Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বালির ট্রাক রুখতে পথে পড়ুয়ারা

দু’টিরই কেন্দ্রীয় চরিত্রে— বালিঘাট। সোমবার তা নিয়েই উত্তেজনা ছড়াল ময়ূরাক্ষী নদীর ধার ঘেঁষা সিউড়ি ও মহম্মদবাজার থানা এলাকার দু’টি পৃথক জায়গায়।

লাঙুলিয়ায় পথ অবরোধে সামিল স্কুলপড়ুয়ারা। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

লাঙুলিয়ায় পথ অবরোধে সামিল স্কুলপড়ুয়ারা। সোমবারের নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৮
Share: Save:

দু’টিরই কেন্দ্রীয় চরিত্রে— বালিঘাট। সোমবার তা নিয়েই উত্তেজনা ছড়াল ময়ূরাক্ষী নদীর ধার ঘেঁষা সিউড়ি ও মহম্মদবাজার থানা এলাকার দু’টি পৃথক জায়গায়।

এক দিকে, স্কুলের পাশ দিয়ে বালিভর্তি বেপরোয়া ট্রাক চলাচলের প্রতিবাদে পথে নামল স্কুল পড়ুয়ারা। অন্য ঘটনায় কাজ চাইতে গিয়ে ই-অকশনে বালিঘাটের বরাত পাওয়া বালি কারবারির লোকেদের আক্রমণে ছুরিকাহত হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় এক বাসিন্দা। অল্পবিস্তর চোট পেয়েছেন আরও দু’জন। প্রথম ঘটনাটি সিউড়ি থানা এলাকার খটঙ্গা পঞ্চায়েতের লাঙুলিয়া হাইস্কুলের। দ্বিতীয়টি ঘটেছে মহম্মদবাজারের মোলপুর গ্রামে।

জাতীয় পরিবেশ আদালেতের নির্দেশে নদীবক্ষ থেকে বালি তোলার উপরে আগেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। বর্তমানে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে বালি তোলার অধিকার অর্জন করেছেন ই-অকশনের মাধ্যমে লিজপ্রাপ্তেরাই। স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরাক্ষী নদীর ধাঁর ঘেঁষে থাকা লাঙ্গুলিয়া হাইস্কুল এবং ঠিক পাশেই গড়ে ওঠা একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের মাঝখানে থাকা অপ্রশস্ত রাস্তা গিয়েছে। ওই রাস্তা দিয়েই সদ্য বালিঘাটের লিজ পাওয়া মালিকপক্ষ বালিভর্তি লরি যাতায়াত করাচ্ছেন দিন কয়েক ধরে। স্কুলের ক্ষতি হবে, পড়ুয়ারা দুর্ঘটনায় পড়তে পারে, দূষণ ছড়াবে— এমন নানা আশঙ্কায় স্কুল এবং অভিভাবকদের পক্ষ থেকে এই নিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছিল প্রশাসনিক স্তরে। প্রধান শিক্ষক সন্তোষ ভাণ্ডারীর বলছেন, ‘‘আমরা প্রশাসনের সব জায়গায় আপত্তি জানিয়েছিলাম। দিনের বেলায় বেপরোয়া ভাবে ট্রাকের যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত করেছে প্রশাসন।’’ তা হলে অন্দোলনে কেন পড়য়ারা? স্কুলপড়ুয়া বিপাশা সাধু, দেবদূত বাগদি, মধুশ্রী মাজি, দেবাশিস দাসদের দাবি, ‘‘ওঁরা বালি তোলার বরাত পেয়েছেন। বালি তুলুন। কিন্তু রাতদিন কখনই স্কুলের পাশ দিয়ে ট্রাক যাতায়াত করতে দেব না। অন্য পথে যাতায়াত করুক ট্রাক। শিক্ষক, অভিভাবকেরা সেটা করতে পারেননি। তাই আমরাই আন্দোলনে নামলাম।’’ পুলিশ অবশ্য এ দিন স্কুলে যায়নি।

কী ঘটেছে মোলপুরে?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রামের একপ্রান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীবক্ষ থেকে বালি তোলার বরাত পেয়েছেন সাঁইথিয়ার ফুলুর গ্রামের মদনমোহন পাল। তাঁর অংশীদার শেখ সালেমই এই ঘাটটি দেখাশোনা করেন। অভিযোগ, সোমবার সকালে কাজ চাইতে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে বচসা শুরু হলে সালেমের লোকজন অশোক কোনাই নামে এক ব্যক্তিকে ছুরি মারেন। জখম অশোকের বাড়ি পাশের গ্রাম চাতরমায়। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে মোলপুর গ্রামের আরও দু’জন সামান্য জখন হন। এর প্রতিবাদে গ্রামের লোকেরা গিয়াসউদ্দিন নামে অভিযুক্ত সালেমের এক সঙ্গীকে মারধর করেন। গ্রামের রাস্তা অবরোধ শুরু হয়। ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। গিয়াসের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ হয়। গ্রামবাসীর বক্তব্য, ‘‘দিনরাত ভারী ট্রাক গ্রামের রাস্তা নষ্ট করে চলাচল করছে। আর আমরা কাজ পাব না?’’ সালেম অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘ব্যবসা করতে এসেছি, কারও সঙ্গে সঙ্ঘাতে যেতে নয়। আমার লোক দোষ করেছে। আমি চাই পুলিশ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে পদক্ষেপ করুক।’’ পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে।

প্রশাসনের কর্তাদের বক্তব্য, ই-অকশন ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর থেকে বালি তোলার রাজস্ব বাবদ অনেক বেশি আয় হচ্ছে। এত দিন এক শ্রেণির লোক নদীবক্ষ থেকে বালি তুললেও রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালি কারবার করেছেন। নদীর ধার ঘেঁষা গ্রামের মানুষ শ্রমের বিনিময়ে টাকা মিলবে— এই চুক্তিতে বালি কারবারে যুক্ত ছিলেন। ই-অকশনে ধাক্কা খেয়েছে দু’পক্ষই। সঙ্ঘাতটা তাই প্রকট। এ দিনের দুই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় অতিরিক্ত জেলা শাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) নীলকমল বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘মহম্মদবাজারের ঘটনা জানি না। তবে, লাঙুলিয়া থেকে আপত্তি আসা মাত্র দিনের বেলায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ওই রাস্তায় ট্রাক চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। হয়তো রাস্তা বদল করবে ঠিকাদার। গ্রামবাসীদের অসুবিধার কথা দেখব। কিন্তু অহেতুক বালি তোলায় বাধা সৃষ্টির চেষ্টা হলে সেটাও প্রশাসন দেখবে। কারণ, যাঁরা বরাত পেয়েছেন, তাঁরা বহু টাকা খরচ করে এবং সমস্ত শর্ত পূরণ করেই পেয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sand trafficking Students Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE