Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

একশো দিন কাজের টাকা আত্মসাত্‌, নালিশ

পুকুরে জল ভর্তি। অথচ সেই পুকুরে ১০০ দিন প্রকল্পে মাটি কাটার কাজে গ্রামের ১৫৮ জন শ্রমিকের নামে মাস্টার রোল তৈরি হয়েছে এবং ‘পেমেন্ট সিটে’ ৫০০০ টাকা করে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ দেখানো হয়েছে। ভুয়ো মাস্টার রোল তৈরি করে টাকা আত্মসাত্‌ করার এমনই অভিযোগ উঠেছে মুরারই থানার দুলান্দি গ্রামে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মুরারই শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৩
Share: Save:

পুকুরে জল ভর্তি। অথচ সেই পুকুরে ১০০ দিন প্রকল্পে মাটি কাটার কাজে গ্রামের ১৫৮ জন শ্রমিকের নামে মাস্টার রোল তৈরি হয়েছে এবং ‘পেমেন্ট সিটে’ ৫০০০ টাকা করে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ দেখানো হয়েছে। ভুয়ো মাস্টার রোল তৈরি করে টাকা আত্মসাত্‌ করার এমনই অভিযোগ উঠেছে মুরারই থানার দুলান্দি গ্রামে। এলাকার বাসিন্দারা মুরারই ১ ব্লকের বিডিও থেকে রামপুরহাট মহকুমাশাসকের কাছে গণস্বাক্ষরিত স্মারকলিপি দিয়ে দুর্নীতির তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বিডিও আবুল কালাম বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস জানান, এই অভিযোগের ব্যাপারে তিনি জেলাশাসককে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।

মুরারই ১ ব্লকের পলসা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত দুলান্দি। এলাকায় মেয়েদের শিক্ষা এবং পরিবার পিছু আয়ের অবস্থান দেখে দীর্ঘদিন আগে এই গ্রাম সরকারি খাতায় পিছিয়ে পড়া গ্রাম বলে চিহ্নিত। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘ সাত বছর ধরে গ্রামে ১০০ দিন প্রকল্পে কোনও কাজ হয়নি। এ রকম অবস্থায় গ্রামে সম্প্রতি পঞ্চায়েত থেকে নিকাশি নালা সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে শ্রমিকদের একাংশ পঞ্চায়েত অফিস থেকে জানতে পারেন, তাঁদের মধ্যে ১৫৮ জন শ্রমিকের নাম গ্রামের ‘দানেশ পুকুরে’ মাটি কাটার কাজে যুক্ত আছে। গ্রামবাসী রাকিমুদ্দিন শেখ বলেন, “ওই সমস্ত শ্রমিকদের নাম ১০০ দিন কাজের মাস্টার রোলে দানেশ পুকুরের মাটি কাটার কাজের সঙ্গে যুক্ত আছে দেখে তাঁদেরকে পঞ্চায়েতের নিকাশি নালা সংস্কারের কাজে নেওয়া যাবে বলে জানিয়ে দেয় পঞ্চায়েত। অথচ দানেশ পুকুর জলে ভর্তি। প্রায় ১ কেজি ওজনের মাছ পুকুরে আছে। তা হলে কি করে মাস্টার রোলে দানেশ পুকুরে মাটি কাটার কাজের জন্য তাঁদের নাম উঠল?” গ্রামবাসী আলি রেজা বলেন, “পঞ্চায়েতের মাস্টার রোলে দেখা যাচ্ছে, দানেশ পুকুর নামে দুলান্দি গ্রামের পুকুরে ১৯ অগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ লক্ষ ৩০ হাজার ৮৪৭ টাকার মাটি কাটার কাজ হয়েছে। যার কোড নম্বর ৩২০৩০০৩। এমনকী গ্রামের তিন জন মৃত ব্যক্তির নাম ওই মাস্টার রোলে তোলা হয়েছে।” তাঁর দাবি, “দুলান্দি গ্রামের দানেশ পুকুরের অংশীদারদের একাংশও তাদের পুকুরে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত কোনও মাটি কাটার কাজ হয়নি সে কথা জেলাশাসক, এসডিও, বিডিও-র কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন।”

পলসা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান সহেলি সুলতানা বলেন, “দুলান্দি গ্রামে যে কাজের কথা বলা হচ্ছে, সে ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। তবে যতদূর জানি বিষয়টি পঞ্চায়েত সমিতির।” মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের ধীমান সাহার যুক্তি, “সমিতিতে বিভিন্ন জায়গায় কাজ চলছে। সব কাজ কি একজন সভাপতির পক্ষে দেখা সম্ভব? তবে এক্ষেত্রে কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেহেতু বিষয়টি সকলের সামনে উঠে এসেছে এক্ষেত্রে পেমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হবে।” তিনি জানিয়েছেন, কাজের মেজারমেন্ট বুক তৈরি করেন ব্লকের টেকনিক্যাল অ্যাসিন্ট্যান্ট। এক্ষেত্রে কাজ না দেখে শ্রমিকদের মেজারমেন্ট বুক তৈরি করা হয়েছে কি না খতিয়ে দেখতে হবে। মুরারই ১ ব্লকের ১০০ দিন প্রকল্পের টেকনিক্যাল অ্যাসিন্ট্যান্ট এ মনসুর অবশ্য দাবি করেছেন, “আমাকে একটি মরা পুকুরের ছবি দেখানো হয়েছিল। সেই পুকুরটা আদৌ দানেশ পুকুর কি না সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কিন্তু এলাকায় গিয়ে পুকুরটির অবস্থা না দেখে কাজ করা হল কেন? তার অবশ্য স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mnrega money murarai appropriation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE