Advertisement
১৮ মে ২০২৪

উন্নয়ন অধরা, অভিমানে চেলিয়ামা

বয়স ছাড়িয়েছে কয়েক শতাব্দী। কিন্তু সেই চেলিয়ামা এখনও উন্নয়নের বৃত্তে পুরোপুরি আসেনি। ফলে নিকাশি থেকে শুরু করে রাস্তা, পরিবহণ এমনকী স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েও বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে মানুষজনের মধ্যে। দামোদরের ওপারে ঝাড়খণ্ডের করগালিঘাট। কিন্তু দুই পাড়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সেতু দাবি তোলা হলেও তা আজও হয়নি। ওই সেতু হলে চেলিয়ামা থেকে ধানবাদের দূরত্ব কমে আসত ২৫-২৭ কিলোমিটার।

বাস দাঁড়ালেও নেই যাত্রী প্রতীক্ষালয় ও শৌচাগার।—নিজস্ব চিত্র।

বাস দাঁড়ালেও নেই যাত্রী প্রতীক্ষালয় ও শৌচাগার।—নিজস্ব চিত্র।

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল
চেলিয়ামা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩৮
Share: Save:

বয়স ছাড়িয়েছে কয়েক শতাব্দী। কিন্তু সেই চেলিয়ামা এখনও উন্নয়নের বৃত্তে পুরোপুরি আসেনি। ফলে নিকাশি থেকে শুরু করে রাস্তা, পরিবহণ এমনকী স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়েও বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে মানুষজনের মধ্যে।

দামোদরের ওপারে ঝাড়খণ্ডের করগালিঘাট। কিন্তু দুই পাড়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সেতু দাবি তোলা হলেও তা আজও হয়নি। ওই সেতু হলে চেলিয়ামা থেকে ধানবাদের দূরত্ব কমে আসত ২৫-২৭ কিলোমিটার। উচ্চশিক্ষা, চিকিত্‌সা, জীবিকার সন্ধানে এলাকার বাসিন্দাদের ছুটতে হতো না ৫০ কিলোমিটার দূরের পুরুলিয়া বা ৭০ কিলোমিটার দূরের আসানসোলে। এলাকার চিকিত্‌সক সৌমিত্র চক্রবর্তীর অভিমান, “হয়তো এই রাজ্যের প্রান্তে ঝাড়খণ্ডের একদম লাগোয়া হওয়াতেই চেলিয়ামায় সার্বিক উন্নয়নের ছোঁয়া এখনও পুরোপুরি লাগেনি।”

রঘুনাথপুর ২ ব্লকের সদর চেলিয়ামার জনসংখ্যা কমবেশি ১৫ হাজার। ব্রাক্ষণ পাড়া, ধীবর পাড়া, পরামানিক পাড়া, বাজার পাড়ার মতো অন্তত ১২-১৫টি পাড়া মিলে এই ব্লক সদর। হাইস্কুলের সংখ্যা দু’টি। প্রাথমিক স্কুল রয়েছে চারটে। ব্লক সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে উষীরে বছর পাঁচেক আগে তৈরি হয়েছে কলেজ। ফলে শিক্ষার সমস্যা প্রকট না হলেও সমস্যা রয়েছে নূন্যতম নাগরিক পরিষেবার ক্ষেত্রে। বিশেষ করে নিকাশির অব্যবস্থা নিয়ে জেরবার এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, লোকালয় ও বাজারে নিকাশি নালা নেই। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, বর্ষাকালে বাজার করা নরক যন্ত্রণা ভোগ করার সামিল। বাজার পাড়ার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক গনেশ আড্ডি বলেন, “আসলে এখানে কোনওদিনই পরিকল্পিত ভাবে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে বছরভরই সমস্যায় ভুগতে হয় বাসিন্দাদের।”

শুধু নিকাশিই নয়, সমস্যা রয়েছে রাস্তাঘাটের ক্ষেত্রেও। শহরের মধ্যে রাস্তাগুলি অত্যন্ত সংকীর্ণ। ভুক্তভোগীদের মধ্যে একটা কথা চালু রয়েছে, দিনের বেলায় ব্যস্ত সময়ে একটা ছোট গাড়ি বাজার এলাকায় ঢুকে পড়লেই হয়ে গেল! রাস্তা পার হতে দিন কাবার! বাস্তবিকই সমস্যাটা খুবই প্রকট সুপার মার্কেট এলাকায়। অভিযোগ, এই বাজারে সাইকেল স্ট্যান্ড নেই। ফলে বাজারে আসা লোকজন রাস্তার উপরেই সাইকেল রেখে বাজার সারেন। সে জন যানজট দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে নিকাশি সমস্যা বা সঙ্কীর্ণ রাস্তার জন্য কিন্তু প্রশাসনের একাংশ দায়ী করছে বাসিন্দাদের জন সচেতনতার অভাবকেই।

প্রশাসনের ওই অংশের বক্তব্য, বড় নালা তৈরির জন্য যে পরিমাণ জায়গা লাগে, বাড়ি তৈরির সময়ে সেই জায়গাটুকুও ছাড়তে রাজি নন অনেক বাসিন্দা। আবার বাড়ি তৈরি করতে গিয়ে অনেকে রাস্তা পর্যন্ত এগিয়ে আসেন। যার জেরে জায়গার অভাবে বড় নিকাশি নালা নির্মাণে জমির সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আবার শতাব্দী প্রাচীন এই জনপদে কখনই পরিকল্পিত ভাবে নিকাশি ব্যবস্থা তৈরি না হওয়ায় শহর বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যা আরও বাড়ছে বলে মত প্রশাসনের একাংশের। বিডিও উত্‌পল ঘোষ বলেন, “বহু প্রাচীন এই শহরে নিকাশি ব্যবস্থা পরিকল্পিত ভাবে তৈরি হয়নি। আবার জমির অভাবও রয়েছে। তবুও আমরা নিকাশি ব্যবস্থা ভালো করার চেষ্টা করছি।” তিনি জানান, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় নিকাশি নালা তৈরি করার প্রস্তাব জেলায় পাঠানো হয়েছে।”

এই ব্লক সদরে বাসস্ট্যান্ড নিয়েও অভিযোগের অন্ত নেই। বড় ও ছোট বাস মিলিয়ে দিনে প্রায় ২৫টি বাস ছাড়ে চেলিয়ামা থেকে। অটো বা ম্যাজিক গাড়ির মতো ভাড়া গাড়ি চলে প্রায় ৭৫টি। ব্লক অফিসের অদূরে যে এলাকায় গাড়িগুলি ছাড়ে, সেখানে বাসস্ট্যান্ড গড়ে ওঠেনি। নেই যাত্রী প্রতীক্ষালয়, নেই শৌচাগার, নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। রোদ-বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নীচেই যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়। আবার পকোড়ি মোড়ে বছর তিনেক আগে বাসস্ট্যান্ড তৈরি হলেও শুরুই হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা তথা কংগ্রেস নেতা অনিমেষ চারের কথায়, “বাসস্ট্যান্ড নিয়ে একটা অদ্ভুত সঙ্কট চলছে। যেখানে বাস দাঁড়ায়, তা বাসস্ট্যান্ড নয়। আবার যেখানে বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়েছে, সেখানে বাসই দাঁড়ায় না।” তাঁর অভিযোগ, বহুবার পঞ্চায়েত সমিতিকে সমস্যার কথা জানিয়েও লাভ হয়নি। তবে বিডিও-র আশ্বাস, “দ্রুত নতুন বাসস্ট্যান্ডটি চালু করা হবে।”

ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে চেলিয়ামার পাশের বান্দা মৌজায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেখানেও নৈরাজ্যও। নেই পাঁচিল, নেই সরকারি অ্যাম্বুল্যান্স। রাতে লোডশেডিং হলে অন্ধকারেই ডুবে থাকে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কারণ স্বাস্থ্যকর্মীরা জানাচ্ছেন, সাড়ে তিন দশকের পুরনো এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখনও জেনারেটারের ব্যবস্থাই নেই। তবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মূল সমস্যা চিকিত্‌সকের অভাব। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, ব্লকের জনসংখ্যা ১,০৭,৭৫০। এই লক্ষাধিক লোকের চিকিত্‌সার ভরসাস্থল মাত্র ৩০ শয্যার এই ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিত্‌সকের সংখ্যা মাত্র দুই।

ব্লক স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দৈনিক গড়ে ৩০০-র বেশি রোগীর বহির্বিভাগে চিকিত্‌সা হয়। শয্যার অভাবে মাটিতে বিছানা পেতেই শুতে হয় রোগীদের। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক পলাশ মল্লিক অবশ্য বলেন, “ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিত্‌সকের অপ্রতুলতার বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জেনারেটারের ব্যবস্থা করার আবেদনও জানানো হয়েছে।”

আবেদনের পাহাড় টপকে উন্নয়ন কবে আসে, তাকিয়ে চেলিয়ামা।

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।

ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ। subject-এ লিখুন ‘আমার শহর পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া’।

ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানান: www.facebook.com/anandabazar.abp

অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া বিভাগ,

জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE