Advertisement
E-Paper

ঝালদায় ফের অনাস্থা, অস্বস্তিতে তৃণমূল

ফের ডামাডোল ঝালদা পুরসভায়। পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মহকুমাশাসককে অনাস্থার চিঠি দিলেন ঝালদা পুরসভার ছয় কাউন্সিলর। সোমবার তাঁরা ওই চিঠি পুরুলিয়ার মহকুমাশাসকের (পশ্চিম) কাছে জমা দিয়েছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০১:৫৪

ফের ডামাডোল ঝালদা পুরসভায়।

পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মহকুমাশাসককে অনাস্থার চিঠি দিলেন ঝালদা পুরসভার ছয় কাউন্সিলর। সোমবার তাঁরা ওই চিঠি পুরুলিয়ার মহকুমাশাসকের (পশ্চিম) কাছে জমা দিয়েছেন। ঝালদার বর্তমান তৃণমূল পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থার এই চিঠিতে সই করেছেন দুই তৃণমূল কাউন্সিলরও। এ ছাড়া দুই নির্দল, এক সিপিএম এবং এক বাম-সমর্থিত নির্দল কাউন্সিলরের সই আছে।

লোকসভা ভোটে ঝালদায় পুর-এলাকায় তৃণমূল ভাল ফল করার পরেও দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হওয়ায় এবং সিপিএমের সঙ্গে যোগ দিয়ে অনাস্থার চিঠিতে দলীয় কাউন্সিলরদের সই থাকায় অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা তৃণমূলের নেতারা। মোট ১২ আসনের ঝালদা পুরসভায় বর্তমানে তৃণমূলের ৩, সিপিএমের ৩, ফব ২, কংগ্রেস ১, নির্দল ২ এবং বাম-সমর্থিত এক নির্দল কাউন্সিলর রয়েছেন। ২০১০ সালের পুর-নিবার্চনে সিপিএম ৩টি, ফব ২টি, বাম-সমর্থিত নির্দল ১টি, কংগ্রেসের ৩টি এবং নির্দলদের ৩টি আসন ছিল। বোর্ড গড়ে বামফ্রন্ট। পুরপ্রধান হন সিপিএমের পঙ্কজ মণ্ডল। বছর দেড়েকের মধ্যেই বাম বিরোধী সদস্যদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে পঙ্কজবাবুকে পদত্যাগ করতে হয়। পুরপ্রধান হন কংগ্রেসের প্রদীপ কর্মকার। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে এবং গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় তৃণমূলের বিপুল সাফল্যের পরে প্রদীপবাবু-সহ কংগ্রেসের তিন কাউন্সিলর চলতি জানুয়ারিতে কলকাতায় তৃণমূল ভবনে গিয়ে শাসকদলে যোগ দেন। তাঁদের মধ্যে প্রথমে নির্দল হয়ে জেতা ও পরে কংগ্রেসে আসা কাউন্সিলর মায়ারানি চন্দ্রও ছিলেন।

ঝালদার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর সুরেশ অগ্রবাল বলেন, “আমরা সোমবার প্রশাসনকে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থার চিঠি দিয়েছি।” তাঁর অভিযোগ, প্রদীপবাবু পুরসভার অন্য প্রতিনিধিদের অন্ধকারে রেখে পুরসভা চালাচ্ছেন। কোনও কিছু জানতে চাইলে জানানো হচ্ছে না। তা ছাড়া, পুরপ্রধান কেবল নিজের ওয়ার্ডেই কাজ করাচ্ছেন। সোমবার পুরবোর্ডের বৈঠকেও নানা প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। “বেশ কিছুদিন ধরে এই অবস্থা চলায় আমরা অনাস্থার চিঠি দিয়েছি।”দাবি সুরেশবাবুর।

কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনোজ সাউ বলেন, “ঝালদার উন্নয়নে গতি আনতে পারব ভেবে আমরা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু, পুরসভা চালাতে গিয়ে দেখলাম পুরপ্রধান একাই কাজ চালাচ্ছেন। আমাদের কারও মতামত শুনতে রাজি নন।” একই অভিযোগ করেছেন অনাস্থার চিঠিতে স্বাক্ষর করা প্রাক্তন পুরপ্রধান পঙ্কজ মণ্ডলও। তাঁর দাবি, “প্রদীপবাবু কারও মতামতকে মান্যতা না দিয়েই পুরসভা চালাচ্ছেন। পুরসভার অন্দরে থেকে এই বিষয়টি উপলব্ধি করেছি বলেই আমি এই চিঠিতে সই করেছি।”

পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার অবশ্য বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উঠছে, তার কোনও ভিত্তিই নেই! আমি সকলকে নিয়েই কাজ করছি। এটা ঝালদার মানুষ জানেন।” অনাস্থার চিঠিতে দলেরই দুই কাউন্সিলরের সই প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “ওঁরা দলের জন্য কতটা দায়বদ্ধ, সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমি গোটা বিষয়টিই জেলা নেতৃত্বকে জানিয়েছি।” জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “আমি সবে ঘটনাটি শুনলাম। কেন এমন হল, খোঁজ নিয়ে দেখছি।”

ঝালদা পুরসভার এগ্‌জিকিউটিভ অফিসার তাপস গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমি বাইরে রয়েছি। ফলে, অনাস্থার চিঠি সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না।” তবে, মহকুমাশাসক (পশ্চিম) নিমাইচাঁদ হালদার জানান, তিনি অনাস্থার চিঠি পেয়েছেন। বিধি মোতোবেক চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পুরপ্রধান আস্থা প্রমাণের জন্য সভা ডাকবেন। তিনি না ডাকলে উপ-পুরপ্রধান ওই সভা ডাকবেন। যদিও ঝালদায় ওই পদে কেউ নেই। সেক্ষেত্রে পুরপ্রধান সভা না ডাকলে অন্য তিন জন কাউন্সিলর সভা ডাকবেন। এক জন সরকারি প্রতিনিধির উপস্থিতিতে সভা হবে।

ঝালদা পুরসভায় বারবার এই ডামাডোলে ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। সুরজিত্‌ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দলবদল ও অনাস্থা এই পুরসভায় নতুন নয়। কিন্তু, পুর-প্রতিনিধিদের হাতেই তো ঝালদার উন্নয়নের দায়ভার রয়েছে। ঝালদার দিকে তাকালে মনে হয় না, তাঁরা তাঁদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন!”

tmc jhalda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy