Advertisement
২৩ মে ২০২৪

মাঠে চাষের কাজ সামলেও উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৪ শতাংশ

জমিতে ধান রোয়ার কাজ করে বাড়ি ফিরে দ্রুত তৈরি হয়ে নিয়ে স্কুলের পথে ছুটতে হত মেয়েটিকে। বাড়ি তখন ফাঁকা। বাবা-মা দু’জনেই মাঠে কাজ করছেন। না করলে সংসারে হাঁড়ি চড়বে না।

উজ্জ্বলা গড়াই। —নিজস্ব চিত্র

উজ্জ্বলা গড়াই। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৬ ০৩:০৫
Share: Save:

জমিতে ধান রোয়ার কাজ করে বাড়ি ফিরে দ্রুত তৈরি হয়ে নিয়ে স্কুলের পথে ছুটতে হত মেয়েটিকে। বাড়ি তখন ফাঁকা। বাবা-মা দু’জনেই মাঠে কাজ করছেন। না করলে সংসারে হাঁড়ি চড়বে না।

একা নয়, ছোট বোনকেও স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি করাতে হত। তার পরে রাতে জল ঢেলে রাখা ভাত কোনও রকমে নাকেমুখে গুঁজে ছুটতে ছুটতে স্কুলে যেত দু’জনে। প্রায়ই দেরি হয়ে যেত ক্লাসে ঢুকতে। স্কুল তো আর বাড়ির কাছে নয়। তাদের গ্রাম সুতাবই থেকে কমবেশি সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে, তালাজুড়ি শ্রীমতী উচ্চ বিদ্যালয়।

ঘরের কাজ, মাঠে চাষের কাজ— সব সামলে উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে কাশীপুর থানার সুতাবই গ্রামের উজ্জ্বলা গড়াই। ওই গ্রামেই থাকেন পুরুলিয়ার লোকসংস্কৃতি গবেষক দিলীপ গোস্বামী। উজ্জ্বলার ফল নিয়ে উচ্ছ্বসিত তিনিও। বলেন, ‘‘লক্ষ্যে অবিচল থাকলে অভাব যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না উজ্জ্বলা তার উদাহরণ।’’

কলা বিভাগের উজ্জ্বলা উচ্চমাধ্যমিকে পেয়েছে ৮৪ শতাংশ নম্বর। বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। সহায়ক বইপত্র তো দূরের কথা, সব বিষয়ে পাঠ্য বইও ছিল না তার। উজ্জ্বলা বলে, ‘‘বাবার খুবই সামান্য রোজগার। সংসারই চলে না। স্কুলে স্যারেরা পড়া দেখিয়ে দিতেন। তাঁরাই বই দিয়ে অনেক সাহায্য করেছেন।’’

ধান রোয়া থেকে শুরু করে ধান কাটা, ঝাড়া-সহ চাষের পুরো মরসুম জুড়ে বাবা-মার সঙ্গে মাঠে কাজ করত উজ্জ্বলা। পড়াশোনার করত কখন? মেধাবী মেয়েটি বলে, ‘‘রাত তিনটের সময়ে উঠতাম। তারপরে পড়াশোনা সেরে সকাল সকাল বাবা-মার সঙ্গে কাজে বেরিয়ে যেতাম। বাবার বয়স হয়েছে। কাজ করতে কষ্ট হয়।’’ কাজ করে ফিরতে ফিরতে বেলা প্রায় সাড়ে ৯টা বেজে যেত। যখন চাষের কাজ থাকত না, খুদে পড়ুয়াদের পড়িয়ে হাতে কিছু টাকা আসত। সেই টাকাও চলে যেত খাতা কলম কিনতেই।

তালাজুড়ি শ্রীমতী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিনয় দাস বলেন, ‘‘উজ্জ্বলা খুবই অভাবী পরিবারের মেয়ে। কষ্ট করে লেখাপড়া করেছে। পড়াশোনার পাশাপাশি ওর ব্যবহারও খুবই ভাল। আমরা সাধ্যমত সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। ও কলেজে ভর্তি হলেও আমরা পাশে থাকার চেষ্টা করব।’’

উজ্জ্বলার চায় শিক্ষক হতে। বলে, ‘‘কলেজে পড়ার খরচ আসবে কোথা থেকে, তা ভেবে কূল পাচ্ছি না। উচ্চমাধ্যমিক পড়ার চেয়ে স্নাতক স্তরে পড়াশোনার খরচ অনেক বেশি।’’ মার্কশিট উজ্জ্বল হলেও সামনের আঁধার কী ভাবে কাটবে জানে না মেধাবী মেয়েটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

HS result Gun-fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE