Advertisement
২০ মে ২০২৪
ভোট শেষ, জলের আকালে দেখা নেই রাজনৈতিক নেতাদের

জল মিলবে কোথায়, হন্যে পুরুলিয়া

ভোট মিটতেই জলের সমস্যা নিয়ে পুরুলিয়া জেলার নানা এলাকা থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনা সামনে আসছে।একদিকে পুকুর, খাল-বিল শুকিয়ে যেতে বসেছে।

পুলিশের উদ্যোগে জলের গাড়ি। পুঞ্চায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

পুলিশের উদ্যোগে জলের গাড়ি। পুঞ্চায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০৯
Share: Save:

ভোট মিটতেই জলের সমস্যা নিয়ে পুরুলিয়া জেলার নানা এলাকা থেকে ক্ষোভ-বিক্ষোভের ঘটনা সামনে আসছে।

একদিকে পুকুর, খাল-বিল শুকিয়ে যেতে বসেছে। অন্যদিকে, জলস্তর নামতে শুরু করায় টিউবওয়েলে যেমন জল ওঠা বন্ধ হয়েছে, তেমনই পাইপলাইনে জল সরবরাহও কিছু এলাকায় ব্যাহত হচ্ছে। ভোট নিয়ে এতদিন ব্যাতিব্যস্ত থাকা প্রশাসনের আধিকারিকরা এখন জলের সঙ্কটের মোকাবিলা করতে নেমে পড়েছেন। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে ট্যাঙ্কে করে জল দেওয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়।

৪ এপ্রিল পুরুলিয়ায় ভোট হয়ে গিয়েছে। মানবাজার থানার পিয়ালশোল গ্রামের বাসিন্দারা রাস্তা এবং পানীয় জলের দাবিতে ভোট গিতে যাননি। বাসিন্দাদের আক্ষেপ, দীর্ঘদিন ধরে দাবি পূরণ না হওয়ায় তাঁরা ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু দাবি পূরণ হয়নি। ভোটের আগে নেতারা যদি বা দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন, কিন্তু ভোট মিটতেই আর কাউ তাঁদের সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না।

বরাবাজারের কোটালপাড়া ও নামোপাড়ার কিছু এলাকার পাইপলাইন খারাপ থাকার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে জল পৌঁছচ্ছিল না। এ কারণে কয়েকদিন ধরে ওই সব এলাকায় ট্যাঙ্কে করে জল দেওয়া শুরু হয়েছে। পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে বরাবাজারের সরবেড়িয়া গ্রামে।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রামের প্রায় সমস্ত নলকূপ অচল হয়ে গিয়েছে। সকাল বেলায় অল্প কিছুক্ষণ জল পড়ে। সেই জল নিয়ে শুরু হয় কাড়াকাড়ি। তারপর সারাদিনে আর টিউবওয়েলে জল পড়ে না। সরবেড়িয়ার বাসিন্দা তপন মহান্তী বলেন, ‘‘গ্রামের বেশিরভাগ নলকূপ অচল হয়ে পড়ায় অনেকে আমার বাড়ির সাব মার্শিবলের পাম্প থেকে জল নিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর অভিযোগ জলের এমন সঙ্কট নিয়ে ব্লক অফিসে জানিয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।’’

শুক্রবার থেকে পুঞ্চা থানার বাজার এলাকাতেও ট্যাঙ্কে করে জল দেওয়া শুরু হয়েছে। পুঞ্চায় কংসাবতী নদীর দলহা ঘাট থেকে পাম্পের সাহায্যে জল উত্তোলন করে সরবরাহ হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুঞ্চা বাজার এলাকা সামনে হওয়ায় সকালে একবার মাত্র ১৫-২০ মিনিট জল মেলে। কিন্তু পুঞ্চার ডাঙাবাজার এলাকায় আর জল ওঠে না। ফলে ডাঙার বাজার এলাকার বাসিন্দারা একফোঁটা পাইপলাইনের জল পাচ্ছেন না।

পুঞ্চার বিডিও অজয় সেনগুপ্ত ও থানার ওসি শেখ ইসমাইল আলি জলের অভাব মেটাতে রাস্তায় নেমেছেন। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান ও ভিন্‌ রাজ্যের পুলিশদের জন্য জলের জোগান দিতে জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকে কয়েকটি বড় কন্টেনার মিলেছিল। প্রতিটিতে ২০০০ লিটার জল ধরে। আপাতত ওই কন্টেনারে জল ভরে এলাকায় বিতরণ শুরু হয়েছে।

বোরো থানা এলাকার জামতোড়িয়া-বড়গড়িয়া ও বুড়িবাঁধ অঞ্চলে সরবরাহের জলের দাবি উঠেছে। জামতোড়িয়া অঞ্চলের বাসিন্দা বান্দোয়ানের বিদায়ী বিধায়ক সুশান্ত বেসরা বলেন, ‘‘মানবাজার ২ ব্লক এলাকায় মাস তিনেক আগে জল প্রকল্প চালু হয়েছে। কিন্তু সব অঞ্চলে জল আসেনি। তাঁরা এতদিন নলকূপ ও কুয়োর জল ব্যবহার করতেন। কিন্তু এ বার গরমের গোড়াতেই জলের স্তর অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। ফলে বেশিরভাগ কুয়ো শুকিয়ে গিয়েছে। নলকূপগুলিও অচল হয়ে পড়েছে।’’ মানবাজার ২ বিডিও নির্মল চট্টোপাধ্যায় জানান, জল প্রকল্পের এলাকা তিনি বাড়াতে পারেন না। জল সঙ্কটের কথা তিনি জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। তাঁরা আপাতত বিকল নলকূপগুলি মেরামত করার আশ্বাস দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার বোরো থানার বুরুডিতে পালু টুডুর মেলা বসছে। মেলা কমিটির অন্যতম ব্যবস্থাপক সুরজিৎ সিং হাঁসদা জানান, মেলায় ৪০-৫০ হাজার লোকের জমায়েত হয়। মেলা চত্বরে দু’-তিনটি নলকূপ থাকলেও বিশাল জমায়েতের তুলনায় তা কিছুই নয়। অন্যান্য বছর মেলায় তাঁরাই জলের ব্যবস্থা করলেও এ বার প্রশাসনের কাছে অন্তত চারটি জলের ট্যাঙ্ক মেলায় দেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

এ দিকে বহু তদ্বির করে কোথাও নলকূপের ব্যবস্থা করা হলেও জলস্তর নেমে যাওয়ায় জল উঠছে না।

যেমন বান্দোয়ানের ঋষি নিবারণচন্দ্র বিদ্যাপীঠে জল সঙ্কটের খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নলকূপ খোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, জলের স্তর নীচে নেমে যাওয়ায় ওই নলকূপেও জল উঠছে না। সমস্যা একই রয়ে গিয়েছে।

ভোটের মুখে জল সমস্যার কথা শুনে রাজনৈতিক দলের নেতারা আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন আর তাঁদের দেখা মিলছে না। জল সঙ্কট মেটাতে আসরে সে ভাবে কোনও নেতার দেখা মেলেনি।

দক্ষিণ পুরুলিয়ার এক ব্লক আধিকারিক বলেন, ‘‘জলের সমস্যা চলছে শুনলেই নেতারা ফোনে আমাদের পরামর্শ দিয়েই দায় সারছেন। সমস্যা মেটাতে কেউ রাস্তায় নামছেন না।’’ তাঁর কটাক্ষ, ‘‘রাস্তা তৈরি, বাড়িঘর তৈরির মতো জলে তো কাটমানি মেলে না। তাই নেতাদের দেখাও যাচ্ছে না। উল্টে কোথাও কোথাও ট্যাঙ্কে করে জল দেওয়া নিয়ে নেতারা রাজনীতি শুরু করে আরও ঘোঁট পাকিয়ে দিচ্ছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water problem
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE