Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

নোট বদলে সরকারি প্রকল্প নিয়ে বিপাকে শিক্ষক মহল

কোথাও মিড ডে মিল ধার করে চলছে। কোথাও বা মিড ডে মিলের রাঁধুনিরা টাকা পায়নি। আবার কোথাও দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসকারী নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের বরাদ্দ টাকা দিতে পারছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৬ ০০:০১
Share: Save:

কোথাও মিড ডে মিল ধার করে চলছে। কোথাও বা মিড ডে মিলের রাঁধুনিরা টাকা পায়নি।

আবার কোথাও দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাসকারী নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের বরাদ্দ টাকা দিতে পারছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রীয় শিক্ষা মিশন প্রকল্পে স্কুলের জন্য বরাদ্দ টাকা কাজে লাগাতে পারছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। নোট বদল নিয়ে হয়রানি নিয়ে জেলার বেশির ভাগ স্কুলের প্রধানশিক্ষকদের অভিজ্ঞতা এমনই যে, তাঁরা স্কুলের দায়িত্ব সামলাবেন না ব্যাঙ্কে গিয়ে সাইন দিয়ে টাকা তুলতে যাবেন— সেটাই হয়ে গিয়েছে এখন প্রশ্নের। বেশিরভাগ স্কুলেই কার্যত নোট বদল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রধানশিক্ষকরা। গোটা জেলা জুড়েই এক ছবি।

মুরারই থানার পাইকর হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষক তাপস চটোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নোট হয়রানির জন্য স্কুলের মিড ডে মিলের রাঁধুনিদের টাকা দেওয়া যায়নি।’’

রামপুরহাট থানার দাদপুর বাতাসপুর হাইস্কুলে মিড ডে মিল প্রকল্পে সব্জি ও জ্বালানি বাবদ খরচ বর্তমান পরিস্থিতে ধার করে চালাতে হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক বিকাশ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এতদিন যা খুচরো টাকা ছিল সেই টাকায় স্কুলের মিড ডে মিল প্রকল্পে খরচ করা হয়েছে। ব্যাঙ্কে টাকা তোলার লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা তুলব না স্কুল চালাব সেই জন্য মিড ডে মিলের খরচ ও জ্বালানি আপাতত ধার বাকি করে চালাতে হচ্ছে।”

মাড়গ্রাম থানার প্রতাপপুর হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক প্রিয়রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় জানান, পুজোর ছুটির আগে দারিদ্র সীমার নীচে বসবাসকারী নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীদের জন্য ৮০০ টাকা করে দেওয়ার জন্য অনুদান পাওয়া যায়। সেই টাকা স্কুল খোলার পর কিছু ছাত্রীদের দেওয়া হয়। কিন্তু বাকি টাকা পাঁচশো, হাজার টাকা নোটের জন্য ছাত্রীদের এখন দিতে গেলে ছাত্রীরা কেউই সেই টাকা নিতে চাইছে না।

ফলে টাকা বদল করার প্রয়োজন পড়েছে। কিন্তু ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ওই টাকা মাত্র সাড়ে চার হাজার টাকা করে বদল করতে গিয়ে হয়রান হতে হচ্ছে। সমস্যায় পড়ে, ওই টাকা চেকের মাধ্যমে ছাত্রীদের অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেওয়া যায় কীভাবে তার উদ্যোগও অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ চিন্তা ভাবনা শুরু করেছেন। নোট হয়রানির ভয়ে অনেক স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবশ্য ব্যাঙ্কে যেতেই চাইছেন না।

অন্যদিকে, নোট বদলের হয়রানির ক্ষেত্রে টাকা তোলার পরিমাণ প্রথম দিকে দশ হাজার টাকা থাকায় স্কুলের উন্নয়ণ বাবদ প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় মিশন থেকে প্রাপ্ত টাকা কিভাবে কাজে লাগাবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না মাড়গ্রামের মিলকিডাঙা স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণবেন্দু মাহারা।

বোলপুর মহকুমার জুবুটিয়া জপেশ্বর বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘খুব সংকটে পড়েছি। কারণ এখানে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গ গ্রামিণ ব্যাঙ্কের একটি শাখা আছে। সেখানে আমাদের স্কুলের লেনদেন হয়। কিন্তু সেও পাচ্ছি না।’’ তিনি জানান, সম্প্রতি সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল আনতে ট্রাক্টর ভাড়া দু’হাজার টাকাও দিতে পারেননি!

সিউড়ি মহকুমার কবি নজরুল হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক মধুসূদন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে টাকা ধার করতে গিয়ে বেশ সমস্যায় পড়েছি।’’

সমস্যার কথা বীরভূম জেলা তৃণমূল শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রলয় নায়েক বলেন, ‘‘সামনে পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির পরীক্ষা। তার খাতা এবং প্রশ্ন পত্র কিনতে পারছেন না প্রধান শিক্ষকরা।’’ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা পরিদর্শক রেজাউল হক বলেন, ‘‘মিড-ডে মিলের সমস্যা হওয়া উচিত নয়। বিডিওরাই টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকিয়ে দেন। সমস্যা হলে প্রধান শিক্ষকদের দেখতে হবে। উচিত হবে চেক দিতে।’’

এ দিন রামপুরহাট মহকুমা শাসক সুপ্রিয় দাস বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে স্কুলের মিড ডে মিল ব্যবস্থা যাতে ভেঙে না পড়ে তার জন্য স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সহযোগিতা করবেন শিক্ষকদের নিয়ে গড়ে তোলা মিড-ডে মিল মনিটারিং কমিটি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mid-day meal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE