Advertisement
০৬ মে ২০২৪

মাছের কৃত্রিম প্রজননের প্রশিক্ষণ শুরু সিউড়িতে

শিঙি, দেশি মাগুর, ট্যাংরা, কই— মৎস্যপ্রিয় বাঙালির পাত থেকে কার্যত হারিয়ে যেতে বসেছে সুস্বাদু এ সব মাছ। এখনও বাজারে কিছু মাছ মিললেও দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে সেই হারিয়ে যাওয়া মাছের চারার জোগান সুনিশ্চিত করা এবং জেলার ১০০ জন প্রগতিশীল মৎস্যচাষিকে তা হাতেকলমে শেখাতে উদ্যোগী হল জেলা মৎস্য দফতর।

হাতেকলমে মাছের কৃত্রিম প্রজননের প্রশিক্ষণ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

হাতেকলমে মাছের কৃত্রিম প্রজননের প্রশিক্ষণ। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮ ০৮:০০
Share: Save:

শিঙি, দেশি মাগুর, ট্যাংরা, কই— মৎস্যপ্রিয় বাঙালির পাত থেকে কার্যত হারিয়ে যেতে বসেছে সুস্বাদু এ সব মাছ। এখনও বাজারে কিছু মাছ মিললেও দাম সাধারণের নাগালের বাইরে। কৃত্রিম প্রজনন ঘটিয়ে সেই হারিয়ে যাওয়া মাছের চারার জোগান সুনিশ্চিত করা এবং জেলার ১০০ জন প্রগতিশীল মৎস্যচাষিকে তা হাতেকলমে শেখাতে উদ্যোগী হল জেলা মৎস্য দফতর।

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিউড়ি ২ ব্লকের সেকমপুর আঞ্চলিক গবেষণাকেন্দ্রে তা নিয়ে মৎস্যচাষিদের দক্ষতাবৃদ্ধির তিন দিনের প্রশিক্ষণ শুরু হল বুধবার। মৎস্য দফতরের সঙ্গে সহযোগিতায় রয়েছে বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। উপস্থিত ছিলেন উপ মৎস্য অধিকর্তা (মধ্যাঞ্চল) কিশোর ধারা, জেলা মৎস্য সহ অধিকর্তা সৌরেন্দ্রনাথ জানা, জেলা মৎস্য অধিকর্তা (সমবায়) রণজিৎ মণ্ডল, মুখ্যনির্বাহী আধিকারিক নীলোৎপল কয়াল, মৎস্য সম্প্রসারণ (প্রশিক্ষণ) গোলাম সাবরি।

উপ মৎস্য অধিকর্তা মধ্যাঞ্চল কিশোর ধারা জানিয়েছেন, ন্যাশনাল ফিসারিজ ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের অর্থসাহায্যে এই প্রশিক্ষণের মূল বিষয় বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মিঠেজলের মাছ চাষ। রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্পের পাশাপাশি দেশি মাগুর, শিঙি, কই ও ট্যাংরা মাছের চাষও কী ভাবে করা যায়, কী ভাবে প্রজনন করা সম্ভব সে সবও মৎস্যচাষিরা শিখবেন। এক দিকে তাতে চাষিদের আয় বাড়তে পারে। অন্য দিকে বাঙালির পাতেও পৌঁছে যায় সুস্বাদু মাছগুলি।

এ বছর জানুয়ারিতে এলাকার কৃষকদের হাতেকলমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর চাষ শেখাতে আবাসিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন হয় সেকমপুরে। উদ্বোধন করেছিলেন বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালেয়ের উপাচার্য ধরণীধর পাত্র। কিন্তু সেখানে মৎস্যচাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল না। একটি আবাসিক প্রশিক্ষণকেন্দ্রে যাতে মৎস্যচাষিদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় পরে সেই পরিকাঠামো গড়ে তোলে বিশ্ববিদ্যালয়। মৎস্য দফতরের সঙ্গে তার পরেই যৌথ উদ্যোগে এই শিবির করা হল।

স্ত্রী মাগুর বা শিঙি মাছের ডিম ও পুরুষ মাছের শুক্রানু বের করে কী ভাবে প্রজনন করা যায়, নিষিক্ত লক্ষ লক্ষ ডিম কী ভাবে বড় বড় অ্যাকোরিয়ামে রেখে চারা বের করা যায়— চাষিদের হাতেকলমে বুধবার সেটাই দেখান মৎস্য আধিকারিকেরা। কই ও ট্যাংরার ক্ষেত্রে অবশ্য ডিমভরা স্ত্রী ও পুরুষ মাছকে অ্যাকোরিয়ামে রেখে মাছের ডিমপোনা তৈরির কৌশল শেখানো হয়। জেলা মৎস্য অধিকর্তা (সমবায়) রণজিৎ মণ্ডল জানান, দু’মাস পর প্রচুর চারাপোনা হবে। সেগুলি এত বড় হয়ে যাবে যে মৎস্যচাষিরা সরাসরি পুকুরে ছাড়তে পারবেন। সে ক্ষেত্রে মাছগুলির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক বাড়বে।

মৎস্য আধিকারিকেরা জানিয়েছেন, কৃত্রিম প্রজননের জন্য মাসদুয়েক আগে থেকে জেলার বিভিন্ন মৎস্যচাষিদের কাছ থেকে দেশি মাগুর, শিঙি এনে গবেষণাকেন্দ্রের পুকুরে ছাড়া হয়েছিল। সে সব মাছেরই প্রজনন ঘটানো হয়েছে। হাতেকলমে প্রশিক্ষণ তাঁদের অনেক উপকারে লাগবে বলে জানান প্রশিক্ষণে সামিল ইলামবাজারের জয়দেবের আশরফ মির্ধা, শেখ আলিম, সাঁইথিয়ার মহুলশুলার সহদেব মালের মতো অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fish Artificial Breeding
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE