বিয়ের বছর ঘুরতেই কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হলেন দম্পতি। বাঁকুড়ার ওন্দা থানার বহড়ামুড়ি গ্রামের ওই ঘটনার জন্য মৃত বধূর পরিবার শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনকে দায়ী করছেন। এলাকাবাসীও বধূর বাপের বাড়ির অভিযোগকে সমর্থন করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দম্পতি হলেন স্বপন মণ্ডল (২৭) ও চন্দনা মণ্ডল (২১)। মঙ্গলবার গ্রামের লোকজন দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে খাটে স্বামী-স্ত্রীর নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। ঘরের ভিতর থেকে কীটনাশকের একটি বোতল উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, ওই দম্পতি কীটনাশক খেয়েই আত্মঘাতী হয়েছেন। চন্দনার বাবা তাঁর শ্বশুর তরণী মণ্ডল, শাশুড়ি আন্নাদেবী, ভাসুর মিলনকৃষ্ণ ও জা যূথিকার বিরুদ্ধে ওন্দা থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “অভিযুক্ত চার জনকে আপাতত আটক করে জেরা করা হচ্ছে। মৃতদেহ বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলেই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বোঝা যাবে।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, তরণীবাবু সম্পন্ন কৃষক। গ্রামে প্রচুর জমিজমা আছে। দোতলা বড় বাড়ি তাঁদের। গত বছর মার্চ মাসে ওই গ্রামেরই মেয়ে চন্দনার সঙ্গে তরণীবাবুর ছোট ছেলে স্বপনের দেখাশোনা করে বিয়ে হয়। বাড়ির নীচের তলায় থাকতেন স্বপন আর চন্দনা। চন্দনার পরিবারের অভিযোগ, বিয়েতে নগদ টাকা এবং বেশ কিছু আসবাবপত্র যৌতুক হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও গরিব ও অশিক্ষিত অপবাদ দিয়ে বিয়ের পর থেকে চন্দনাকে নির্যাতন করা হত শ্বশুরবাড়িতে। চন্দনার বাবা শিবদাস লাহার দাবি, “ছেলের বাড়ি থেকেই বিয়ের সম্বন্ধ এসেছিল। প্রথমে এত বড়লোক ঘরে আমরা বিয়ে দিতে রাজি হইনি। তরণীবাবুই চন্দনাকে নিজের মেয়ের মতো রাখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু, বিয়ের পর থেকেই তরণীবাবু ও তাঁর বাড়ির অন্যদের মনোভাব বদলে যায়।”
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে চন্দনার পরিবার জানিয়েছে, চন্দনাকে চাকরের মতো খাটানো হত। শারীরিক অত্যাচারও চলত। শিবদাসবাবু বলেন, “জামাই ছিল নিরীহ ছেলে। বাবা-মাকে ভয় পেত সে। স্ত্রীকে অপমান ও অত্যাচার করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ওকেও সবার বিষনজরে পড়তে হয়েছে। পৈতৃক সম্পত্তি থেকে ওকে বে-দখল করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন এ রকম অপমানের শিকার হতে হতে ও নিজের স্ত্রীকে অন্যের কাছে লাঞ্ছিত হতে দেখে জামাই আর আমার মেয়ে চরম পথ বেছে নিয়েছে বলে ধারণা।”
চন্দনার বাবার আরও অভিযোগ, ঘটনার আগের দিন সোমবার দুপুরে চন্দনার উপরে চড়াও হন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। চুলের মুঠি ধরে তাঁকে মারধর করা হয়। প্রতিবেশীদের কাছে খবর পেয়ে রাতে সেখানে যান শিবদাসবাবু। তাঁকেও অপমান করে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর পর মঙ্গলবার বেলা ১১টা পর্যন্ত চন্দনা ও স্বপন ঘরের দরজা খোলেননি। পড়শিরা জানলা দিয়ে দেখেন খাটে দু’জনেই তখনও শুয়ে। তাতেই তাঁদের সন্দেহ হয়। এর পরেই ঘরের দরজা ভেঙে দু’জনকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।
বহড়ামুড়ি গ্রামটি ওন্দা ব্লকের মেদিনীপুর পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য শ্যামল মাজিও বলেন, “শ্বশুরবাড়িতে ওই বধূকে নির্যাতন করা হত বলে প্রায়ই অভিযোগ উঠত। ঘটনার আগের দিনও ওই বাড়িতে ঝগড়া হয়েছিল। তার পরেই এই ঘটনা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy