Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ছেলের হাত ধরে আবার ঘরের পথে পা লক্ষ্ম্যাম্মার

একটা শব্দই ১০ বছর পরে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিল নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলা তেলেঙ্গানার লক্ষ্ম্যাম্মাকে। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিজের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে এতদিন ধরে জমিয়ে রাখা চোখের জলে নিজে ভাসলেন। আর তাঁকে বাড়ি ফেরাতে যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য আধিকারিক ছক ভেঙে উদ্যোগী হয়েছিলেন, মন খারাপ হয়ে গেল তাঁদেরও।

বাঁকুড়া মেডিক্যালে মা ও ছেলে। —নিজস্ব চিত্র।

বাঁকুড়া মেডিক্যালে মা ও ছেলে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪৩
Share: Save:

একটা শব্দই ১০ বছর পরে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিল নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলা তেলেঙ্গানার লক্ষ্ম্যাম্মাকে। বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিজের ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে এতদিন ধরে জমিয়ে রাখা চোখের জলে নিজে ভাসলেন। আর তাঁকে বাড়ি ফেরাতে যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য আধিকারিক ছক ভেঙে উদ্যোগী হয়েছিলেন, মন খারাপ হয়ে গেল তাঁদেরও।

পথদুর্ঘটনায় চোট পেয়ে মাস চারেক ধরে বাঁকুড়া মেডিক্যালের মহিলা অর্থপেডিক ওয়ার্ডের তিন নম্বর বেডে ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ তকমা নিয়ে তিনি ভর্তি ছিলেন। লাগাতার কথা বলানোর চেষ্টা চালিয়ে তাঁর ঠিকানা উদ্ধার করেন চিকিৎসকেরা। বৃহস্পতিবার তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিতে হাসপাতালে এসেছিলেন লক্ষ্ম্যাম্মার ছোট ছেলে এন অঞ্জলেন, বোনপো শিব কুমার, কাটাকাদিরা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নরসিংহ রেড্ডি প্রমুখ। বাঁকুড়া আত্মীয়দের পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হয়ে ওই মহিলাকে তাঁদের হাতে তুলে দেন।

মধ্যবয়সী লক্ষ্ম্যাম্মাকে পুলিশ মেডিক্যালে ভর্তি করে অজ্ঞাত পরিচয় হিসেবে। দিনভর তিনি বিড়বিড় করলেও তাঁর ভাষা উদ্ধার করা যায়নি। সম্প্রতি তাঁর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক পূর্বা চক্রবর্তী লক্ষ্ম্যাম্মার মুখ থেকে তেলেগু ‘আক্কা’ শব্দটি শুনতে পান। চর্ম বিভাগের চিকিৎসক কর্নাটকের বাসিন্দা শ্রীনিবাসকে লক্ষ্ম্যাম্মার সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথা বলিয়ে তাঁর নাম ও বাড়ির খোঁজ মেলে।

বাঁকুড়া মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ তেলেঙ্গানার মেহেবুব নগর জেলা পুলিশের মাধ্যমে লক্ষ্ম্যাম্মার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর ছেলে বলেন, “মাকে এ ভাবে ফিরে পাব ভাবিনি। বছর দশেক হল মা ঘরছাড়া। আমরা কেউ খোঁজ করেও তাঁকে পাইনি।”

লক্ষ্ম্যাম্মা ছেলেকে পেয়ে এ দিন জড়িয়ে ধরে আদর করেন। দু’জনের অনেক কথাও হয়। এ দিন দুপুরে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন ছেলের হাত ধরে। তবে যাবার আগে মেডিক্যালের ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্মীদের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। সবার দিকে দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করে গিয়েছেন তিনি। পূর্বাদেবী এ দিন হাসপাতালে ছিলেন না। বাঁকুড়া মেডিক্যালের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সব্যসাচী ঘোষ বলেন, “চোখে জল নিয়ে হাসপাতাল ছাড়লেন উনি। মাথায় হাত বুলিয়ে কত যে কথা বললেন কিছুই বুঝলাম না। আমাদের কাছেও উনি এখন আক্কা। এটুকু চাইব যেন ভাল থাকেন।” বাঁকুড়া মেডিক্যালের সুপার পঞ্চানন কুণ্ডু বলেন, “হাসপাতালটাই ওই মহিলার কাছে বাড়ির মতো হয়ে গিয়েছিল। সবার সাথেই কেমন একটা সম্পর্ক হয়ে উঠেছিল তাঁর। তিনি নিজের বাড়ি যাচ্ছেন ভেবে আমরা খুশি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lakhyamma returned home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE