সুতলি দড়ি দিয়ে দুর্গার মুখ ও বিভিন্ন শিল্পকর্ম তৈরিতে ব্যস্ত শিল্পীরা। বোলপুরের রাইপুরে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
নিছক শখ করে শিল্পকলা শেখা। সেই শিল্পকলাই এখন হয়ে উঠেছে সংসার চালানোর অন্যতম মাধ্যম। তার কদর এলাকা ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু সুতলি, রং,আঠা ও কাগজ ব্যবহার করে দুর্গার মুখ থেকে শুরু করে মণ্ডপ শয্যার বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বোলপুরের রাইপুর এলাকার দম্পতি মল্লিকা ও গৌরাঙ্গ দাস।
দুর্গার মুখ এবং মণ্ডপসজ্জার হরেক সামগ্রী বিক্রি করে পুজোর সময় বেশ ভাল লাভের মুখও দেখেন ওই দম্পতি। তাঁরা জানালেন, সারা বছরের তুলনায় পুজোর সময় সুতলির তৈরি এই সমস্ত সামগ্রীর চাহিদা সবথেকে বেশি থাকে। রাইপুর গ্রামের বাসিন্দা গৌরাঙ্গের সঙ্গে প্রায় ২৭ বছর আগে বিয়ে হয়েছিল আমোদপুরের মল্লিকার। সেই সময় চাষবাসের উপরেই কোনও রকমে চলতো তাঁদের সংসার। স্বাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্য়ে মল্লিকা বিশ্বভারতীতে শিল্পকর্মের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষ করে তিনি সুতলি দিয়ে ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করতে থাকেন।
ধীরে ধীরে মল্লিকা সোনাঝুরি হাটে নিজের শিল্পকর্ম বিক্রি শুরু করেন। বিভিন্ন জায়গায় মেলাতেও শিল্পকর্ম নিয়ে হাজির হতেন। তাঁর পরিচিতি বাড়তে শুরু করে। এর পরে মণ্ডপসজ্জার সামগ্রী ও দুর্গা মুখ তৈরি করতে থাকেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কজর বেড়েছে তাঁর হাতে তৈরি জিনিসের। একটা সময় যুক্ত হন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গেও। মল্লিকার সঙ্গে হাত লাগান তার স্বামী গৌরাঙ্গও। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলেও মাঝেমধ্যে এ কাজে সহযোগিতা করেন তাঁদের।
বর্তমানে বহু মেয়েকেই মল্লিকা প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বনির্ভর করে তুলতে নিজের শিল্পকর্মের কাজে লাগিয়েছেন। তাঁদের সুতোর কাজ শুধু জেলাতেই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বছরও দুর্গার মুখ থেকে শুরু করে গণেশ, ঘোড়া, পেঁচা সব মণ্ডপসজ্জার সামগ্রীর বরাত পেয়েছেন মল্লিকা ও গৌরাঙ্গ। মল্লিকা বলেন, “এক সময় ভালবেসে শিল্পকর্ম শিখেছিলাম। ১৮ বছর ধরে আমি এই কাজে যুক্ত। আজ এখান থেকে মাসে ভালই আয় হয়। তবে দুর্গাপুজোর সময় বেচাকেনা ভাল হওয়ায় অনেকেটাই লাভের মুখ দেখতে পাই আমরা।” সুতলির এই শিল্পকর্মকে আরও ছড়িয়ে দেওয়াই এখন দম্পতির লক্ষ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy