Advertisement
১০ মে ২০২৪
উদ্যোগ রামপুরহাট ২ ব্লকে

কন্যা-জন্মে উৎসাহ দিতে উপহার গাছ

রাজস্থান পথ দেখিয়েছে। স্বপ্ন দেখিয়েছে বর্ধমান। এ বার এগিয়ে এল বীরভূমও। উৎসাহ দিতে সদ্য শিশুকন্যার জন্ম দেওয়া মায়েদের হাতে এগারোটি করে গাছের চারা তুলে দিল প্রশাসন।

মাড়গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

মাড়গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৬ ০১:০৬
Share: Save:

রাজস্থান পথ দেখিয়েছে। স্বপ্ন দেখিয়েছে বর্ধমান। এ বার এগিয়ে এল বীরভূমও। উৎসাহ দিতে সদ্য শিশুকন্যার জন্ম দেওয়া মায়েদের হাতে এগারোটি করে গাছের চারা তুলে দিল প্রশাসন।

মঙ্গলবার রামপুরহাট ২ ব্লক প্রশাসনের এমন প্রতীকী পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য— কন্যাভ্রূণ হত্যা রুখে মেয়েদের প্রতি সামাজিক লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা। পাশাপাশি গ্রামীণ আয়ার হাতে ঘরের বদলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু প্রসব করানো নিয়ে এলাকাবাসীকে সচেতন করাও এই ভাবনার মূলে রয়েছে। এ দিন সকালে মাড়গ্রামের খেদাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চার জন মাকে এগারোটি করে মূল্যবান গাছের চারা উপহার দেওয়া হয়েছে। কিছু বৃক্ষরোপণ করা হয় স্কুল চত্বরেও। বিডিও শ্বাশত দাশগুপ্ত বলছেন, ‘‘সমাজে এখনও কন্যাভ্রূণ হত্যা পুরোপুরি বন্ধ করা যায়নি। দূর হয়নি লিঙ্গ বৈষম্যও। তারই প্রতীকী প্রতিবাদ হিসাবে এই উদ্যোগ। তাতে গাছগুলিকে লালনপালন করার সঙ্গে সঙ্গেই পরিবারগুলি কন্যা সন্তানের শ্রীবৃদ্ধিতেও অনুপ্রাণিত হবে।’’ গোটা উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও। অনুষ্ঠানে ছিলেন রামপুরহাট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দৌলতুন্নেশা নুরি এবং ব্লকের অন্যান্য আধিকারিকেরা।

ঘটনা হল, রাজস্থানের রাজসামন্দ জেলার পিপলান্ত্রিতে মেয়ে জন্মালে, প্রশাসন পরিবারটিকে ১১১টি করে গাছ উপহার দেয়। গত ন’বছর ধরে চলা এই প্রকল্প এলাকায় কন্যাসন্তান সম্বন্ধে প্রচলিত চিন্তা-ভাবনাকে যেমন ধাক্কা দিতে পেরেছে, তেমনই রুখু অঞ্চল বদলে গিয়েছে সবুজে। কতকটা একই কায়দায় সম্প্রতি বর্ধমানের পূর্বস্থলী ১ ব্লকও ঠিক করেছে, এলাকায় মেয়ে জন্মালে বাড়ি বয়ে এসে শুভেচ্ছা জানাবেন প্রশাসনের প্রতিনিধিরা। পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে ১১টি করে গাছের চারা। প্রকল্পের নাম প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে ‘পুষ্পিতা’। মেয়েদের সঙ্গে গাছের চারার ভবিষ্যত মিলিয়ে প্রশাসনের উদ্যোগ রাজ্যে অবশ্য একেবারে নতুন নয়। তার কিছু দিন আগেই ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্পের প্রাপক ছাত্রীদের হাতে একটি করে মূল্যবান গাছের চারা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনও। কয়েক বছর পরে গাছটি বড় হলে প্রাপক ছাত্রীদের তা থেকে আয় করার সুযোগ থাকবে। সে প্রকল্পের নাম ‘বনশ্রী’।

প্রশাসন সূত্রের খবর, রামপুরহাট ২ ব্লকে একমাত্র একটি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু প্রসবের ব্যবস্থা আছে। সেখানে গত এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত চোদ্দো জন প্রসূতি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন। এ দিন হাতে গাছের চারা তুলে দিয়ে তাঁদেরই চার জনকে শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। বাকিদের পরে ব্লক অফিস থেকে গাছের চারা দেওয়া হবে। গাছগুলির মধ্যে কয়েক রকম ফলের চারা ছাড়াও রয়েছে মেহগনিও।

ব্লক প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিএমওএইচ তথা মহকুমা সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অভিজিৎ রায়চৌধুরী। তিনি জানাচ্ছেন, বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক শিশুজন্মের (হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে) হার ৯৬-৯৭ শতাংশ হয়েছে। বাড়িতে শিশু প্রসবের সংখ্যা একেবারে শূন্য করা যায়নি। এর ফলে সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যূ এবং প্রসূতির মৃত্যুর হারও কমানো যায়নি। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘এমন পরিকল্পনা প্রশাসনের সঙ্গে এলাকাবাসীর জনসংযোগকে বাড়াতে সাহায্য করে। তা কাজে লাগিয়ে এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করা অনেক সহ হবে।’’ এ দিন উপহার পাওয়া গাছ বড় হলে তার থেকে মেয়েটিও আর্থিক সাহায্য পাবে বলে মনে করছেন ব্লকের যুগ্ম বিডিও মইদুল ইসলাম।

প্রশাসনের এমন অভিনব উদ্যোগে আপ্লুত মায়েরাও। গাছ হাতে পেয়ে স্থানীয় বসোয়ার রুবি দলুই, মেলেডাঙার জেরমান বিবিরা বলছেন, ‘‘এমন উদ্যোগ যেন এক দিনেই শেষ না হয়ে যায়। এ বার থেকে এলাকায় মেয়ে জন্মালেই মায়েদের এই উপহার দেওয়া হোক। তাতেই সমাজে মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটা পাল্টাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tree Girl child
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE