Advertisement
E-Paper

গিন্নিমা-র পুজোয় মাতেন সবাই

দারিদ্র থাবা বসিয়েছে জমিদার পরিবারে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সারেঙ্গা ব্লকের ধবনী গ্রামের একদা জমিদার পাল বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো এখনও জাঁকজমকে অটুট। এ বার এই জমিদার বাড়ির পুজো ১৫২ বছরে পড়ল।

দেবব্রত দাস

শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:১২
সেজে উঠেছে ধবনীর পালবাড়ির প্রতিমা। ছবি: উমাকান্ত ধর

সেজে উঠেছে ধবনীর পালবাড়ির প্রতিমা। ছবি: উমাকান্ত ধর

দারিদ্র থাবা বসিয়েছে জমিদার পরিবারে। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সারেঙ্গা ব্লকের ধবনী গ্রামের একদা জমিদার পাল বাড়ির ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো এখনও জাঁকজমকে অটুট। এ বার এই জমিদার বাড়ির পুজো ১৫২ বছরে পড়ল।

জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এক গ্রাম ধবনী। সারেঙ্গা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই গ্রাম। কথিত আছে, সারেঙ্গার পার্শ্ববর্তী ধবনী, দাঁড়কেনি, দুলেপাড়া, দুবনালা, করাপাড়া, লাউপাড়া, আমদানি, আমঝোড়, কুমারপুর, আমডাঙা-সহ ৮৫টি মৌজা নিয়ে পালেদের জমিদারি ছিল।শোনা যায়, এই পরিবারের ‘গিন্নিমা’ শ্যামাসুন্দরী পাল ১৫২ বছর আগে ধবনী গ্রামে এই দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। সেই পুজোই লোকমুখে এখন জমিদার বাড়ির পুজো নামে খ্যাত। জমিদারি চলে গেলেও পুজো অবশ্য বন্ধ হয়নি। ধবনী গ্রামের মধ্যে একমাত্র দুর্গাপুজো হয় পালবাড়িতেই। পারিবারিক এই পুজো এখন গ্রামের সকলের পুজোয় পরিণত হয়েছে। তবে এই পুজোয় কারও কাছে চাঁদা নেওয়া হয় না। পালবাড়ির তিনটি পুকুর থেকে মাছ চাষের আয় থেকেই পুজো চলে।

জমিদার বাড়ির বর্তমান বংশধর সোমপ্রকাশ পাল, শোভন পাল বলেন, “১৫০ বছর আগে ‘গিন্নিমা’ শ্যামাসুন্দরীদেবী স্বপ্নাদেশ পেয়েই বাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন বলে শুনেছি। তবে এ ব্যাপারে প্রামান্য নথি বলতে আমাদের কাছে কিছু নেই।” সে সময়ে পুজো কেমন ছিল? এই পরিবারের সদস্য অরুণ পাল, অর্ধেন্দু পাল জানান, আশেপাশের এলাকার এতগুলো মৌজার জমিদারি ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের হাতে। পুজোর চার দিন মন্দিরের সামনে মেলা বসত, যাত্রাপালা হত। আশেপাশের বহু গ্রামের মানুষ পাত পেড়ে খেতেন। পুজোর ক’টা দিন গ্রামের সবাই আমোদে মেতে থাকতেন। ঠাকুর দেখতে ভিড় উপছে পড়ত।

সোমপ্রকাশবাবু জানালেন, জমিদারির সঙ্গে বহু জমি তাঁদের হাত থেকে চলে যায়। কিছু থাকলেও এখন তা পরের হাতে। আগে সরকারি ভাবে সামান্য কিছু টাকা পাওয়া যেত। বর্তমানে তাও বন্ধ। ফলে পুজোর জলুস খানিকটা ফিকে হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “এখন তিনটি পুকুর ‘লিজে’ দেওয়া হয়েছে। তা থেকে যা টাকা পাওয়া যায় তা দিয়েই পুজোর খরচ অনেকটাই উঠে আসে। গ্রামের কারও কাছ থেকে চাঁদা নিই না। যতটা সম্ভব সাড়ম্বরে পুজো করছি।”

ধবনী গ্রামে শুধু নয়, আশেপাশের কুচলাঘাটি, আমঝোড়, কুমারপুর, আমডাঙা, দাঁড়কেনি গ্রামের মধ্যে একমাত্র পাল বাড়িতেই এই দুর্গাপুজো হয়। পুজো দেখতে তাই ফি বছর আশেপাশের বহু গ্রামের মানুষ এখনও ভিড় করেন। পারিবারিক এই পুজো তাই সর্বজনীনের চেহারা নিয়েছে। অভাব থাকলেও পাল বাড়ির পুজোয় চিরাচরিত রীতি ও প্রথা আজও অমলিন। বৈষ্ণব বা গোস্বামী মতে পুজো হয়। বলি হয় না। দশমীর রাতে গ্রাম প্রদক্ষিণ করে এটেলবাঁধ নামে একটি পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। বিসর্জন শেষে পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেন।

জমিদারি চলে গেলেও পাল বাড়ির দুর্গাপুজোয় আন্তরিকতায় ভাটা পড়েনি। বছরভর বাইরে থাকলেও পুজোর টানেই গ্রামে ফেরেন এই পরিবারের সদস্যরা। সোমপ্রকাশবাবুর কথায়, “একটা পুজোকে কেন্দ্র করে গ্রামের মানুষের সঙ্গে গোটা পরিবার এক জায়গায় আসছেন। এটা কী কম পাওয়া?”

debabrata das sarenga pujo
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy