Advertisement
০৪ মে ২০২৪

আশ্বাস জেলা প্রশাসনের, বিদেশি সংস্থাকে রুখতে বিডিও’র কাছে শ্রমিকেরা

তোলাবাজি, শ্রমিক অসন্তোষ ও চুরির অভিযোগ তুলে খয়রাশোল ও দুবরাজপুর থেকে কারবার গুটিয়ে ফেলতে চাইছে সিপিএফ নামে তাইল্যাণ্ডের একটি সংস্থা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ০১:৫০
Share: Save:

বিদেশি সংস্থার চলে যাওয়া রুখতে ফার্ম মালিকদের পর এ বার স্থানীয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেন শ্রমিকেরা।

তোলাবাজি, শ্রমিক অসন্তোষ ও চুরির অভিযোগ তুলে খয়রাশোল ও দুবরাজপুর থেকে কারবার গুটিয়ে ফেলতে চাইছে সিপিএফ নামে তাইল্যাণ্ডের একটি সংস্থা। সংস্থার প্রকল্পে নিজেদের লগ্নি বাঁচাতে বুধবরাই দুবরাজপুরের বিডিও’র দ্বারস্থ হয়েছিলেন দুবরাজপুরের দুই ফার্ম মালিক।

শুক্রবার খয়রাশোলের বিডিও’র কাছে একই আবেদন জানান কাজ হারানো জনা পঞ্চাশেক শ্রমিক। বামপন্থী শ্রমিক সংগঠনের ছাতার তলায় সেই আবেদন জানান তাঁরা। বিডিও সঞ্জয় দাস বলে, ‘‘সমস্যাটা ঠিক কোথায়, তা নিয়ে দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বোঝার চেষ্টা করব। তারপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’’

সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, খয়রাশোলের বারাবনে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থায় ডিম থেকে মুরগিছানা ফোটানো ও মুরগির খাবার তৈরির মতো দুটি একটি বিশাল ইউনিট গড়তে চেয়েছিল ওই বিদেশি সংস্থা। জায়গা কিনে সেখানে প্রকল্পের কাজে হাতও দেয় সংস্থা। পাশাপাশি পোল্ট্রি ফার্ম রয়েছে, এমন কিছু মুরগি খামার মালিকের সঙ্গে ২০১৩ সালে ১৫ বছরের চুক্তি করে সংস্থা। খয়রাশোলের চুয়াগড়, নাকড়াকোন্দা, খরিকাবাদ এবং দুবরাজপুরের বালিজুড়ি গ্রামের অদূরে দুটি বিশাল ফার্মের সঙ্গে মাসে বর্গফুট পিছু ১ টাকা ২৫ পয়সা হিসাবে চুক্তি হয়। খয়রাশোলের তিনটি ফার্ম ২ লক্ষ ৪১ হাজার বর্গফুটের তিনটি খামারের অংশীদার স্থানীয় ১৩ জন বাসিন্দা। দুবরাজপুরের ৪৯ হাজার বর্গফুটের ফার্মের অংশীদার চার জন। নিজেরা প্রচুর টাকা লগ্নি করে বিদেশি ওই সংস্থার চাহিদা মতো ফার্মগুলিকে তাঁরা গড়ে দেন। এরপরই ডিম উৎপাদনের জন্য ওই বিদেশি সংস্থা ফার্মগুলি নিজেদের দখলে নেয়। কাজ নিযুক্ত হন প্রচুর শ্রমিক।

বছর আড়াই চলার পর শ্রমিক সমস্যা, চুরি ও জুলুমবাজির অভিযোগ তুলে সেই চুক্তি ভেঙে গত বছরে তিন ধাপে খয়রাশোলের তিনটি ফার্মের সঙ্গেই চুক্তি বাতিল করে সংস্থা। দুবরাজপুরের ফার্মগুলিকে লিখিত ভাবে না জানালেও চুক্তিবাতিল হচ্ছে সেটা জানিয়ে দেওয়া হয়। তাতেই বিপাকে পড়েন ফার্ম মালিক ও কাজের সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু শ্রমিক।

সিপিএফের জেলায় প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার সন্দীপ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, ‘‘শ্রমিক সমস্যা ছিলই। তারপর অন্তত বার দশেক চুরির ঘটনা ঘটেছে। ক্রমশ লোকসানের মুখে পড়ছিল সংস্থা। অথচ প্রশাসন কোনও সাহায্য করেনি।’’ জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী অবশ্য অসহযোগিতার অভিযোগ মানেননি। তাঁর কথায়, ‘‘মাস আটেক আগে সংস্থার পক্ষ থেকে ওঁরা এসেছিলেন। ঠিক কী অসুবিধা হচ্ছে সেটাই স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি। আমি বলেছিলাম, কোথায় সমস্যা হচ্ছে নির্দিষ্টভাবে বলুন। আমি ব্যবস্থা নেব। তারপর আর কেউ যোগাযোগ করেননি। তবু আমি দেখছি।’’

ফার্ম মালিকদের বক্তব্য ছিল, এ ভাবে মাঝপথে সংস্থা সরে গেলে তাঁরা ব্যাঙ্ক ঋণের মুখে পড়বেন। শুক্রবার খয়রাশোলের বিডিও’র দ্বারস্থ শ্রমিক আমিত বাউড়ি, চন্দন বাউড়ি, পূর্ণচন্দ্র দাস, রণজিত বাউড়িরা বলেন, ‘‘এখন কাজ পাব কোথায়? প্রশাসন বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BDO Workers Farm
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE