Advertisement
১৮ মে ২০২৪

চড়া রোদে প্রার্থীরা কেউ গাঁয়ে গাঁয়ে, কেউ আবার ঠান্ডা ঘরে

ঝাঁঝালো রোদ্দুর, সঙ্গে তপ্ত লু-র দাপট। নিমেষে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে নাকে জড়ানো ভিজে সপসপে রুমাল। রাজপথে চলতে চলতে প্রশ্বাস নেওয়া দায় হচ্ছে। নেহাত বাইরে কাজ না থাকলে এই পরিস্থিতিতে আপাতত ঘরবন্দি থাকতেই পছন্দ করছেন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার মানুষজন।

থাক না রোদ। প্রচারে বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত মণ্ডল। ছবি: শুভ্র মিত্র।

থাক না রোদ। প্রচারে বিষ্ণুপুরের বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত মণ্ডল। ছবি: শুভ্র মিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৩২
Share: Save:

ঝাঁঝালো রোদ্দুর, সঙ্গে তপ্ত লু-র দাপট। নিমেষে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে নাকে জড়ানো ভিজে সপসপে রুমাল। রাজপথে চলতে চলতে প্রশ্বাস নেওয়া দায় হচ্ছে। নেহাত বাইরে কাজ না থাকলে এই পরিস্থিতিতে আপাতত ঘরবন্দি থাকতেই পছন্দ করছেন বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার মানুষজন। তাই বেলা বাড়তেই শহরের অলিগলিও হয়ে পড়ছে ফাঁকা। তাই কিছু ভোটবাবুও গরমের ঠেলায় পড়ে বাধ্য হয়ে বদলে ফেলেছেন প্রচার কৌশল। কেউ কেউ অবশ্য প্রচণ্ড রোদ মাথায় নিয়েই ছুটছেন গ্রামে গ্রামে।

বিষ্ণুপুরের বিদায়ী সাংসদ তথা এই লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী সুস্মিতা বাউরি যেমন বুধবার (আবহাওয়া দফতরের হিসাবে এ দিন বাঁকুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে) কার্যত চষে ফেললেন এই কেন্দ্রের খণ্ডঘোষ এলাকা। মাঝখানে ঠান্ডা লেবু মালাই কিনে খেলেন এক বিক্রেতার কাছ থেকে। এক প্রচার সঙ্গী সতর্ক করতে বলেন, “দিদি, এ সব বেশি খাওয়া ঠিক নয়”। শুনে সুস্মিতাদেবীর জবাব, “আর পাছি না ভাই। গরমের ঠেলায় বাধ্য হয়েই বরফ গিলতে হচ্ছে।”

সুস্মিতাদেবী প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৫টায় ঘুম থেকে উঠে চা-বিস্কুট খেয়ে স্নান করছেন। তারপর মুখে সানসক্রিম মেখে ৭টার মধ্যে এ গাঁয়ে ও গাঁয়ে দৌড় লাগাচ্ছেন। দুপুর দু’টোর পর পেটে কিছু দিয়ে আবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রচার চালাচ্ছেন। বাড়িতে ঢুকে ফের স্নান। ঘেমো মুখে শাড়ির আঁচল দিয়ে হাওয়া করতে করতে সুস্মিতাদেবী বলেন, “গরমের ভয়ে থমকে গেলে গোটা কেন্দ্রে প্রচার শেষ করতে পারবো না। তবে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছি বলে খুব ভাল লাগছে।”

থমকে নেই সুস্মিতাদেবীর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী তথা বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ-ও। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে ডাব বোঝাই করে সারাদিন প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন ওই যুবক। তাঁর কথায়, “গরমে প্রচার বন্ধ করলে চলবে না। হাতে আর বেশি সময় নেই। কষ্ট এড়াতে গাড়ির ঠান্ডা আর ডাবের জলই আমার অস্ত্র।” অন্য দিকে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত মণ্ডলের ভরসা অবশ্য পরিমিত আহার ও গ্লুকোজ জল। এই গরমেও বুধবার তিনি বিষ্ণুপুর শহরের একাংশে গটগট করে হেঁটে রোড-শো করে ফেললেন।

বিষ্ণুপুরের প্রার্থীরা দিনরাত এক করে প্রচার চালিয়ে গেলেও বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের দুই হেভিওয়েট প্রতিদ্বন্দ্বী, সিপিএম প্রার্থী তথা টানা ন’বারের সাংসদ বাসুদেব আচারিয়া এবং তৃণমূলের প্রার্থী মুনমুন সেন কিন্তু দুপুরের দাবদাহ গায়ে লাগাতে নারাজ। প্রচারের জন্য দু’জনেই বেছে নিয়েছেন সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যা। দুপুরে বাসুদেববাবু বিশ্রাম নিচ্ছেন কর্মীদের বাড়িতে অথবা দলীয় কার্যালয়ে। মুনমুন থাকছেন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হোটেলের ঘরে।

বাসুদেববাবুর কথায়, “যেমন প্রচণ্ড গরম, তেমন চড়া রোদ দুপুরে প্রচার চালানো সম্ভব নয়। তাই এই সময়টা জিরিয়ে নিচ্ছি।” তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “ভরা গরমে দুপুরে নির্বাচনী সভা বা মিছিল করাটা প্রার্থী-কর্মী কারও পক্ষেই ভাল নয়। দুপুরে ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে ফের সভা করা হচ্ছে।” যদিও প্রথমবার ভোট যুদ্ধে নেমে গরমকে তোয়াক্কা করতে নারাজ বাঁকুড়া কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার। ভোটের বাজারে একের পর এক চমক দিয়ে প্রতিপক্ষকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তিনি কারও চেয়ে কম নন। রোদ মাথায় নিয়েই তিনি ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন। তাঁদের কাছ থেকে জল চেয়ে পান করে বলছেন, “আমি আপনাদেরই লোক।” বুধবার ভরদুপুরে হুড খোলা গাড়িতে চড়ে তিনি রোড শো করলেন রানিবাঁধ ব্লকের কুমোরপাড়া, তাঁতিপাড়া, বীরখামের মতো গ্রামে। প্রার্থীর ভোটের দায় থাকতে পারে, গাড়ির চাকার তো নয়। দুপুর ১টায় হঠাত্‌ সুভাষবাবুর গাড়ির চাকা লিক হয়ে গেল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অন্য গাড়িতে চড়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরলেন। এই গরমে ঘুরছেন কী করে? সুভাষবাবু বলেন, “ভিজে তোয়ালে আর টুপিই আমার ভরসা। ভোটারদের বাড়িতে গিয়ে জল চাইছি। সকলেই খুশি হয়ে আমাকে জল দিচ্ছেন।” জল দেওয়ার মতো সবাই ভোটও দেবেন এই আশা নিয়েই রোজ বাড়ি ফিরছেন তিনি।

এ দিন পুরুলিয়ায় তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ ডিগ্রিতে। কিন্তু আর ১৩ দিন পরেই ভোট। তাই রোদ মাথায় নিয়ে প্রার্থীরা ছুটে বেড়ালেন জেলার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। পুরুলিয়া কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী নেপাল মাহাতো বলেন, “ভোট তো গরমেই হয়। গরমের কথা ভেবে বসে থাকলে কি আর চলে?” এ দিন তিনি প্রচার সেরেছেন জয়পুর ব্লকের সিধি-রোপো গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। কিন্তু প্রার্থী বেরোলে কি হবে, রাস্তায় লোকজন তো কম। নেপালবাবু বলছেন, “দুপুরে লোকজনকে তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অনেক রাত পর্যন্ত প্রচার করছি। মঙ্গলবারই ঝালদা ২ ব্লকের পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা চিতমু থেকে প্রচার সেরে বাড়ি ফিরেছি মাঝরাতে।”

তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতো এ দিন প্রচারে যান পুঞ্চার পায়রাচালি, জামবাদ, মাঠাডি, কুড়ুকতোপা, মাঠা এলাকায়। সঙ্গে ছিলেন দলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো ও কার্যকরী সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো। সুজয়বাবু বলেন, “গরমের জন্য অনেক সকালেই প্রচার শুরু করেছিলাম। দুপুরে প্রার্থীর মামাবাড়ির গ্রামে কর্মীদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া হল। ভাত, করলাভাজা, লাউয়ের তরকারি, আলুপোস্ত, মুরগির মাংস খাওয়া হল।” তিনি জানান, দুপুরে তাঁরা গাছতলায় বৈঠক করছেন। রোদ পড়লে বিকেলে মিছিল করা হচ্ছে।

ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী নরহরি মাহাতো এ দিন খুব সকালে পুরুলিয়া শহরের কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রচারে বেরিছেিলেন। তাঁর কথায়, “বেলা হলেই রোদ চড়ে যাচ্ছে। দুপুরে তাই প্রচার রাখছি না। কোনও দলীয় অফিসে বসে দুপুরটা কাটিয়ে দিচ্ছি। কর্মীদের সঙ্গে নানা কথাও হচ্ছে।” বিজেপি-র বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন সকাল থেকে মানবাজারের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দুপুরে তিনি ভালুবাসা গ্রামে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন। তাঁর কথায়, “দুপুরে তো কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। কার কাছে ভোট চাইব? এক কর্মীর বাড়িতে ভাত, আলু সেদ্ধ, ডিমের ডালনা খেয়ে একটু বিশ্রাম নিলাম।” বিকেলে পাড়া, দুবড়া এলাকায় মিছিল করেন তিনি। ঝাড়খণ্ড বিকাশ মোর্চার প্রার্থী অজিত মাহাতো বলেন, “আমি এ দিন রঘুনাথপুর ২ ব্লকের বরাগড়িয়া গ্রামে প্রচার ও দুপুরে কর্মিসভা সেরেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

loksabha election campaign
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE