Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নদী ঘিরেছে বারো গ্রাম, তবু মেটেনি সেতুর দাবি

এক নদী দু’ভাগ হয়ে ঘিরে রেখেছে মাঝের চরে বারো গ্রাম। সেই নদী-ঘেরা চর থেকে ওপারে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই! গরমের সময় হাঁটু জল পার হয়ে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষায় বাসিন্দারা ভরা নদী পারাপার করেন জীবন বাজি রেখে।

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার
সাঁইথিয়া শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪২
Share: Save:

এক নদী দু’ভাগ হয়ে ঘিরে রেখেছে মাঝের চরে বারো গ্রাম। সেই নদী-ঘেরা চর থেকে ওপারে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই!

গরমের সময় হাঁটু জল পার হয়ে যাতায়াত করতে হয়। বর্ষায় বাসিন্দারা ভরা নদী পারাপার করেন জীবন বাজি রেখে। দেড়িয়াপুর অঞ্চলের ঘাসবেড়া, গোবিন্দপুর, গোবিন্দপুর বাউড়ি পাড়া, আদিবাসী পাড়া ও কুলতোড়ের বহুদিনের দাবি নদী পারাপারের জন্য সেতুর। ভোট এলে সব দলই আশ্বাস দেন। ভোট যায়, সেতু হয় না ঘাসবেড়া, কুলতোড়ের। সমস্যার কথা শুনে সাংসদ শতাব্দী রায় বলেন, ‘‘সেতু গড়ার কোনও আবেদন পাইনি। তবে ওই এলাকার সেতুর দাবিকে আমিও সমর্থন করি।’’

সিউড়ি তিলপাড়া জলাধার থেকে কিছুটা এগিয়ে ময়ূরাক্ষীর কানা নামে শাখা নদী হয়ে উত্তরদিকে বয়ে গিয়েছে। ১১-১২ কিলোমিটার মতো যাওয়ার পরে ফের মূল স্রোতে মিশেছে কানা। দুই নদীর মাঝের চরে ১২ গ্রাম। কয়েক হাজার মানুষের বাস। অধিকাংশই কৃষি বা দিনমজুর। কানা’র উত্তরে সামান্য দূরে সাঁইথিয়া মহম্মদবাজার ও ময়ূরাক্ষীর দক্ষিণ কিছুটা দূরে সিউড়ি সাঁইথিয়া রাস্তা চলে গেছে। সাঁইথিয়া, মহম্মদবাজার, আঙ্গারগড়িয়া অঞ্চলের প্রায় হাজার আটেক মানুষ সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাঁরা বলছেন, ‘‘এই খন্ডদ্বীপ আদতে একটা নেই রাজ্য। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাট, পানীয় জল থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থা কোনও কিছুই নেই বললে চলে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা, অন্যত্র বিয়ে দেওয়া সবই মুশকিল!’’

গোবিন্দপুরের আবুল কালামের কথায়, ‘‘গত বছর মেয়ের বিয়ে দিই পাণ্ডবেশ্বরে। বিয়ের আগের দিনও নদীতে জল ছিল না। বিয়ের দিন তিলপাড়া থেকে নদীতে জল ছাড়ল। সকালে ময়ূরাক্ষীর দক্ষিণ পাড়ে বর ও বরযাত্রীরা হাজির। ন’দীর দুকুল ছাপানো জল দেখে ঘণ্টা দুয়েক অপেক্ষার পরে ওঁরা বিয়ে না করে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অনেক অনুরোধে ওঁরা সিদ্ধান্ত বদলে অপেক্ষা করেন। চারঘন্টা পর গুড়ের কড়াইয়ে করে তাঁদেরকে আনা হয়।’’ এলাকার অধিকাংশ পরিবারই এমন অভিজ্ঞতার কথা জানান।

কুলতোড়ের রাজু মণ্ডল, তপন মণ্ডল, গোবিন্দপুরের রামু মুর্মু, রনজিৎ বাউড়ি, আনিসুর রহমান, কাটুনিয়ার আনন্দ রায়, সাওড়াবেড়ার রবি মাড্ডি, উপর ও নামু বড়ামের উত্তম মাল, আনন্দ আচার্য, বেহিরার নিত্যানন্দ পাল, ভেজেনার সিরাজ খানরা জানান, শুধু একটি সেতু তাঁদের অনেক সমস্যা দূর করে দিতে পারে। যে কোনও মূল্যে তাঁরা সেতুটি চান। নরসিংহপুর রামকৃষ্ণ আশ্রমের স্বামীজী স্বামী প্রণবানন্দ বলেন, ‘‘নদীতে কোনও সেতু না থাকায় এই খন্ডদ্বীপ কার্যত সমস্ত পরিষেবা থেকে বঞ্চিত। আগুন লাগলে সমস্যা হয়।’’

সপ্তম শ্রেণির মিতা মণ্ডল, সারমিন খাতুন, দ্বাদশ শ্রেণির নন্দীতা মণ্ডল, একাদশ শ্রেণির শেখ জসিমুদ্দিন, অষ্টম শ্রেণির গদাই বাউড়ি, দ্বিতীয় বর্ষের রিঙ্কু বাউড়ি, লক্ষী পাল, রুবি খাতুনরা জানায়, এমনিতে হাঁটু জল পার হয়ে স্কুল কলেজ যায়। কিন্তু বর্ষার সময় দুর্দশার শেষ নেই। এখন বারোমাসই পরীক্ষা। তাই অনেক সময় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে গুড়ের কড়াইয়ে বা একটু কম জল থাকলে সাঁতরে নদী পার হয়ে পরীক্ষা দিতে যায়।

গোবিন্দপুরের বাসিন্দা এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ আরিবুল হক বলেন, ‘‘যোগাযোগের কারণে এখানে অনেকে মাঝপথে পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে দিতে বাধ্য হয়। গর্ভবতী মায়েদের প্রসব যন্ত্রনা উঠলে, কাউকে সাপে কাটলে চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। অনেকেই বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। সেতুর দাবিতে নতুন করে জেলা প্রশাসন ও সাংসদের কাছে জানানো হয়েছে।’’ সেতুর প্রয়োজনের কথা মানছেন জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীও। তিনি বলেন, ‘‘সেতুর বিষয়টি মাথায় আছে।’’

সাংসদ শতাব্দী বলেন, ‘‘শুধু সাংসদের এলাকা উন্নয়নের টাকায় সেতু নির্মাণ সম্ভব না। এলাকার লোকজন নিয়ম মেনে আবেদন করলে লোকসভাতেও বিষয়টি প্রস্তাব আকারে তুলে ধরা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bridge Village needed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE