Advertisement
০১ মে ২০২৪
Purulia Bankura Temperature

হাড় কাঁপিয়ে আরও নামল পারদ

রবিবার দিনভর হিমেল হাওয়া বয়েছে জেলার সর্বত্র। রোদের তেজও তেমন ছিল না। এই দুইয়ের অভিঘাতে কার্যত জবুথবু ছিল বান্দোয়ান থেকে বাঘমুণ্ডি, ঝালদা থেকে নিতুড়িয়া।

শীত থেকে রেহাই পেতে চলছে আগুন পোহানো। বান্দোয়ান-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কের বান্দোয়ানের চিরুডিতে।

শীত থেকে রেহাই পেতে চলছে আগুন পোহানো। বান্দোয়ান-বাঁকুড়া রাজ্য সড়কের বান্দোয়ানের চিরুডিতে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া, পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:৩৪
Share: Save:

পুরুলিয়ায় ৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাঁকুড়ায় ৮.৯। রাঢ়বঙ্গে পারদ-পতনের সঙ্গে অব্যাহত হাড়ের কাঁপুনিও।

আজ, সোমবার মকর সংক্রান্তি। রবিবার ছিল পুরুলিয়ায় চলতি মরসুমের শীতলতম দিন। জেলা কৃষি দফতর বলছে, এ দিন জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে শহর থেকে গ্রাম— কাঁপুনি উপেক্ষা করে মকর স্নানের প্রস্তুতি নিয়েছেন অনেকে।

গত চারদিন ধরে পুরুলিয়ায় পারদ-পতন অব্যাহত। তিন দিনের ব্যবধানে পারদ নেমেছে ৬ ডিগ্রিরও বেশি। কৃষি দফতর জানাচ্ছে, ১০ জানুয়ারি জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পর দিন তা আরও নেমে দাঁড়ায় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস। রবিবার আরও নামে পারদ।

জাহাজপুর কল্যাণ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের আবহাওয়া বিভাগের দায়িত্বে থাকা সুদীপ্ত ঠাকুর জানান, পারদের এ হেন পতনের বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, পরিষ্কার আকাশ। দ্বিতীয়ত, ঘূর্ণাবর্ত না থাকায় এখন উত্তুরে কনকমে বাতাসের প্রবেশে কোনও বাধা নেই।

রবিবার দিনভর হিমেল হাওয়া বয়েছে জেলার সর্বত্র। রোদের তেজও তেমন ছিল না। এই দুইয়ের অভিঘাতে কার্যত জবুথবু ছিল বান্দোয়ান থেকে বাঘমুণ্ডি, ঝালদা থেকে নিতুড়িয়া। বেলা সাড়ে ৯টার আগে পথে লোকজনের দেখা তেমন একটা মেলেনি এ দিনও। পুরুলিয়া বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে অবিনাশ মাহাতো নামে এক বাসচালক বলেন, ‘‘যত শীতই পড়ুক না কেন, ভোরে বাস নিয়ে বেরোতেই হয়। এত কুয়াশা থাকছে যে, ভাল করে রাস্তা দেখাই যাচ্ছে না। হাতমোজা পরেও ঠান্ডা আটকানো যাচ্ছে না।’’

বেলা বাড়তেই মকর পরবের প্রস্তুতি নজরে পড়েছে। বিভিন্ন হাটে চৌডল নারকেল, তিল বা গুড়ের বেচাকেনা হয়েছে জোরকদমে। ঝালদা বাজার থেকে চৌডল কিনে ফেরার পথে মসিনা গ্রামের ষাট ছুঁই ছুঁই ঠাকুরমণি নায়ক বলেন, ‘‘ঠান্ডা যতই পড়ুক না কেন, সুবর্ণরেখা নদীতে মকরের স্নান সারবই। ভোরে নদীতে স্নান অনেক কালের প্রথা। বিয়ের আগে থেকেই এই নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি। নাতিদের সঙ্গে নিয়ে যাব।’’

গ্রামের পাশে কংসাবতীতে মকরের স্নান সারবেন বলে ঘরে ফিরেছেন ভিন্‌ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া আড়শার বামুনডিহা গ্রামের সনাতন মাহাতো ও বুদ্ধেশ্বর লায়া। পেশায় নির্মাণ শ্রমিক বুদ্ধেশ্বরের কর্মস্থল ঝাড়খণ্ড। হায়দরাবাদ থেকে ফিরেছেন সনাতন। দু’জনই বলেন, ‘‘কনকনে ঠান্ডা পড়েছে ঠিকই। তবু ভোরে নদীতে মকরের স্নান করব। নদীর পাড়ে আগুনের ধুনি জ্বালানোর ব্যবস্থা করেই নদীতে নামব। স্নান সারতেই হবে। সে জন্যই তো ঘরে ফেরা।’’

এদিন বাঁকুড়ার পর্যটন কেন্দ্রগুলিতেও ছিল নজরকাড়া ভিড়। দিনভর শীতের দাপট ছিল জেলার সর্বত্র। সকালে ঘন কুয়াশাও দেখা যায়। শুশুনিয়া পাহাড়ে প্রায় হাজার খানেক মানুষের ভিড় হয়েছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, জানুয়ারির শুরুতে শীত কম থাকায় পর্যটকদের সংখ্যাও কমতে শুরু করে। সপ্তাহের শেষ দু’দিন শীতের দাপট বাড়ায় ভিড় কিছুটা বেড়েছে। মুকুটমণিপুর পর্যটনকেন্দ্রে এ দিন পর্যটকদের কম-বেশি ৫০টি বাস ও ৮০টির মতো ছোট গাড়ি ঢোকে। গত কয়েক দিনের তুলনায় এ দিন মুকুটমণিপুরে ভিড় বেশি ছিল বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়েরা। বাঁকুড়ার মিথিলার একটি পার্কেও সকাল থেকে ভিড় ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

purulia bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE