Advertisement
E-Paper

পড়ার ফাঁকে মাঠে নেমে ক্রিকেটও

সাবর্ণীর পরিজনেরা জানান, পড়াশোনার বাইরে ছোট থেকে আঁকায় ঝোঁক রামপুরহাট স্কুলের ওই ছাত্রের। ক্রিকেটে পছন্দের মহেন্দ্র সিংহ ধোনির।

দয়াল সেনগুপ্ত অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০০:৫৪
সাফল্য: জেলায় সেরা। সাবর্ণীকে মায়ের আদর। নিজস্ব চিত্র

সাফল্য: জেলায় সেরা। সাবর্ণীকে মায়ের আদর। নিজস্ব চিত্র

এ যেন গত বছরেরই ফলের পুনরাবৃত্তি।

গত বার মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় ষষ্ঠ, নবম ও দশম স্থানে জায়গা পেয়েছিল জেলার তিন জন। এ বারও মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় একই জায়গায় উঠে এসেছে বীরভূমের তিন জন।

রামপুরহাট উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র সাবর্ণী চট্টোপাধ্যায় ৬৮৫ নম্বর পেয়ে ষষ্ঠ স্থানে, ৬৮২ নম্বর পেয়ে নবমে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রবীর সেনগুপ্ত বিদ্যালয়ের ছাত্র সৌকর্য বিশ্বাস, ৬৮১ নম্বর পেয়ে দশমে সিউড়ি নেতাজি বিদ্যাভবনের অরিত্র মাহারা।

পরীক্ষার পরে সাবর্ণী বাড়িতে বলেছিল, মেধাতালিকায় তার নাম থাকবেই। ছেলের আত্মবিশ্বাস দেখে বাবা-মা নিশ্চিত ছিলেন, পরীক্ষা ভাল দিয়েছে ছেলে। মঙ্গলবার পর্যদের মেধাতালিকা ঘোষিত হতেই দেখা গেল, ছেলে সাবর্নী ঠিক। মেধাতালিকায় ষষ্ঠ স্থান পাওয়ার পাশাপাশি জেলায় সেরা সে-ই। খবর শুনেই আনন্দে ‘তাতাই’কে জড়িয়ে ধরলেন মা সঞ্চিতা চট্টোপাধ্যায়। যিনি রামপুরহাট স্কুলের ইংরেজির শিক্ষিকা।

সাবর্ণীর বাবা কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। সঞ্চিতাদেবী জানান, দশম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে বরাবর প্রথম হয়েছে সাবর্ণী। টেস্টে ৬৭২ নম্বর পেয়েছিল। মাধ্যমিকের প্রস্তুতিতে দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা পড়ত। তার সেই চেষ্টায় ফলও মিলল। সঞ্চিতাদেবীর কথায়, ‘‘ছেলে ছোট থেকে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছে। গলায় অস্ত্রোপচারও হয়েছে। তবে ওর লড়াই তাতে থামেনি।’’ সাবর্ণীর প্রাপ্ত নম্বর— বাংলায় ৯৭, ইংরেজিতে ৯৮, গণিতে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮, জীবনবিজ্ঞানে ৯৮, ইতিহাসে ৯৭, ভূগোল ৯৭।

সাবর্ণীর পরিজনেরা জানান, পড়াশোনার বাইরে ছোট থেকে আঁকায় ঝোঁক রামপুরহাট স্কুলের ওই ছাত্রের। ক্রিকেটে পছন্দের মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। পছন্দের গোয়েন্দা চরিত্র সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা। সাবর্ণী চায়, তার মামার মতো বড় হয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হতে। মাধ্যমিকের সাফল্যের পিছনে মায়ের পরিশ্রম, স্কুলের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণার পাশাপাশি ব্যক্তিগত টিউটরদের অবদানের কথা জানাল সে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে একটানা প্রথম হলেও অষ্টম শ্রেণি থেকে একটু পিছিয়ে পড়েছিল সৌকর্য। মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষাতেও প্রত্যাশিত ফল হয়নি তার। কিন্তু সেই ব্যর্থতা ভুলে ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ নিয়েছিল সে। সৌকর্য জানায়, পাশে পেয়েছিল স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, বাবা মাকে।

সেই নিষ্ঠা ও পরিশ্রম যে বিফলে যায়নি, মেধাতালিকায় নিজের নাম নবমে রেখে তা প্রমাণ করল সৌকর্য। মাধ্যমিকে বাংলায় সে পেয়েছে ৯৩, ইংরেজিতে ৯৮, অঙ্কে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৮, জীবনবিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাসে ৯৭ এবং ভূগোলে ৯৯।

পর্যদের মেধাতালিকা ঘোষণার পরেই সৌকর্ষদের আবাসনে খুশির হাওয়া। পড়শিরা জানান, আদতে উত্তর ২৪ পরগণার হাসনাবাদের বাসিন্দা সৌকর্যের বাবা চিরন্তন বিশ্বাস। ২০০০ সালে কর্মসূত্রে বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চলে আসেন। তিনি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কেমিক্যাল ল্যাবরেটরিতে কর্মরত। মা সঞ্চিতাদেবী গৃহবধূ। দু’জনেই খেয়াল রেখেছেন ছেলের পড়াশোনায়। তাঁরা জানান, টিউশন ছিল সব বিষয়েই। তবে ছেলের পাশে সব সময় দাঁড়ালেও এত ভাল ফলাফলের জন্য টেস্ট পরীক্ষার পরে ছেলের অধ্যবসায়কেই আগে রাখছেন দু’জনেই। তাঁদের কথায়, ‘‘অসম্ভব পরিশ্রম করেছে ছেলে। তার-ই ফল পেয়েছে।’’ তাঁরা জানান, মেধাতালিকায় নাম উঠেছে ছেলের, তার থেকে খুশির আর কী হতে পারে। সৌকর্যের স্কুলের প্রধানশিক্ষক তরুণ দাস বলছেন, ‘‘খুব খুশি হয়েছি। ওর কাছে এমন ফলই প্রত্যাশিত ছিল।’’

সৌকর্য জানায়, ক্রিকেট ও ছবি আঁকা, যন্ত্রসঙ্গীতে সমান ঝোঁক তার। উসেইন বোল্ট তার অনুপ্রেরণা। বাড়িতে নানা ট্রফির ছড়াছড়ি। ‘‘ভবিষ্যতে শিক্ষক হতে চাই’’— এমনই বলছে মেধাতালিকার নবম স্থানাধিকারী।

এ বার সিউড়ির নেতাজি বিদ্যাভবন স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে ৬৮১ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় ১০ নম্বরে স্থান পেলেও অরিত্রের পড়াশোনা সিউড়ির সরোজিনীদেবী সরস্বতী শিশুমন্দিরে। রেজিস্ট্রেশনের কিছু সমস্যার জেরে অন্য স্কুল থেকে ওই পরীক্ষায় বসে সে। তাঁর পরিজনেরা জানান, ছোট থেকেই পড়াশোনায় তুখোড় অরিত্র মাধ্যমিকে ভাল ফল করবে, এমন আশা ছিল তার অভিভাবক থেকে শিক্ষক, সকলেরই। মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর— বাংলায় ৯৬, ইংরেজিতে ৯৮, গণিতে ১০০, ভৌতবিজ্ঞানে ৯৭, জীবনবিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাসে ৯৫ ভূগোলে ৯৮।

মেধাতালিকায় ছেলের নাম ওঠায় সিউড়ি ভট্টাচার্যপাড়ার বাড়িতে আবেগে ভাসছেন অরিত্রের বাবা-মা। বাবা বিমল মাহারা, মা চৈতিদেবীর কথায়, ‘‘অনেক কষ্ট করেই পড়াতে হয়েছে ছেলেকে। ভাল ফল করবে আশা ছিল।’’ যদিও আরও ভাল ফলের আশা ছিল বলে জানিয়েছে অরিত্র।

পরিজনেরা জানান, পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পরিবারের অর্থনৈতিক বাধার বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে অরিত্রকে। বিমলবাবু ক্যাটারিং সংস্থার হয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দিনে ২০০-২৫০ টাকা পারিশ্রমিকে খাবার পরিবেশন করা। চৈতিদেবী বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছোট ছোট বাচ্চাদের টিউশনি পড়ান। একান্নবর্তী পরিবারে অন্য পরিজনদের সাহায্য আর স্কুলের শিক্ষকদের পাশে থাকার জন্যই লড়াইয়ে সাফল্য মিলেছে বলে জানিয়েছে অরিত্র। সাত জন গৃহশিক্ষক ছিলেন তার। তাঁদের অনেকেই বিনা বেতনে পড়িয়েছেন।

চিকিৎসক বা ইঞ্জিনিয়ার নয়, বড় হয়ে আইএএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন দেখে মাহারা পরিবারের ওই সন্তান। ভৌতবিজ্ঞান আর গণিত প্রিয় বিষয়। রয়েছে ক্রিকেট খেলা আর টেলিভিশনে কার্টুন দেখার শখ। ক্যুইজেও আগ্রহ রয়েছে। ‘‘কিন্তু পরীক্ষার জন্য সব কিছুকে পিছনে ঠেলে পড়াশোনাকেই ‘পাখির চোখ’ করেছিল ছেলে’’— এমনই বলছেন অরিত্রর বাবা, মা।

মাত্র ২ নম্বরের জন্য মাধ্যমিকে রাজ্যের মেধা তালিকায় নাম ওঠেনি। তাতে আক্ষেপের শেষ নেই জিগীষা মণ্ডলের। সাঁইথিয়া যোগেশ্বরী দত্ত উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এ বার ৬৭৯ নম্বর পেয়েছে সে। সাঁইথিয়ার রথতলাপাড়ায় বাড়ি জিগীষার। বাবা নবীনচন্দ্র মণ্ডল স্থানীয় একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধানশিক্ষক। মা শিউলিদেবী গৃহবধূ। একমাত্র সন্তান জিগীষা। সে জানায়, আবৃত্তি করতে, গান শুনতে ভালবাসে। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করে কলেজ-শিক্ষক হতে চায়। কিন্তু এই ফলাফলে খুশি হতে পারছে না সে। তাই বাংলা বিষয়ে ‘রিভিউ’ করানোর কথা ভাবছে। তার কথায়, ‘‘২ নম্বরের জন্য মেধা তালিকায় ঠাঁই পেলাম না বলে খুব আফশোস হচ্ছে। রিভিউ করলে ওই উঠে আসবে বলে আমি নিশ্চিত।’’

সহ-প্রতিবেদন: অর্ঘ্য ঘোষ

Madhyamik Result 2019 Birbhum Saborni Chatterjee Madhyamik Result মাধ্যমিক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy