জীবিত: ভানুমতি ভট্টাচার্য।
বেঁচে থেকেও মৃতের তালিকায় ঠাঁই হয়েছিল ভানুমতি ভট্টাচার্যে র। তারপর থেকে প্রশাসনের সকল স্তরে বার বার আর্জি জানিয়েও ‘প্রাণ ফেরেনি’ তাঁর। এমনকি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েও কোনও লাভ হয়নি। তাই কার্যত মরে বেঁচে রয়েছেন ময়ূরেশ্বরের হাপিনা গ্রামের ওই দুঃস্থ বিধবা। কারণ, প্রশাসনের রিপোর্টের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁর বিধবা ভাতা।
প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধবা-বার্ধক্য ভাতা সহ দীর্ঘকালীন সরকারি অনুদান পাওয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতি বছর পঞ্চায়েতর পক্ষ থেকে ব্লকের মাধ্যমে সরেজমিনে তদন্ত করে রিপোর্ট পাঠাতে হয় জেলা পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতরে। পঞ্চায়েতের পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী জীবিত উপভোক্তাদের ভাতা অথবা অনুদান চালু থাকে। মৃতদের বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ বহুক্ষেত্রে পঞ্চায়েত শোনা কথার উপরে ভিত্তি করে গড়পড়তা রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয়। তার ফল ভুগতে হয় উপভোক্তাদের। তার জেরে মৃত থেকে জীবিতের তালিকাভুক্ত হতে বছরের পর বছর পেরিয়ে যায়। পদ্ধতি এতটাই সময় সাপেক্ষ যে উপভোক্তার মৃত্যু হয়েছে, এমনও হয়েছে। বছর চারেক ধরে প্রশাসনের ওই ভুলের মাসুল গুনতে হচ্ছে ময়ূরেশ্বরের হাপিনা গ্রামের ৭৩ বছরের ভানুমতি ভট্টাচার্যকে। এর আগেও স্থানীয় কুলিয়ারা গ্রামের ৯২ বছরের বৃদ্ধা শর্মানী দাস জীবিত থাকলেও পঞ্চায়েত বাৎসরিক নবীকরণের সময় তাঁকে মৃত হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করায় তাঁর বার্ধক্য ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ দিন পরে বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে ভাতা চালু হয়। কিন্তু, ভুল সংশোধন করে আজও ভানুমতিদেবীর ভাতা চালু হয়নি। প্রশাসন এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাপিনা গ্রামের এক ভানুমতি ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। নবীকরণের সময় লোকমুখে সেই ভানুমতির কথা শুনে বিধবা ভাতা প্রাপক অন্য এক জীবিত ভানুমতিকে মৃত বলে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছে পঞ্চায়েত। তার ফলে প্রায় বছর চারেক ধরে ভাতা পাচ্ছেন না ওই বিধবা। প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েও কোনও কাজ না হওয়ায় তিনিও মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ভাতা চালুর পাশাপাশি যাঁদের গাফিলতিতে তাঁর মতো অসহায় দুঃস্থদের ভাতা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, শাস্তি হিসেবে তাঁদের বেতন কেটে ভাতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জেলা পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় একই কারণে ছয় মাস থেকে এক বছর ধরে প্রায় ২০০ উপভোক্তার ভাতা বন্ধ হয়ে রয়েছে। হাপিনা গ্রামে হতদরিদ্র পরিবার ভানুমতিদেবীর। চার মেয়ের বিয়ে দিতে কার্যত ঘটিবাটিটুকুও বিকিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে সহায় কিছু নেই বললেই চলে। তিন ছেলে পুজোআচ্চার আয়ে কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে ৯ সদস্যের সংসার চলে। বার্ধক্যজনিত কারণে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। এতদিন বিধবা ভাতার মাসিক ৪০০ টাকায় ওই সব ওষুধ জুটত। কিন্তু, অর্থাভাবে তা-ও বন্ধ। বৃদ্ধা ভানুমতিদেবীর কথায়, ‘‘প্রশাসনের সকল স্তরে আবেদন জানিয়েও কোনও কাজ না হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছি। যাঁদের গাফিলতিতে আমাদের মতো অসহায়দের এই অবস্থা, তাঁদের বেতন কেটে ভাতা দিলে তবেই টনক নড়বে।’’ পঞ্চায়েতের প্রধান মিঠু গড়াই জানান, পঞ্চায়েতের এক প্রাক্তন কর্মীর ভুলেই এমনটা ঘটেছে। বিষয়টি জানার পরেই ভুল সংশোধন করে ভাতা চালুর জন্য ব্লকে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিয়েছি।
বিডিও (ময়ূরেশ্বর ২) অর্ণবপ্রসাদ মান্না বলেন, ‘‘নতুন এসেছি। তবে খোঁজ নিয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy