Advertisement
১৮ মে ২০২৪
দাবিতে অনড় বিষ্ণুপুরের কারখানা কর্তৃপক্ষ

ত্রিপাক্ষিক বৈঠকেও রফাসূত্র অধরা

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও ওড়িশা থেকে কাঁচামাল না মেলার কারণেই কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে দাবি করলেন বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলের ফেরো অ্যালয় কারখানা কতৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে শ্রম দফতরের ডাকা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে হাজির হয়ে সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট এন এস রাজু জানান, লোকসানে চলা কারখানা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল।

তালা খুলবে কবে, অপেক্ষায় রুজিহীন শ্রমিকেরা।—নিজস্ব চিত্র।

তালা খুলবে কবে, অপেক্ষায় রুজিহীন শ্রমিকেরা।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বিষ্ণুপুর ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৫৭
Share: Save:

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও ওড়িশা থেকে কাঁচামাল না মেলার কারণেই কারখানা বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে দাবি করলেন বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা শিল্পাঞ্চলের ফেরো অ্যালয় কারখানা কতৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরে শ্রম দফতরের ডাকা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে হাজির হয়ে সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট এন এস রাজু জানান, লোকসানে চলা কারখানা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছিল। তাই এই লক-আউটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ দিন ওই বৈঠকেও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি।

২০০০ সালে অন্ধ্রপ্রদেশের এক শিল্পগোষ্ঠী বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থানার দ্বারিকা গ্রামে দ্বারিকা ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টারে ‘শ্রী বাসবী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ নামে এই ফেরো অ্যালয় কারখানাটি তৈরি করেছিল। সোমবার রাতে ডিউটিতে আসা কর্মীদের বের করে দিয়ে গেটে তালা মেরে ‘লক-আউট’ নোটিস ঝুলিয়ে দেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। এক ধাক্কায় কাজ হারান অন্তত ৮০০ শ্রমিক। কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে একযোগে পথে নামে তৃণমূল, সিপিএম এবং বিজেপি। শ্রমিক-কর্মীদের নিয়মনীতি মেনে কাজ করতে না চাওয়ার মানসিকতা ও কাঁচামালের জোগানে টানকেই এমন সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকেরা যদিও নিয়ম না মানার কথা অস্বীকার করেছিলেন।

সংস্থার ভাইস-প্রেসিডেন্ট এন এস রাজু বিষ্ণুপুরে থেকে কারখানার কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন। ‘লক-আউট’ ঘোষণার পরে কর্মীরা দাবি করেছিলেন, বেশ কিছুদিন হল তাঁকে কারখানায় বা বিষ্ণুপুরে দেখা যাচ্ছিল না। কারখানা বন্ধের পরে শ্রমিকেরা অভিযোগ করেছিলেন, একটা বড় কারখানা এ ভাবে হঠাত্‌ বন্ধ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় প্রশাসন তেমন গা করছে না। বিষ্ণুপুর মহকুমা প্রশাসনের কর্তারা গোড়ায় দাবি করেন, এটা কারখানার অভ্যন্তরীণ সমস্যা। পরে অবশ্য জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, সমস্যা মেটাতে শ্রমি কমিশনারের অফিসে বৈঠক ডাকা হয়েছে।

সেই মতো বৃহস্পতিবার দুর্গাপুরের ডেপুটি লেবার কমিশনারের দফতরে বৈঠকের আয়োজন হয়। কারখানা বন্ধের পরে দেখা না মিললেও এ দিন বৈঠকে হাজির হন এন এস রাজু। ত্রিপাক্ষিক এই বৈঠকে ছিলেন আইএটিটিইউসির জেলা সভাপতি তথা শালতোড়ার বিধায়ক স্বপন বাউরি, সিপিএমের সিটুর জেলা কমিটির সদস্য পরেশ মানিক ও বিজেপির ভারতীয় জনতা মজদুর মোর্চার বিষ্ণুপুর জেলা সাংগঠনিক সভাপতি অঞ্জন নাগচৌধুরী। প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বৈঠক চলে। কারখানা কর্তৃপক্ষকে তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে টলানো যায়নি বলে জানা গিয়েছে।

বৈঠকে হাজির শ্রমিক নেতারা দাবি করেন, ৮০০ মানুষের রুজিরুটি কেড়ে নিতে কারখানা কর্তৃপক্ষের বক্তব্যগুলি কোনও বড় কারণ হতে পারে না। ওই এলাকায় একই রকম বিদ্যুতের বিল দিয়ে কয়েকটি কারখানা চলছে। কাঁচামালও ঢুকছে। এর মধ্যে ইচ্ছে করে কারখানা গুটিয়ে পালানোর চেষ্টা রয়েছে বলেই তাঁরা মনে করছেন, জানান শ্রমিক নেতারা। তাঁরা বলেন, “সেটা হতে দেওয়া হবে না। আমরা কারখানা খোলার দাবিতে আন্দোলন করছি।” বিধায়ক স্বপনবাবু বলেন, “শুধু কারখানা চালু নয়, বকেয়া মেটানোর দাবিও জানানো হয়েছে বৈঠকে।”

সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট এন এস রাজু অবশ্য বৈঠক থেকে বেরিয়ে দাবি করেন, তাঁদের সমস্যার কথা তিনি বৈঠকে পরিষ্কার করে জানিয়েছেন। দু’মাসের বিদ্যুতের বিল প্রায় ১০ কোটি টাকা বাকি পড়ে রয়েছে। কাঁচামাল মিলছে না। প্রতিদিন প্রচুর টাকা লোকসান হচ্ছে। এই অবস্থায় কারখানা চালানো সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “বৈঠকে যা আলোচনা হল, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। বিষয়টি মিটতে সময় লাগবে।” শুক্রবারের বৈঠকে থাকবেন কি না, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে এখনই কিছু বলতে পারছি না।”

বৈঠক থেকে বেরিয়ে বিষ্ণুপুরের অ্যাসিস্ট্যান্ট লেবার কমিশনার সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানান, আজ, শুক্রবার বিষ্ণুপুরে মহকুমাশাসকের দফতরে ফের বৈঠক হবে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সে ব্যাপারে চিঠি ধরানো হয়েছে। ডাকা হয়েছে তিন দলের শ্রমিক সংগঠনকেও। সুভাষবাবু বলেন, “এ ভাবেই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।” দুর্গাপুরের ডেপুটি লেবার কমিশনার পার্থপ্রতিম চক্রবর্তীও বলেন, “ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হল। সমস্যা মেটাতে ফের আলোচনা হবে।”

কারখানা গেটের সামনে এ দিনও অবস্থান-বিক্ষোভ চালিয়ে যান কর্মীরা। কর্মীদের আন্দোলনের সমর্থনে এ দিন বক্তব্য রাখেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র। তিনি জানান, “দশ বছর ভর্তুকি নিয়ে কারখানা প্রচুর মুনাফা করেছে। এই সব সংস্থার এখন বিদ্যুতের বিলের বাহানা দিয়ে চলে যাওয়া আমরা মেনে নেব না। সংস্থাকে আটকাতে শিল্পমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করছি আমরা।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bishnupur factory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE