জেলা বাসমালিক কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি অঞ্জন মিত্র বলেন, “অধিকাংশ বাসকর্মী কাজে যোগ না দেওয়ায় অনেক বাস চালানো যায়নি।”

এ দিন সিধো কানহো বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলিতে স্মাতক স্তরের পাশ ও অনার্সের তৃতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক সুবলচন্দ্র দে বলেন, ‘‘সব কলেজেই নির্বিঘ্নেই পরীক্ষা হয়েছে। প্রশাসনকে আগাম জানানোয় রাস্তায় বাস ও অন্য গাড়িও ছিল।’’ বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলিতেও এ দিন স্নাতক স্তরের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা নির্বিঘ্নে হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরীক্ষা নিয়ামক সর্বজিৎ বিশ্বাস।

সরকারি অফিসগুলি কর্মীদের হাজিরাও স্বাভাবিক ছিল বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস ও পুরুলিয়ার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার। স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। বাজার-হাটও অধিকাংশ জায়গায় খোলা ছিল। তবে দোকানপাট বন্ধ ছিল বরাবাজার, চেলিয়ামা, পাড়া, ঝালদা এলাকায়। বরাবাজার, চেলিয়ামা ও পাড়ায় সিপিএমের প্রভাব কিছুটা রয়েছে। ঝালদায় রয়েছে কংগ্রেসের সমর্থন।

যদিও সিপিএমের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের দাবি, ‘‘আদ্রা, কাশীপুর বাদে জেলার প্রায় সর্বত্রই ধর্মঘট সর্বাত্মক হয়েছে। আগেই ঠিক হয়েছিল, গা-জোয়ারি করে ধর্মঘট আমরা করব না। মানুষ নিজে থেকেই সাড়া দিয়েছেন।’’ বাঁকুড়ার সিটুর জেলা সম্পাদক সৌমেন্দু মুখোপাধ্যায় থেকে এসইউসির জেলা কমিটির সদস্য স্বপন নাগের দাবি, ‘‘সারা জেলায় বাজারহাট খোলেনি। পরিবহণ স্তব্ধ ছিল।’’ তবে পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর দাবি, ‘‘হামলার ভয়ে রাস্তায় বেসকারি বাস নামেনি। ধর্মঘট যে সমস্যার সমাধান করতে পারে না, তা মানুষ বুঝে গিয়েছেন। তাই প্রভাব পড়েনি।’’

আদ্রার আনাজ বিক্রেতা সবিতা মোদক, নিতুড়িয়ার দিনমজুর বাবলু বাউরিরা বলছেন, ‘‘ধর্মঘট করলে হয়ত ভবিষ্যতে গরিব-গুর্বোদের দাবি মিটবে। কিন্তু, আজ কাজে না গেলে কাল কী খাব? তাই বেরিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Strike Bandh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE