Advertisement
০৫ মে ২০২৪

অতীত ফিকে, সাজছে ডিএম অফিস

ইতিহাসের ছেঁড়াপাতা ঘেঁটে পুরুলিয়া শহর গড়ে ওঠার কিছু কথা জানা গেলেও এখনও আলো পড়েনি পুরুলিয়া জেলাশাসকের কার্যালয়ের অতীতের উপর। যে ভবনকে ঘিরে এই জেলার ওঠাপড়া, তার ইতিহাসই এখনও আঁধারে। জেলার ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন বা জেলার জনপদগুলি নিয়ে যাঁরা গবেষণা করছেন তাঁদের কাছেও এই বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। ইতিহাস বলছে, আজকের পুরুলিয়া একদা ছিল পাঁচেট জেলার অধীনে। এই জেলা গড়ে উঠেছিল ১৭৭৩ সালে। জেলা সদর ছিল রঘুনাথপুর।

জেলার ইতিহাসের ওঠাপড়ার বহু ইতিহাসের সাক্ষী জেলাশাসকের কার্যালয়। বদলাতে চলেছে এই ছবি । ছবি: সুজিত মাহাতো।

জেলার ইতিহাসের ওঠাপড়ার বহু ইতিহাসের সাক্ষী জেলাশাসকের কার্যালয়। বদলাতে চলেছে এই ছবি । ছবি: সুজিত মাহাতো।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:২৩
Share: Save:

ইতিহাসের ছেঁড়াপাতা ঘেঁটে পুরুলিয়া শহর গড়ে ওঠার কিছু কথা জানা গেলেও এখনও আলো পড়েনি পুরুলিয়া জেলাশাসকের কার্যালয়ের অতীতের উপর। যে ভবনকে ঘিরে এই জেলার ওঠাপড়া, তার ইতিহাসই এখনও আঁধারে।

জেলার ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন বা জেলার জনপদগুলি নিয়ে যাঁরা গবেষণা করছেন তাঁদের কাছেও এই বিষয়ে কোনও সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।

ইতিহাস বলছে, আজকের পুরুলিয়া একদা ছিল পাঁচেট জেলার অধীনে। এই জেলা গড়ে উঠেছিল ১৭৭৩ সালে। জেলা সদর ছিল রঘুনাথপুর। পরবর্তীকালে বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, মেদিনীপুর ও পাঁচেটের জঙ্গল এলাকা নিয়ে ১৮০৫ সালে এই জেলা ভেঙে গঠন করা হয় জঙ্গলমহল জেলা। ওই নতুন জেলার সদর হয় বাঁকুড়া। জঙ্গলমহল ভেঙেই ১৮৩৩ সালে গড়ে তোলা হয় মানভূম জেলা। জেলা সদর প্রথমে হয় মানবাজার, পাঁচ বছর পরে পুরুলিয়া।

মানভূম জেলার আয়তন বিরাট ছিল। এর মধ্যে ছিল পুরুলিয়া মহকুমা, ধানবাদ মহকুমা আর ধলভূম মহকুমা। চান্ডিল, ইচাগড়, পটমদা, চাষ, চন্দনকিয়ারী, ধানবাদ, ঝরিয়া, পান্ড্রা-পোদ্দারডি, ছাতনা, সুপুর, রাইপুর, অম্বিকানগর, সিমলাপাল, ফুলকুসমা, ভেলাইডিহা, শ্যামসুন্দরপুর প্রভৃতি মানভূম জেলার মধ্যে ছিল।

১৮৪৬ সালে ছাতনা বাঁকুড়ায় যুক্ত হয়। ১৮৭৯ সালে সুপুর, রাইপুর, অম্বিকানগর, সিমলাপাল, ফুলকুসমা, ভেলাইডিহা, শ্যামসুন্দরপুর বাঁকুড়ায় যুক্ত হয়। ১৮৪৫ সালে ধলভূম পরগনাকে সিংভূমে যুক্ত করা হয়। ১৮৩৮ সালে এই জেলার জেলা সদর স্থানান্তরিত হল পুরুলিয়ায়। তখন মানভূম ছিল বিহার প্রদেশের অন্তগর্ত। পরবর্তীকালে ১৯৫৬-তে মানভূম ভেঙে পুরুলিয়া পশ্চিমবঙ্গের ষোড়শ জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

গবেষকরা মনে করছেন, জেলা গঠনের পর থেকে এই জেলার সদরের ঠিকানা বারবার বদল হয়েছে। শুধু তাই নয়, প্রথমে বিহার পরে পশ্চিমবঙ্গ, এ ভাবে রাজ্য বদলের কারণে ইতিহাস রয়ে গিয়েছে পুরনো নথির অভ্যন্তরে। পুরুলিয়ার জনপদের গবেষক দিলীপ গোস্বামীর কথায়, “পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনিক ভবন কখন তৈরি হয়েছিল সেই ইতিহাস পাওয়া যায় না। পুরুলিয়ার জনপদগুলির ইতিহাস লিখতে গিয়ে আমি বহু জায়গায় খোঁজ করেছি, কিন্তু ওই তথ্য পাইনি। এমনকী ওই তথ্য খুঁজতে আমি জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুমেও গিয়েছি। খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে।”

তিনি জানান, শুধু তিনিই নয়, পুরুলিয়ার ইতিহাসবিদ প্রয়াত অনিল চৌধুরীও দীর্ঘকাল কাজ করেছেন পুরুলিয়ার নানা বিষয়ের উপরে। তাঁর কাছেও গিয়েছি। কিন্তু তিনিও জেলাশাসকের কার্যালয় সর্ম্পকে কোনও তথ্য দিতে পারেননি।

সাবেক মানভূম জেলার সদর হিসেবে পুরুলিয়া বাছাইয়ের পরেই এই কার্যাঢ়য় তৈরি হয়েছিল কি না, ভবনের গায়ে তার কোনও নিদর্শনও এখন দেখা যায় না। তাই এ নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েই গিয়েছে। তবে ভবনের নির্মাণ শৈলী দেখে গবেষকদের ধারনা এই ভবন অবশ্যই ইংরেজ আমলেই তৈরি হয়েছিল। এই শহরের আর এক প্রবীণ বাসিন্দা তথা পঞ্চকোট রাজবংশের উত্তরসূরী ভগবতীপ্রসাদ সিংহ দেও বলেন, “জেলা প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের সঠিক দিনক্ষণ পাওয়া যায় না। তবে প্রথম থেকেই তত্‌কালীন ডেপুটি কমিশনারের কাযার্লয় এখানেই ছিল বলে জানা যায়।”

বর্তমান জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীও জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসনিক মূল ভবনের নির্মাণ কখন হয়েছিল সে বিষয়ে কোনও তথ্য তাঁরাও খুঁজে পাননি।

তবে প্রাচীন এই ভবন সংস্কারে নামতে চলেছে জেলা প্রশাসন। জানা গিয়েছে, জেলাশাসকের দফতরের একাংশ ভেঙে নতুন ভবন তৈরি করা হবেয় এ নিয়ে সম্প্রতি প্রশাসনিক মহলে একটি বৈঠকও হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, জেলাশাসকের মূল অফিসটি ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে, তা ভাঙা হবে না। প্রয়োজন অনুযায়ী সেখানে কিছু সংস্কারের কাজ হবে। তবে ওই ভবনের আশপাশে থাকা ছোটখাটো নির্মাণ ভেঙে ফেলা হবে। সেখানে আধুনিক মানের বহুতল অফিস গড়ে তোলা হবে। তৈরি করা হবে নতুন প্রবেশ পথ। কাজের প্রয়োজনে আসা লোকজনের জন্য শৌচালয়, সাইকেল বা গাড়ি রাখারও জায়গা নতুন করে গড়ে তোলা হবে। এই কাজের জন্য প্রশাসনিক কর্মীবর্গ সংস্কার দফতর ইতিমধ্যেই সাড়ে তিন কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে।

শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা অফিসগুলোকে নতুন ভবনে সরিয়ে নিয়ে আসা হবে। এক ছাদের তলায় সমস্ত নিয়ে আসাই শুধু নয়, সামগ্রিক ভাবে কাজে গতি আনার জন্য কর্মপদ্ধতিও বদলানো হবে বলে প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন।

জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর কথায়, “অফিসে কাজে গতি আনার জন্য কাজের পরিবেশ অত্যন্ত জরুরি। দেওয়ালে ঝুল, একদিকে নতুন-পুরনো ফাইলের পাহাড়, অন্যদিকে বড় বড় আলমারি ঠাসা কাগজপত্র, কর্মীদের ভালো ভাবে বসার জায়গাও নেই এই ছবি বদলাতে চাইছি।” তিনি জানান, কাজের পদ্ধতি এখন অনেক বদলে গিয়েছে। কাগজপত্রের সঙ্গে কম্পিউটারেও তথ্য ধরে রাখা ও প্রয়োজনে নিমেষের মধ্যে তা অন্যত্র পাঠানো জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই এই পরিবর্তন সময়ের চাহিদায় জরুরি হয়ে পড়েছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাশাসকের পুরো কাযার্লয় ই-অফিস হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই কাজের জন্য জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে যত ফাইল রয়েছে তা কম্পিউটারে তুলে রাখার জন্য স্ক্যানিং ডিজিটাইজেশন অব লিগ্যাসি ডেটা স্ক্যান করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। স্ক্যানের কাজ শেষ হয়ে গেলে পুরনো ফাইলগুলিকে সযত্নে আলমারিতে তুলে রাখা হবে। সে জন্য একটি রেকর্ড রুমও তৈরির ভাবনা রয়েছে।

প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, কাজের জন্য হন্যে হয়ে সাধারণ মানুষকে যাতে অমুকবাবু তমুকবাবুর খোঁজে দিনের পর দিন এসে জুতোর শুকতলা খোয়াতে না হয়, সে জন্য সমস্ত দফতর অনলাইনে জুড়তে চাইছে জেলা প্রশাসন। এতে সহজেই কম্পিউটারে এক দফতরে গিয়েই সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে। নির্দিষ্ট কর্মীর অভাবে ফাইল খুঁজে না পাওয়ার ঝক্কি থাকবে না। জেলাশাসক বলেন, “যেহেতু গোটা অফিসটাই ই-অফিস হয়ে যাবে। এতে ফাইল সহজে পাওয়া যাবে। যাঁরা এই দফতরে কাজে আসবেন, তাঁদেরও সুবিধা হবে।”

জেলা প্রশাসনের মূল কেন্দ্রের খোলনলচে বদলে ফেলার কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। চেষ্টা করা হচ্ছে কাজের পদ্ধতি বদলানোরও। কিন্তু কর্মসংস্কৃতি কি ফিরে আসবে? অপেক্ষায় জেলাবাসী।

ভ্রম সংশোধন

হরিপদ সাহিত্য মন্দিরের বাড়ি তৈরি করে দেন হরিপদ দাঁ। বুধবার এই সংস্করণের আমার শহর- পুরুলিয়ায়

হরিপদবাবুর পদবি খাঁ লেখা হয়েছে। এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

কেমন লাগছে আমার শহর?

নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান। ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর পুরুলিয়া-বাঁকুড়া। ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp। অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, পুরুলিয়া-বাঁকুড়া বিভাগ, জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE