ঘোষণা হয়েছিল দু’বছর আগে। অন্তত পাঁচ-ছয় মাস আগে জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় রিপোর্ট তৈরি করে পাঠিয়ে দিয়েছিল রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরে। বাকি ছিল শুধু বিজ্ঞপ্তি জারি। লোকসভা নির্বাচন এবং আরও কিছু কারণে সেই কাজটাই হচ্ছিল না। অবশেষে সেটাও হয়েছে। ফলে, রেলশহর আদ্রায় পূর্ণাঙ্গ থানা তৈরি এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা।
বুধবার রাতে আরও এক বার পুরুলিয়া সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে তাঁরই হাতে রয়েছে স্বরাষ্ট্র দফতর। এবং দু’বছর আগে মুখ্যমন্ত্রীই পুরুলিয়ায় এসে আদ্রায় পূর্ণাঙ্গ থানা হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। সেই ঘোষণা বাস্তবায়িত না হওয়ায় আদ্রার বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এই অবস্থায়, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আদ্রাকে থানা হিসাবে ঘোষণার বিজ্ঞপ্তি দ্রুত জারির ব্যাপারে অনুরোধ জানিয়েছিলেন কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া। এবং পুরুলিয়া জেলা পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, দু-তিন দিন আগেই সেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্বরাষ্ট্র দফতর। চলতি সফরেই আদ্রা থানার সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমানে যে তদন্তকেন্দ্রটি রয়েছে আদ্রায়, নতুন থানা ভবন তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আপাতত তদন্তকেন্দ্রেই থানার কাজকর্ম হবে।
স্বপনবাবু নিজেও মঙ্গলবার বলেছেন, “বৃহস্পতিবার হুড়ার লালপুরে প্রশাসনিক জনসভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী আদ্রা থানার উদ্বোধন করবেন। বাম আমলে যে কাজ হয়নি, তা আমরা করে দেখালাম। এবং তা সম্ভব হল মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে।”
রেলশহর আদ্রাকে পুরোদস্তুর থানা হিসাবে গড়ে তোলার দাবি বাম আমল থেকেই ছিল। জেলার মধ্যে অপরাধের তালিকায় বরাবরই প্রথম সারিতে থাকা আদ্রায় পূর্ণাঙ্গ থানা চাইছিল জেলা পুলিশও। কারণ, সীমিত পরিকাঠামোয় আইনশৃঙ্খলা সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ছে। রাজ্যে পালাবদলের পরে আধ্রায় থানা হওয়ার প্রক্রিয়া কিছুটা গতি পায়। লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই জেলার তরফে প্রয়োজনীয় নথি এবং থানার সীমানা সংক্রান্ত মানচিত্র তৈরি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় স্বরাষ্ট্র দফতরে। প্রথম দিকে স্থির ছিল, আদ্রা এবং কাশীপুরের গগনাবাইদ ও বেকো, এই দু’টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে থানা হবে। কিন্তু, পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষস্তরে পর্যালোচনার পরে কমিটি গড়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কাশীপুরের দু’টি পঞ্চায়েতের পাশাপাশি প্রস্তাবিত থানা এলাকার মধ্যে নিয়ে আসা হবে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের আড়রা, চোরপাহাড়ি, শাঁকা, বাবুগ্রাম পঞ্চায়েতের সব এলাকা এবং রঘুনাথপুর শহরের নন্দুয়াড়ার যে অংশ পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে পড়ে, সেই এলাকাকে। অর্থাত্, আদ্রা থানার মধ্যে পড়বে রেল শহর আদ্রা-সহ কাশীপুর ও রঘুনাথপুর ১ ব্লকের মোট ছ’টি গ্রাম পঞ্চায়েত।
এই সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে এখন আদ্রার নতুন থানার ভবন তৈরির জন্য নতুন জায়গার খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ-প্রশাসন। পুলিশের একটি সূত্র অনুযায়ী জানা গেছে, আদ্রার অদূরে আদ্রা-রঘুনাথপুর রাস্তার পাশে স্বর্গদুয়ার সরোবর এলাকায় নতুন থানা নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি মিলেছে। রঘুনাথপুর থানা এলাকার বাঁকড়া মৌজায় ৯৬ ডেসিমিল সরকারি জমি চিহ্নিত করে ভূমিও ভূমি সংস্কার দফতরের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত প্রাথমিক আলোচনা সারা হয়েছে। জেলা পুলিশের মতে, এই জায়গায় থানা হলে যাতায়াতের দিক দিয়ে সুবিধা হবে। কিন্তু, শুধু জমি পেলেই হবে না, স্বরাষ্ট্র দফতরের বিজ্ঞপ্তি জারির পরে এখন নতুন থানা ভবন তৈরিতে চাই অর্থ। যার অনুমোদন দেবে অর্থ দফতর। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, “ভৌগলিক অবস্থান ও যাতায়াতের সুবিধার দিক দিয়ে বাঁকড়ার ওই জায়গাটি আদর্শ। তবে সেখানে নতুন থানা গড়া সম্ভব হবে অর্থ দফতরের অনুমোদনের পরেই। তাই বিজ্ঞপ্তি জারি হলেও আপাতত পুরানো জায়গাতেই থানা চলবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy