Advertisement
E-Paper

পুজোয় নতুন চমক বালুচরি, দেড় লাখের শাড়িতে রামায়ণের সাত কাণ্ড বুনলেন বিষ্ণুপুরের তাঁতশিল্পী

একদা নবাবের প্রাসাদে থাকা মহিলাদের জন্য এক বিশেষ ধরনের জমকালো রেশমের শাড়ি তৈরি করতেন মুর্শিদাবাদের বালুচর গ্রামের তাঁতিরা। বালুচর গ্রামের নামানুসারেই ওই বিশেষ ধরনের রেশমের শাড়ির নাম হয় বালুচরি।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৫ ১৭:১১
Baluchari Saree by a Bishnupur weaver

শিল্পে বুঁদ বালুচরি শিল্পী অমিতাভ পাল। —নিজস্ব চিত্র।

পুজো মানেই বাঙালি নারীর কাছে নতুন শাড়ি। শুধু নতুন নয়, সেটা যেন অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়, তা খুঁজে বার করতে দোকান থেকে দোকান তন্ন তন্ন করেন। সেই শাড়ি যদি হয় বালুচরি তা-হলে তো কথাই নেই! বালুচরির খাসতালুক হিসাবে পরিচিত বিষ্ণুপুরের তাঁতে পুজোর মুখে এ বার উঠে এল নতুন নকশা। রেশমের সুতোর কারিকুরিতে বালুচরি শাড়িতে ফুটে উঠল রামায়ণের সাত কাণ্ড। তাঁত থেকে বেরোতেই যে শাড়ি নজর কেড়েছে দেশ-বিদেশের ক্রেতার।

একদা নবাবের প্রাসাদে থাকা মহিলাদের জন্য এক বিশেষ ধরনের জমকালো রেশমের শাড়ি তৈরি করতেন মুর্শিদাবাদের বালুচর গ্রামের তাঁতিরা। বালুচর গ্রামের নামানুসারেই ওই বিশেষ ধরনের রেশমের শাড়ির নাম হয় বালুচরি। ইংরেজদের হাতে নবাবের পরাজয়ের পর থেকেই বালুচরির গৌরব ম্লান হতে হতে একটা সময় বালুচর গ্রাম থেকে ঐতিহ্যবাহী কুটিরশিল্প হারিয়েই যায়। গত শতকের মাঝামাঝি বালুচরি শাড়ি তৈরির শিল্প নতুন করে বিকশিত হয়। তবে মুর্শিদাবাদের বালুচরে নয়, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বালুচরির নকশা বদলেছে। বাজার বুঝে আধুনিক নারীর রুচি অনুযায়ী বদলে গিয়েছে বালুচরি শাড়িও।

গত কয়েক বছরে একের পর এক মহার্ঘ শাড়ি তৈরি করেছেন বিষ্ণুপুরের শিল্পীরা। কোনও শাড়ির দাম দেড় লক্ষ, কোনওটার দাম ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। এ বার পুজোর মুখে বিষ্ণুপুরের বালুচরি শিল্পী অমিতাভ পাল নিজের তাঁতে তৈরি করেছেন এমন এক বালুচরি শাড়ি, যার গায়ে সূক্ষ্ম সুতোর কাজে টুকরো টুকরো করে ফুটে উঠেছে রামায়ণের কাহিনি।

Baluchuri

বালুচরিতে রামায়ণের সাত কাণ্ড। —নিজস্ব চিত্র।

অশ্বত্থ পাতার আকারে তৈরি নকশায় শাড়ির গা জুড়ে ফুটে উঠেছে রামায়ণের অহল্যা উদ্ধার, রামের হরধনু ভঙ্গ, রাম-সীতার বিয়ের আসর, লক্ষ্মণের গণ্ডি অঙ্কন, সোনার হরিণ শিকার, রাবণের সীতাহরণ থেকে মেঘনাদ বধের খণ্ডচিত্র। শাড়ির পাড় জুড়ে রয়েছে বানর সেনা সহযোগে রামের রণভূমে যাওয়ার খণ্ডচিত্র। অত্যন্ত সূক্ষ্ম কাজ থাকায় এই শাড়ি বুনতে সময়ও লেগেছে অনেক। শিল্পীর কথায়, ‘‘এই শাড়িতে যে রেশমের সুতো ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে রং করার ক্ষেত্রে আলাদা নজর দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গাছের পাতা, ফল ও ফুলের নির্যাস থেকে রং তৈরি করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে রঙিন করা হয়েছে সুতোগুলিকে। স্বাভাবিক ভাবেই বহু বছর ব্যবহারের পরেও এই শাড়ি বা শাড়ির গায়ে থাকা নকশার রঙ ফিকে হওয়ার কোনও আশঙ্কা নেই।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এই শাড়িগুলি বোনার জন্য সময়ও লাগছে যথেষ্ট বেশি। এক একটি শাড়ি বুনতে এক জন শিল্পীর ২০ দিনেরও বেশি সময় লেগেছে।’’

দামের দিক থেকে মহার্ঘ হলেও তাঁত থেকে বেরোতেই দেশ-বিদেশের অভিজাত বাজারে হুড়মুড়িয়ে বিপণন হচ্ছে এই বিশেষ বালুচরি শাড়ির। শিল্পী বলেন, ‘‘মজুরি ও উপকরণ মিলিয়ে এক একটি শাড়ির দাম পড়ছে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দাম একটু বেশি হলেও চাহিদার অভাব নেই। মূলত সরকারি বিপণন সংস্থার মাধ্যমে পুজোর মুখে এই শাড়ি রওনা দিচ্ছে বিদেশের বাজারে। আশা করি, বালুচরির অন্যান্য নকশার মতো এই নকশাও বাঙালির মন জয় করবে।’’

Saree Bishnupur Weaver
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy