এই স্কুল নিয়েই তৈরি হয়েছে জট। —ফাইল চিত্র
রাস্তা সম্প্রসারণের জেরে ভাঙা পড়বে স্কুলের একাংশ। পূর্ত দফতরের কাছ থেকে এমন নোটিস পেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হল রামপুরহাটের বড়শাল প্রাথমিক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। স্কুল ভবন বাঁচাতে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্পিড পোস্টে চিঠি দিল তারা। স্কুলের সঙ্গে জড়িতদের একাংশের প্রস্তাব, রাস্তা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে স্কুলের উল্টো দিকের জমি নেওয়া হোক। তা হলে স্কুলের একাংশ আর ভাঙার প্রয়োজন পড়বে না।
জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান রাজা ঘোষ বলেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ তাঁদের অসুবিধার দিকগুলি জানিয়ে আমার কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। জেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখার জন্য জানিয়েছি। কিন্ত তাঁদের কাছ থেকে এখনও উত্তর পাইনি।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি রামপুরহাট–সাঁইথিয়া সড়কের রামপুরহাটের মনসুবা মোড় থেকে তারাপীঠ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। ওই রাস্তার গা ঘেঁষেই রয়েছে দক্ষিণ চক্রের অন্তর্গত ওই স্কুল। পূর্ত দফতরের দাবি, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর মাপজোক করে দেখেছে স্কুলটি প্রায় ২৮ বর্গফুট জমি দখল করে রেখেছে। আর সেই অংশের উপরের নির্মাণ না ভাঙলে রাস্তাটি সেই সংকীর্ণই থেকে যাবে। দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বাড়বে। তাই সম্প্রতি স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) তথা তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের মুখ্য কার্য্য নির্বাহী আধিকারিক উমাশঙ্কর এস, পূর্ত দফতরের (সড়ক) জেলা মুখ্য নির্বাহী বাস্তুকার আজফার আলি। তাঁরা বৈঠকে রাস্তা সম্প্রসারণের জন্যে স্কুলের ওই অংশ ভাঙার প্রস্তাব দেন।
স্কুল সূত্রের খবর, পূর্ত দফতরের প্রস্তাব মানতে হলে মিড-ডে মিলের ঘর, প্রথম শ্রেণির ক্লাসঘর, মেয়েদের শৌচাগার, এমনকী, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়াদের একটি ক্লাসঘরের একাংশ ভাঙা পড়বে। কোপ পড়বে খেলার জায়গাতেও। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে পড়ুয়ারা তাদের দুশ্চিন্তার কথা উল্লেখ করে ফের জমি মাপজোক করার আবেদন করেছে। তাদের দাবি, ঠিক করে মাপজোক করলে স্কুলের ওই অংশ ভাঙা পড়বে না। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে পড়ুয়ারা প্রশ্ন তুলেছে, ওই সব অংশ ভাঙা পড়লে তারা কোথায় খেলবে? তাদের মিড-ডে মিলের রান্নাই বা কোথায় হবে? ক্লাসঘর না থাকলে কোথায় তারা পড়াশোনা করবে? সরকারি চিঠি পেয়ে স্কুল ভেঙে পড়ার দুশ্চিন্তায় ঠিক করে পড়াশোনাও করতে পারছে না বলে জানিয়েছে ওই খুদে ছাত্রছাত্রীরা।
বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে মেনে নিয়েছে জেলা প্রশাসনও। কর্তাদের দাবি, সব দিক মাথায় রেখেই সমাধান সূত্র খোঁজা হচ্ছে। এলাকার বিধায়ক তথা তারাপীঠ–রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘রাস্তা চওড়া করার প্রয়োজন আছে। সব দিক খতিয়ে দেখে আমরা দেখেছি, তার জন্য সরকারি জমি দখল করে থাকা স্কুলের ওই অংশটি ভাঙা ছাড়া বিকল্প নেই। তা না হলে ওই অংশটিতে রাস্তা অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে থাকবে।’’ তবে চেয়ারম্যানের আশ্বাস, জেলাশাসকের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। স্কুলের কোনও অংশে পূর্ত দফতরকে দিয়ে ভেঙে পড়া অংশগুলি পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হবে। যা শুনে প্রধান শিক্ষক বিধানচন্দ্র মণ্ডলের আবেদন, ‘‘স্কুলের অংশ ভাঙার আগে আমাদের যেন বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়।’’
জমি মাপে ভুল হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন ভূমি দফতরের ভারপ্রাপ্ত মহকুমা আধিকারিক দেবব্রত সাউ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ইতিমধ্যেই দু’বার মাপজোক করেছি। স্কুল ফের মাপার আবেদন করলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy